শুভ জন্মদিন ক্রিকেটযোদ্ধা!
তার সেই ছবি, তার সেই সময় কখনো ভোলার নয়।
সেই সময়টা ২০০৫ সালের মে মাসের ২৬ তারিখ। লর্ডসে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত এক পত্রিকায় ম্যাচের আগেরদিন সিঙ্গেল কলাম ছবিতে হাসছেন ‘বেবিফেস’ ক্রিকেটার! শীত সামাল দিতে মাথায় কানটুপি। হাতে ধরা ব্যাটের হাতল। মুখের হাসিতে শিশুর সারল্য।
এই ‘বেবিফেস’ ক্রিকেটারের পরদিন টেস্ট অভিষেক হতে যাচ্ছে। তাও আবার লর্ডসে! নিজের প্রথম টেস্টে খুব বেশি রান করতে পারেননি সেদিন মুশফিক রহিম। তবে ৫৬ বলে ৮৫ মিনিটের তার ১৯ রানের সেই ইনিংস ঠিকই জানিয়ে দিলো ক্রিকেট মাঠের সামনের সময়কে পেয়ে গেছে বাংলাদেশ।
মুশফিকের ব্যাটে সেই সময় এখনো বাংলাদেশকে আনন্দ দিচ্ছে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কখনো সফল হচ্ছে। কখনো হচ্ছে না। কিন্তু জানাচ্ছে এবং শেখাচ্ছে-হেরে যাওয়া মানেই থেমে পড়া নয়। বরং উঠে দাড়িয়ে নতুন করে দিগন্তকে জয় করা!
২০০৫ সালের সেই ‘বেবিফেস’ মুশফিক আজকের দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেট আইকন, আদর্শ!
মজার বিষয় হলো মুশফিক বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার আর্ন্তজাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে। তখন উইকেটকিপার হিসেবে দলের অটোমেটিক চয়েজ ছিলেন খালেদ মাসুদ। তবে সেই মাসুদই একসময় জায়গা হারালেন মুশফিক রহিমের কাছে এসেই!
সেই সময়টা ২০০৭ সালের ৩ জুলাই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে পিসারাভানামুত্তু স্টেডিয়ামে। কলম্বোতে আগের টেস্টে খালেদ মাসুদের পারফরমেন্স চরম বাজে। বাদ পড়লেন তিনি। দলে এলেন তরুণ উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম।
ঘটনাটা সেই টেস্ট শুরুর আগের দিনের। মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম হোটেল তাজ সমুদ্রের সিঁড়ির দোড়গোড়ায় মুশফিকুর রহিমের সাক্ষাতকারের একটা ব্যবস্থা করে দিলেন। সাক্ষাতকার চলছে, মুশফিক উত্তর দিচ্ছেন।
হঠাৎ পাশ থেকে একজনের বেমক্কা প্রশ্ন।
-আচ্ছা, আপনি যে এখানে খেলবেন সেটা কি জানতেন?
মুশফিকের উত্তর-‘দেখুন, আমি তো এখানে বেড়াতে আসিনি। খেলতেই এসেছি।’ সেই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকের ৮০ রান এবং অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে তার ১৯১ রানের জুটি জানিয়ে দিলো-মুশফিক বাংলাদেশ দলে অনেকদিন ধরে খেলতে এসেছেন।
উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেই মুশফিকের পথচলার শুরু। এখনো তিনি সেই জায়গায় দেশের নাম্বার ওয়ান। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। সবচেয়ে দক্ষ। সবচেয়ে উপযোগী।
২০০৫ সালে লর্ডসের সেই ছবি এবং দু’বছর পরে পি.সারার সেই ইনিংস-ক্রিকেটার মুশফিকের জন্মগাঁথার সঙ্গে মিশে আছে ঝলমলে রঙের ক্যানভাস হয়ে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের হাসি-আনন্দ আবার এই ক্রিকেটীয় যাত্রাপথে দুঃখ-বেদনা, যন্ত্রনার সঙ্গীও হয়েছেন মুশফিক। দু’হাত উঁচিয়ে ব্যাট তুলে বাতাসে সাঁই সাঁই করে ঘুসি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের জয়ের ঘোষণা দিচ্ছেন মুশফিক। আবার শেষ ওভারে দলকে জেতাতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরছেন-এমন ছবিও আছে তার ক্যারিয়ারে। জয়ের আনন্দে হাসছেন। হারের কষ্টে কান্না ঝরছে। তবে সেই অশ্রুর প্রতি ফোঁটায় তৈরি হচ্ছে পরের লড়াই জেতার জেদ।
মুশফিক এমনই!
সবার আগে অনুশীলনে আসেন। সবাই যখন অনুশীলন শেষে বিশ্রাম নিচ্ছেন, মুশফিক তখনো নেটে ঘাম ঝরাচ্ছেন। নিজেকে তৈরি করার জন্য মুশফিকের এই চেষ্টা। প্রতিদিনই নিজের আগের শ্রেষ্ঠত্বকে ছাপিয়ে যাওয়ার অদম্য দৃঢ়তা। টানা সাফল্য অনেকের পরের পারফরমেন্সের ক্ষিদে কমিয়ে দেয়। মুশফিক এখানেও ব্যতিক্রম। প্রতিটি ম্যাচেই নিজের আগের সেরা অর্জনকে ছাপিয়ে যেতে মরিয়া মুশফিক!
এই সময়ের মুশফিকের ছবি এটাই!
২০০৫ সালে ক্রিকেটের এই লড়াই শুরু করার সময় মুশফিকের বয়স ছিলো ১৮ বছর। আজ ৩২ বছরে পা রাখা পরিণত মুশফিক জানাচ্ছেন জিততে হলে লড়তে হয়। লড়াকু হতে হয়।
শুভ জন্মদিন ক্রিকেটযোদ্ধা!