পোল্যান্ডকে উড়িয়ে কলম্বিয়া জানাল আমরাও আসছি!
কলম্বিয়া ৩ : পোল্যান্ড ০
গতির সঙ্গে আক্রমণের তেজ মিশলে যা হয়-পুরো বিস্ফোরণ! কলম্বিয়ার নিঁখুত পাসিং, ডি বক্সে অনবরত ক্রস, পোষ্টে শট, ভেঙ্গে চুরে একেবারে পোলিশ ডিফেন্সের ভেতরে ঢুকে পড়ার একগুয়েঁমি চেষ্টার বিনোদনমুলক ফুটবল প্রাণ জুড়িয়ে দিল! আরে ম্যাচ তো এমন দলেরই জেতা উচিত। ফুটবল সাহসীদের সঙ্গেই যায়। পুরো ম্যাচ জুড়ে কলম্বিয়া বুকভরা সাহস নিয়ে খেলল। জিতল দাপট নিয়ে ৩-০ গোলে। এই জয়ে কলম্বিয়া দ্বিতীয় রাউন্ডের আশা জিইঁয়ে রাখল বেশ জোরেসোরেই। আর বিশ্বকাপ থেকে আগেভাগেই ছুট্টি হয়ে গেল পোল্যান্ডের।
জেতার একটা তাড়া বলে কথা আছে না। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে শেষ বাঁশি পর্যন্ত সেই মেজাজ, সেই আচরণের সবটুকুই মিলল শুধু কলম্বিয়ার খেলায়। পুরো দলের ছটফটে একটা ভাব। জেতার ঝাঁঝ নিয়ে ঝাঁপাল কলম্বিয়া। আর সেই আগুনে আক্রমণে পাতলা প্লাষ্টিকের মতো পুড়ল প্রথমার্ধের পোল্যাান্ড। বল দখল থেকে শুরু করে পাসিং ফুটবল। কর্নার, ফ্রিকিক, পোষ্টে শট-সব পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকল কলম্বিয়া। বোঝাই যাচ্ছিল যে পরিকল্পনা নিয়ে খেলা সাজাচ্ছে কলম্বিয়া তাতে গোল পাওয়া নেহাৎ সময়ের ব্যাপার।
আক্রমণের তোড়ে পোলিশ রক্ষণভাগ বারবার কেঁপে উঠলেও গোলের জন্য কলম্বিয়াকে অপেক্ষা করতে হয় ৩৯ মিনিট পর্যন্ত। কোন একক কৃতিত্বে নয়; এই গোলটা কলম্বিয়া পেল নিখুঁত টিম কম্বিনেশনের বদৌলতে। গোলের পাশে নামটা ইয়েরি মিনার থাকলেও এই গোলের রূপকার আসলে চারজন। পোল্যান্ডের ডি বক্সের ডানদিকে ফ্রিফিক পায় কলম্বিয়া। ফ্যালকাও সেই ফ্রিকিক থেকে বল সামনে দাড়ানো হুয়ান কদরাদোর দিকে আলতো ভঙ্গিতে বাড়ান। কুদরাদো কোনায় দাড়ানো হামেস রদ্রিগেজের পায়ে বল ঠেলে দেন। ওয়ান-টু-থ্রি অ্যাঙ্গেলে ঠিক যেন ত্রিভুজ পাস। ত্রিভুজের সেই কোনা থেকে রদ্রিগেজ এবার বল ফেলেন বক্সে। সেখানে পোলিশ ডিফেন্ডারদের উচ্চতায় হারিয়ে দিয়ে লাফিয়ে উঠে হেড করেন মিনা। পোলিশ গোলকিপার তাকিয়ে শুধু দেখলেন বল জালে, গো..ও..ল (১-০)। একেই বলে টিম গোল!
এক গোলে এগিয়ে থাকা কলম্বিয়া দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জানিয়ে দেয় বড় জয়ের জন্যই খেলছে তারা এই ম্যাচ। প্রথমার্ধের মতো এই অর্ধেও কলম্বিয়ার আক্রমণের জোয়ারে ভেসে যায় পোল্যান্ড। রদ্রিগেজ, ফ্যালকাও, কুদরাদো, আরিয়াস, হুয়ান কুইন্টিনোর গতির সঙ্গেই মুলত পেরে উঠেনি পোল্যান্ড। এই পাঁচজন যতবার বল নিয়ে পোলিশ রক্ষণভাগের দিকে এগিয়েছেন মনে হয়েছে আরেকটি গোল হল বটে!
৭০ মিনিটের সময় মাঝমাঠ থেকে কুইন্টিনোর থ্রু পাস ধরে গতিতে পোল্যান্ডের দুজন ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলেন রামাদেল ফ্যালকাও। গোলকিপার এগিয়ে এলে জটিল অ্যাঙ্গেল তৈরি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফ্যালকাও আরও নিঁখুত কায়দায় কোনাকুনি শট নিয়ে বল জালে জড়ান (২-০)। বিশ্বকাপে এটা ফ্যালকাওর-প্রথম গোল।
চারবছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে ইনজুরির জন্য খেলতে পারেননি এই তারকা। এবার খেলছেন। রদ্রিগেজ, কুদরাদো ও ফ্যালকাও-এই ত্রয়ীকে ঘিরে এবারের বিশ্বকাপে অনেক দুরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে কলম্বিয়া। দুই গোল করে কলম্বিয়ার গোলক্ষিদে যেন আরও বেড়ে যায়। দ্বিতীয় গোলের মিনিট পাঁচের মধ্যেই তৃতীয় গোলের দেখা পায় কলম্বিয়া। মাঝমাঠেরও নিচে থেকে ডিফেন্স চেরা আড়াআড়ি পাস বাড়ান হামেস রদ্রিগেজ। দুই ডিফেন্ডারকে গতিতে পেছনে ফেলে বল নিয়ে সামনে বাড়েন কুদরাদো। গোলকিপার সামনে বাড়লেও কোন লাভ হয়নি। এবারও কোনাকুনি অ্যাঙ্গেলে বল জালে (৩-০)।
ম্যাচের শেষদিকে রবার্ট লিয়েনদভস্কি কলম্বিয়ার গোলপোষ্টে একটা শট নেয়া ছাড়া পুরো ম্যাচে যা করেছেন আভিধানিক অর্থে তাকে বলে দৌড়াদৌড়ি করা!
শুধু লিয়েনদভস্কি কেন এক অর্থে তো পুরো পোল্যান্ড দল এই ম্যাচে বলের পেছনে দৌড়াল। আর খেলা খেলল শুধু কলম্বিয়া! ম্যাচ জিতল বড় ব্যবধানে। সেই সঙ্গে হৃদয়ও!
এখনো দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয়নি কলম্বিয়ার। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলে তাদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে ইংল্যান্ড। কাজানে কলম্বিয়ার এই ম্যাচ দেখে থাকলে ইংল্যান্ডের টেনশন কিন্তু শুরু হয়ে গেছে!