প্রথম ইনিংস নিয়েই মাহমুদউল্লাহর আফসোস
প্রথম ইনিংসে ২৩৪ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২৯। শুধু সংখ্যা তো বটেই, ব্যাটিং পরিকল্পনা ও চিন্তা চেতনা, লড়াইয়ের তেজ-সবকিছুতেই হ্যামিল্টন টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস অনেক এগিয়ে। ম্যাচের প্রথম ইনিংসের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে থেকেও গুটিয়ে পড়ে ২৩৪ রানে। ১২৮ বলে ১২৬ রান করা তামিম ইকবাল ছাড়া দলের বাকি ব্যাটসম্যানরা কেউ যে বলার মতো স্কোরই করতে পারলেন না। ইনিংস ও ৫২ রানের বড় ব্যবধানে হারা হ্যামিল্টন টেস্টে ব্যর্থতার কারণ ব্যাখায় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আফসোস একটাই-প্রথম ইনিংস! আহা যদি প্রথম ইনিংসটা আরেকটু বড় হতো? যদি তামিম ইকবালের সঙ্গে আরো কয়েকজন বড় কিছু করতো? যদি প্রথম ইনিংসটা ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসের মতো খেলতো বাংলাদেশ?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছ থেকেই শুনি সেই ব্যাখা-‘ভুল যা করার সেটা আমরা করে এসেছি প্রথম ইনিংসে। ঐ ইনিংসে যদি আরো এক-দুজন যদি বড় স্কোর করতে পারতো তাহলে এই ম্যাচের গল্পটা হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। এই ম্যাচ তো আমরা হেরে গেছি। তবে এখান থেকে ব্যাটসম্যানদের জন্য দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ভালকিছু নিয়ে যেতে পারছি। তাামিম ইকবালও চমৎকার ব্যাটিং করেছে এই টেস্টের উভয় ইনিংসে।’
৪ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে চতুর্থদিনের সকাল শুরুর সময় কে ভেবেছিলো বাংলাদেশ এমন কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে? ম্যাচের মেজাজ এদিন বদলে দিলো সৌম্য সরকারের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। ৬০ বলে হাফসেঞ্চুরি করার পর ব্যাট হাতে হঠাৎ টি-টুয়েন্টি মেজাজে নামলেন সৌম্য। রেকর্ড ৯৪ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন। সৌম্যের সেঞ্চুরি প্রসঙ্গে ম্যাচ শেষে মাহমুদউল্লাহ বলছিলেন-‘ চতুর্থদিনের শুরু সময়টায় ব্যাটিংয়ে সৌম্যর ভূমিকাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। সে খুব স্বাচ্ছন্দে ব্যাটিং করছিলো। সামনে আসা সুযোগ গুলো নিচ্ছিলো। ঐ সময় নিউজিল্যান্ডের বোলাররাও ভাল বোলিং করছিলো। বাউন্সার মারছিলো। সৌম্যও তখন প্রায় ওভারে বাউন্ডারি পাচ্ছিলো। বোলিং ভাল হচ্ছে আবার ব্যাটসম্যান রানও ঠিকই তুলে নিচ্ছে, ওভারে চার পাঁচ করে রান আসছে-এমন পরিস্থিতিতে বোলাররা সাধারণত একটু হতাশ হয়ে যায়। সৌম্যর ব্যাটিং ঠিক সেই কাজই হচ্ছিলো। সৌম্য অসাধারণ ব্যাট করেছে।’
অধিনায়ক নিজেও তো অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন দ্বিতীয় ইনিংসে। কাঁধের ওপর বিশাল রানের বোঝা নিয়ে যে কায়দায় ১৪৬ রানের ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেটা দলের বাকিদের জন্য বড় উদাহরণ।
এই উইকেটে, এই কন্ডিশনে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের যে সহজেই খেলে দেয়া যায় তারই প্রমান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ার সেরা চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি। নিজের ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে অধিনায়ক জানান-‘তৃতীয়দিন যখন ব্যাটিং করতে নামি, তখনই পরিকল্পনা করে নিয়েছিলাম সহজে উইকেট দিবো না। তখন চতুর্থদিনে কি হয় সেটা নিয়ে বেশি ভাবিনি। ভাবনায় ছিলো শুধু তৃতীয়দিনের খেলা। ঐদিনের বাকি সময়টা কোন ক্ষতি ছাড়া যেন কাটাতে পারি সেই চিন্তা নিয়েই ব্যাটিং করছিলাম। এই টেস্টে তামিমের একটা ব্যাপার আমার খুব ভাল লেগেছে। আমার ব্যাটিংয়েও সেটা অনুসরণ করেছি। আমাদের দলে তামিম ইকবালই কিন্তু সবচেয়ে ভাল হুক ও পুল শট খেলতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন এই টেস্টে সে হুক ও পুল শট খেলার মতো প্রচুর বল পেয়েছে কিন্তু বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে অনেক বল ছেড়ে দিয়েছে। ওয়েগনার রাউন্ড দ্য উইকেটে এসেও তামিমকে প্রচুর বাউন্সার দিচ্ছিলো। কিন্তু তামিম সেই ফাঁদে পা না দিয়ে উইকেট বাঁচিয়ে খেলে। এই যে পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনা বদলে ব্যাটিং করা-এটা আমার খুব ভাল লেগেছে। আমিও দ্বিতীয় ইনিংসে ভেবেছিলাম যেন অমন কিছু করতে পারি।’
দ্বিতীয় ইনিংসে সত্যিকার অর্থেই অমন ভিন্নকিছু করেছেন মাহমুদউল্লাহ। আক্রমণের মিশেলে রক্ষণের যে ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তাকে বাংলাদেশ ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি কিন্তু উদাহরণ তো তৈরি করেছে; লড়াই করার, লড়তে পারার!
গল্পটা আরো আনন্দদায়ক হতো যদি প্রথম ইনিংসের পুঁজিটা আরো জমাট হতো। উপসংহার জানাচ্ছে, হ্যামিল্টন টেস্টে বাংলাদেশের আনন্দের নাম; দ্বিতীয় ইনিংস। আফসোসের নাম; প্রথম ইনিংস।