বুলবুলের বিশ্বকাপ দলে সৌম্য নেই, আছেন তাইজুল!
আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক। টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। বর্তমানে চাকরি করছেন আইসিসিতে। ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার এশিয়া এই পদে। চাকরির সূত্রে সম্প্রতি ছিলেন আইসিসির সদর দপ্তর দুবাইয়ে। সেখান থেকে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বার্তা২৪-এর কাছে বিশ্বকাপে তার বাংলাদেশ দলের সেরা ১৫ জনের নাম জানিয়েছেন-
আমার বিশ্বকাপ দলে স্পিনার তাইজুল ইসলাম কেন? আমি নিশ্চিত এই প্রশ্নটাই সবাই আগে করবেন। তাই সেই প্রশ্নে উত্তর ব্যাখাই করি সবার আগে।
দেখুন, ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ বলেই সব ম্যাচ জেতাতে শুধুমাত্র পেস বোলাররাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবেন-এমন চিন্তা নিয়ে যারা দল গড়ছেন তাদের সঙ্গে আমি পুরো একমত নই। আমি নিশ্চিত বিশ্বকাপের জন্য প্রায় সবগুলো দলই স্পিনারদের ওপরও জোর দিবে। বিশেষ করে একজন লেগস্পিনারকে দলে রাখবে প্রায় সবগুলো দল। আর আমাদের যেহেতু কোন লেগস্পিনার নেই। তাই আমি দলে ‘অ্যাওয়ে স্পিনার’ হিসেবে তাইজুল ইসলামকে নিতে চাই। সাকিব ইনজুরি থেকে ফেরার পর এখন পর্যন্ত কোন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলেনি। আর এবারের বিশ্বকাপ কিন্তু লম্বা সময়ের খেলা। সেমিফাইনালে যাবার আগেই ৯টি ম্যাচ খেলতে হবে। সাকিবের শতভাগ ফিটনেস নিয়ে আমি একটু সন্দিহান। সেজন্য দলে আমি কাভার হিসেবেও তাইজুলকে রেখেছি। এমনও হতে পারে কোন ম্যাচের একাদশে সাকিব ও তাইজুল দুজনেই থাকতে পারে।
হয়তো অনেকে বলতে পারেন তাইজুল তো মাত্র ৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। আরো তো অনেক বাঁহাতি স্পিনার আছে, তাহলে তাইজুলকেই কেন আমি পছন্দ করছি? করছি, কারণ আমি যে বিশ্বাস নিয়ে তাকে দলে রেখেছি তা পুরুণ করার দক্ষতা তার আছে। দলে যেহেতু জেনুইন কোন লেগস্পিনার আমাদের নেই, সেই শূন্যতার কিছুটা হলেও তাইজুল পুরো করতে পারে।
আমার বিশ্বকাপ দলে সৌম্য সরকার নেই কেন?
জানি এই প্রশ্নও উঠবে। সহজ ব্যাখা-পারফরমেন্স! আমরা ২০১৫ সালের দেশের মাটিতে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা সেই সৌম্যকে কি আর পেয়েছি? ২০১৬ থেকে সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত সৌম্য সরকার ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। বড় ইনিংস বলতে গেলে মাত্র চারটি। তিনটি হাফসেঞ্চুরি ও একটি সেঞ্চুরি। এই ম্যাচগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটিতে সৌম্য ব্যাট করেছে লোয়ার অর্ডারে। বাকিগুলোতে ওপেনার অথবা ওয়ানডাউনে খেলতে নেমেছে। কিন্তু টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে দল যা চায়, যে ধারাবাহিকতা খোঁজে, সেটা কি সৌম্যের কাছ থেকে পাওয়া গেছে?
উত্তর হলো, না পাওয়া যায়নি।
চলতি ঢাকা লিগেও সৌম্যের পারফরমেন্স নিয়ে দেখছি নির্বাচকরা পর্যন্ত চিন্তিত। সৌম্য সরকার এখন পর্যন্ত যে ‘অতিরিক্ত সুযোগ’ পেয়েছেন কই মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত তো তেমন সুযোগ পাননি! আমার মনে হয় বিশ্বকাপে এখন মোসাদ্দেককে সেই সুযোগটা নির্বাচকরা দিতেই পারেন। মোসাদ্দেক ধীরে ধীরে অনেক পরিণত হয়ে উঠছে। আবাহনীর মতো দলের অধিনায়কত্ব করছে। চাপও নিতে শিখেছে। পারফর্মও করছে ব্যাট হাতে। যদিও সে এখন জাতীয় দলে নেই। তবে তার মধ্যে অনেক বড় সম্ভাবনা আছে।
আমার বিশ্বকাপ দলের ১৫ জনের মধ্যে তিনজন স্পিনার কেন?
ফাষ্ট বোলিং দিয়ে আমার মনে হয় না ইংল্যান্ডে আমরা ম্যাচ জিততে পারবো। জিতলে স্পিন দিয়েই জিততে পারবো। আমরা যদি ২৬০/২৭০ রান করতে পারি, তখন স্পিনাররাই আমাদের ম্যাচ জেতাতে পারবে, পেসাররা নয়।
মাশরাফি, মুস্তাফিজ, রুবেল ও সাইফুদ্দিন-আমার সেরা ১৫ তে এই চারজন পেস বোলার। লম্বা সময় ধরে খেলা হয়তো আরেকজন পেস বোলার দলে নেয়ার যুক্তি ছিলো। কিন্তু আমি পনের জনের মধ্যে অবশ্যই ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানকে রাখবো। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে এই মূর্হূতে তার ফর্মও বেশ ভাল।
আমার পছন্দের ১৫ হয়তো অনেকের সঙ্গে মিলবে না। বিশেষ করে সৌম্যকে না রাখা এবং তাইজুলকে দলে নেয়ার যুক্তি অনেকেরই পছন্দ হবে না। তবে আমি আবেগ নয়, বাস্তবতার নিরিখেই এই দল গড়েছি।
আরেকটা বিষয় একটু মনে রাখতে হবে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের সঙ্গে এবারের ২০১৯ সালের বিশ্বকাপকে মেলালে কিন্তু চলবে না। জুন মাসে খেলা। উইকেটে অনেক বদল আসবে। আমি নিশ্চিত ভালো ব্যাটিং উইকেটেই হবে এবারের বিশ্বকাপ। ১০টি ভেন্যুতে আসর বসবে। প্রথম পাঁচটি ভেন্যুতে ধারাবাহিকভাবে খেলা হবে। তারপরের ম্যাচগুলো বাকি পাঁচটি ভেন্যুতে টানা হবে। এর ফলে সবাই বেশ ফ্রেস উইকেট পাবে। প্রতি ম্যাচেই বড় রান হবে। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব অনেক বেশি এবারের বিশ্বকাপে।
আমার বিশ্বকাপ দল: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।