শুরুতেই যে ‘শেষ’ সিলেটের ইনিংস
ক্রিকেটে একটা কথা প্রায়স বলা হয়ে থাকে; শেষ বল না হওয়া পর্যন্ত ম্যাচের ভবিষৎ বলার উপায় নেই! বেশিরভাগ সময়ে কথাটা ফলে যায়। তবে বিপিএলে মঙ্গলবার রাতের ম্যাচটায় স্বাগতিক সিলেটের ডাগআউট শুরুতেই জেনে গেল এই ম্যাচের ‘ভবিতব্যের’ কথা! ৬৮ রানে অলআউট দল। এই সঞ্চয় নিয়ে বোলিংয়ে নামার সময়টাও কম যন্ত্রনার নয়।
এই ম্যাচের শুরুতেই যে শেষ সিলেট!
কিভাবে?
এই ম্যাচের সেই গল্পের শুরুর প্রথম ওভার থেকেই। সাইফুদ্দিন আহমেদের করা ম্যাচের প্রথম ওভার থেকে সিলেটের দুই ওপেনার কোন রানই নিতে পারেননি। মেডেন ওভার।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে স্পিনার মেহেদি হাসানকে বাউন্ডারি হাঁকালেন আন্দ্রে ফ্লেচার। স্বাগতিক সিলেটের গ্যালারিতে হাততালির ঝড় উঠলো। কিন্তু পরের বলেই যে শুধু হাততালি নয়, সিলেটের ইনিংস যে শ্বাস নিতেই ভুলে গেল! মেহেদির অফস্পিন অফস্ট্যাম্পের বাইরে পড়ে টার্ন নিলো। ফ্লেচারের প্যাডের ফাঁক গলে বল স্ট্যাম্পে, বোল্ড!
৪ রানে প্রথম উইকেটের পতন।
নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে নামলেন লিটন দাস। গোড়ালির ওপর পড়া ফুলার লেন্থের বল লং অনে পাঠিয়ে ১ রান নিলেন। ওভারের চতুর্থ বলে ডেভিড ওয়ার্নার বোল্ড! ৭ বল খেলা ওয়ার্নার ফিরলেন ০ রানে। ভুল লাইনে পা বাড়িয়ে উইকেট খোয়ালেন ওয়ার্নার।
ভাবছেন মেহেদির শিকার করা শেষ!
আপনার ভাবনায় বড় ভুল! ওভারের পঞ্চম বলে আফিফ হোসেনকে এলবিডবর শিকার বানালেন মেহেদি। টার্নের আশায় পা সামনে বাড়িয়ে খেলেছিলেন আফিফ। কিন্তু এই বলে কোন টার্ন রাখলেন না মেহেদি। সোজা রাখলেন। আপিল উঠলো। আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে জানালেন-আউট!
নিকোলাস পুরান উইকেটে এলেন। মেহেদির হ্যাটট্রিক হচ্ছে কিনা, সেই আশায় কুমিল্লা। ক্লোজ ফিল্ডিং আরেকটু আক্রমণাত্মক হলো। হ্যাটট্রিকের গল্পটা আর হলো না। ব্যাটে কোন মতো বল লাগিয়ে নিকোলাস পুরান হ্যাটট্রিকটা বাঁচালেন।
কিন্তু ম্যাচে বাকি আর কিছুই যে বাঁচাতে পারলো না সিলেট!
নিজের প্রথম ওভার শেষে মেহেদি হাসানের ফিগার দাড়ালো ১-০-৫-৩! চার বলের মধ্যেই তিন উইকেট শিকার! সিলেটের স্কোরবোর্ডের চেহারায় তখনো ধংসযজ্ঞের রূপ! ৫ রানে নেই ৩ উইকেট।
ম্যাচের তৃতীয় ওভারে এবার সাইফুদ্দিন ‘খেল’ দেখালেন। মাঝউইকেটে থাকা সবুজ কিছু ঘাসের ওপর বল ফেলে ব্যাটসম্যানদের অস্থির করে রাখেন। ওভারের শেষ বলে নিকোলাস পুরান পুরোপুরি পরাস্ত। পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে বল তার প্যাডে লাগে। আপিল হলো। আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল সাড়া দিলেন। নিকোলাস পুরানও জানতেন তিনি আউট। ব্যাট বগলে চেপে ডাগআউটের দিকে হাঁটা শুরু করলেন।
স্কোর তখন ৮ রানে ৪ উইকেট!
চার নম্বর ওভারটা স্বস্তিতে কাটালো সিলেট। কোন উইকেট পড়লো না। ওয়াহাব রিয়াজের সেই ওভারে রান উঠলো ৭। সাব্বির রহমান বাউন্ডারি হাঁকালেন। তবে পরের ওভারেই সেই স্বস্তি উধাও!
লিয়াম ডাউসন বল হাতে নিয়েই সাফল্য দেখালেন। নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে লিটন দাসকে বিদায় করলেন। শর্ট কাভারে ওয়াহাব রিয়াজ তার ক্যাচটা নিলেন। তবে সেই ক্যাচটি ঠিক হলো কিনা সেটা জানতে টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সময় টেনশনে কাটাতে হলো লিটন দাসকে। আম্পায়ার বারকয়েক দেখে জানালেন-ওটা ঠিক ক্যাচ। লিটন দাস আউট।
সিলেটের স্কোর ১৫ রানে ৫ উইকেট। ওভার শেষ মাত্র ৫। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভার শেষ হলো বাড়তি কোন ক্ষতি ছাড়া। কিন্তু সপ্তম ওভারের শুরুতেই ফের উইকেট শিকারের আনন্দে মাতলেন লিয়াম ডাউসন। সাব্বির রহমান এলবি।
নামতার ভঙ্গিতে যেন ধারাবাহিকভাবে উইকেট পড়লো। ১৬ রানে নেই শুরুর ৬ উইকেট! যথারীতি এই ছ’য়ের সবাই সিঙ্গেল ডিজিটে আউট। তিনজন আবার রানের খাতাই খুলতে পারেননি!
নিজের সফল প্রথম ওভার করার পর দ্বিতীয় ওভার করতে এলেন মেহেদি হাসান ইনিংসের ৮ নম্বর ওভারে। এবারো সাফল্য। সোহেল তানভীরকে ফেরালেন ৫ রানে। সিলেটের সঞ্চয় তখন ২২ রানে ৭ উইকেট। ম্যাচে মেহেদির পারফরমেন্স ৪ ওভারে ২২ রানে ৪ উইকেট। ডটবল ১৫!
বিপিএলে সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে পড়ার শঙ্কার মুখে তখন সিলেটের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠলো সিলেট অস্টম উইকেটে; অলক কাপালি ও তাসকিনের জুটিতে।
৭.৪ ওভারে ২২ রানে ৭ উইকেট হারানো সিলেটের ইনিংস যে শেষ পর্যন্ত ১৪.৫ ওভার পর্যন্ত আয়ু পেল তার পুরো কৃতিত্ব অলক কাপালির। দলের ৬৮ রানের মধ্যে অলকের যোগাড় অপরাজিত ৩৩ রান। দলের বাকিরা করলেন মাত্র ৩০। ৫ রান এলো অতিরিক্ত খাত থেকে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: সিলেট সিক্সার্স: ৬৮/১০ (১৪.৫ ওভারে, ওয়ার্নার ০, ফ্লেচার ৪, লিটন ৬, আফিফ ০, পুরান ০, সাব্বির ৬, অলক ৩৩*, সোহেল তানভীর ৫, তাসকিন ৪, নাবিল ০, আল আমিন ৫, অতিরিক্ত ৫, সাইফুদ্দিন ১/১৮, মেহেদি ৪/২২, ওয়াহাব ৩/১৫, ডাউসন ২/৪)।