বিপিএলে তাদের অন্য মিশন
তারা তিনজনই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে শেষ বিশ্বকাপে খেলেছেন। খুব আহামরি কোন পারফরমেন্স করেছেন তাও কিন্তু নয়। আগে তাদের সেই ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ পারফরমেন্সের দিকে এক নজর।
এনামুল হক বিজয়। ডানহাতি ব্যাটসম্যান, ওপেনার। গেলবারের বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে আফগানিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে করলেন ২৯ করে রান। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়লেন। কলার বোন ভেঙ্গে যাওয়ায় ব্যাট করতে নামতেই পারলেন না। তার বিশ্বকাপ ওতেই শেষ। মাঝপথেই দেশে ফিরলেন।
সাব্বির রহমান। ডানহাতি, লেট মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে খেলেন ৬টি ম্যাচ। সবমিলিয়ে রান করেন ১৮২। ম্যাচ প্রতি রানগড় ৩৬.৪। একটি হাফসেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ রান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মেলবোর্নে ৫৩। পারফরমেন্স পরিসংখ্যানের হিসেবে মন্দ নয়!
নাসির হোসেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যান। মুলত সাত-আট নম্বরে ব্যাট করেন। গেল বিশ্বকাপে মাত্র তিন ম্যাচে একাদশে খেলার সুযোগ হয় তার। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি। তার আগেই তামিম ইকবালের বিশাল সেঞ্চুরিতে জয় পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে খেলেন। রান যথাক্রমে ১১ ও ৩৫। মনে রাখার মতো কোন বিশ্বকাপ পারফরমেন্স নেই তার।
বিশ্বকাপ শেষে সাব্বির রহমান বাদে নাসির হোসেন ও এনামুল হক বিজয় মনে রাখার মতো আর তেমন কিছু করতেও পারেননি। আর তাই জাতীয় দল থেকে লম্বা সময়ের জন্য বাদ পড়েন তারা। সাব্বির রহমান ব্যাট হাতে কদাচিৎ ভাল কিছু করলেও মাঠের বাইরের বিতর্কে এতো বেশি জড়ালেন যে সহানুভূতির নজর থেকেও বিচ্যুত! এই সময়টায় মাঠের বাইরের হরেক রকম অসামাজিক র্কীতি কলাপ নিয়েই বেশি শিরোনামে থাকেন দুই ‘কীর্তিমান’; নাসির হোসেন ও সাব্বির রহমান!
ফল-; ২৯ নভেম্বর ২০১৬ সাল থেকে ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮। এই দুবছরের মধ্যে সাব্বির রহমান মাঠের বাইরের বিভিন্ন অসদাচারনের জন্য ৩৩ লাখ টাকা জরিমানা গুনেন। দু’বার ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হন। প্রথমবার ছয়মাস ঘরোয়া ক্রিকেটে। দ্বিতীয়বার ছয়মাসের জন্য আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে। শেষের সেই নিষেধাজ্ঞা সাব্বিরের এখনো চলছে। শেষ হবে চলতি বছরের ফেব্রয়ারির শেষদিনে।
সন্মান ও সামাজিকতায় হানি হতে পারে এমনসব কেলেঙ্কারির অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে নাসির হোসেনের নাম। বিসিবি তাকে ডেকে নিয়ে সতর্কও করে দেয়। এমনিতেই পারফরমেন্স নেই, তারওপর লম্বা সময়ের জন্য ইনজুরিতেও পড়ে ক্রিকেট থেকেও যেন হারিয়ে গেলেন নাসির। ব্যাট হাতে তার যা পারফরমেন্স তাতে জাতীয় দলে খুব দ্রত তার জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে শূন্যের কোটায়।
একটা উদাহরণ দেই। ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি-এই সময়কালের মধ্যে খেলা ৪০টি ওয়ানডে ইনিংসে তার কোন হাফসেঞ্চুরি নেই! এই ইনিংস গুলোর মধ্যে দশটিতে অবশ্য ব্যাট করার সুযোগই পাননি নাসির। তবে বাকি যে ৩০টি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন তাতে দলে জায়গা ধরে রাখার মতো যে কিছুই দেখাতে পারেননি।
নাসির ক্রিকেটীয় পারফরমেন্সে জিরো থাকলেও ফেসবুকে কেলেঙ্কারির তালিকার একেবারে টপ লিস্টে ছিল তার নাম!
এনামুল হক বিজয়ের অবশ্য অ-ক্রিকেটীয় কোন সমস্যা নেই। তার এক এবং একমাত্র সমস্যার নাম পারফরমেন্স করতে না পারা। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলে ফিরলেন তিন বছর পর, গেল জানুয়ারিতে। বছরে সবমিলিয়ে ৭টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পান। কোন হাফসেঞ্চুরি পর্যন্ত নেই। সর্বোচ্চ রান ৩৫। তিনবার সিঙ্গেল ডিজিটে আউট। যার মধ্যে দুবার আবার শূন্য! নিজের ব্যাটিং কিভাবে সাজাতে চান, সেই দ্বিধাদ্বদ্বই আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে এনামুলের আরেকটি বছর শেষ!
আরেকটি বিশ্বকাপ চলে আসছে। জুনে শুরু ইংল্যান্ডে ওয়ানডে ক্রিকেটের বিশ্বকাপ। গেল বিশ্বকাপের দলে এই ত্রয়ী ছিলেন। এবার থাকবেন কি? আশা কতদুর? সম্ভাবনার মাত্রাই বা কেমন? সমস্যা হলো নিজেদের আরেকটি বিশ্বকাপের জন্য যোগ্য প্রমানের এই ত্রয়ী ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার সুযোগ তেমন পাচ্ছেন না। যা পাচ্ছেন তার নাম বিপিএল। টি-টুয়েন্টির এই ফরমেটই এখন এই তিনজনের বিশ্বকাপ স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার অক্সিজেন!
মঙ্গলবার বিসিবির ক্রিকেট একাডেমির মাঠে বিপিএলে নিজ দলের অনুশীলন শেষে তিনজনই এই প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন তা ঠিক এমন।
এনামুল হক বিজয়:
-‘আমি গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দলে ফিরলাম এবং ম্যাচ গুলোতে ভাল করতে পারলাম না। তখন থেকেই প্রতিটি ম্যাচই আসলে আমার কাছে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। এনসিএল বলেন। বিসিএল বলেন, বিপিএলের প্রতিটি ম্যাচ এবং বিপিএলের পরে যদি কোন ওয়ানডে ম্যাচ খেলি বা অন্য যে কোনো ম্যাচই আমার জন্য ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি। আমি সবসময় তৈরি থাকার চেষ্টা করবো। জানি এখন প্রতিটি ম্যাচ আমার নিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি অবশ্যই ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলতে চাই। এই স্বপ্ন আমি সবসময়ে দেখি। আমার মনে প্রাণে আছে, আমার প্রতিটি চেষ্টাতে, প্রতিটি নেট বা জিম সেশনে আমি চিন্তা করি যে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে খেলবো। এর জন্য যতোটা প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন এবং যতটুকু পারফর্ম করা দরকার, আমি চেষ্টা করবো করার।’
সাব্বির রহমান:
-‘বিশ্বকাপ অনেক দুরে আছে এখনও। আপাতত বিপিএল নিয়ে চিন্তা করছি। বিপিএলে যদি ভাল পারফর্ম করতে পারি তাহলে জাতীয় দলে হারানো জায়গা ফেরত পাওয়ার একটা সুযোগ থাকবে আমার। আমি চেষ্টা করবো বিপিএলে ভাল কিছু করার। তারপর বিশ্বকাপে সুযোগ।’
নাসির হোসেন:
-‘ বিশ্বকাপ অনেক বড় স্টেজ। সবাই বিশ্বকাপে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকে। আমি জাতীয় দলে নেই অনেকদিন হলো। বিপিএলে ভাল পারফর্ম করতে হবে। তাহলেই সুযোগটা সামনে আসবে।’