নেইমার না এমবাপ্পে? রিয়ালের পছন্দ শেষের জন!
রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ঘরের ছেলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এখন জুভেন্টাসে। ক্যারিয়ারে এই প্রথমবারের মতো ইতালি লিগে খেলবেন সিআরসেভেন।
-তো রোনালদো চলে গেছেন। তার খালি জায়গায় কাকে আনছে রিয়াল মাদ্রিদ? অবাক করার বিষয় হল রিয়াল মাদ্রিদ রোনালদোর শূন্যস্থান পুরণের জন্য দৌড়ঝাঁপ ঠিকই দিচ্ছে কিন্তু সেটা খুব একটা প্রকাশ্যে না। তবে নামটা যখন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, তখন একটা ব্যাপার নিশ্চিত হতেই হবে-রিপ্লেসমেন্টটাও তেমন নামকরাই কিছু হবে।
আপাতত রোনালদোর এই শূন্যস্থানের জন্য তিনটি নাম রিয়াল মাদ্রিদের হান্টিং টেবিলে। বেলজিয়ামের তারকা লিভারপুলের ষ্ট্রাইকার এডেন হ্যাজার্ড এবং প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের দুই তারকা নেইমার ও কিলিয়েন এমবাপ্পে।
তবে সার্বিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত এই তালিকায় এমবাপ্পের নামটা সবার উপরে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
-কেন?
শুনি সেই ব্যাখা।
প্রথমত রিয়াল মাদ্রিদ সবসময় নতুন তারকার খোঁজে থাকে। রোনালদো চলে যাওয়ায় সেখানে নতুন কোন তারকাকেই বসাতে চায় রিয়াল মাদ্রিদ। আর তাদের এই পরিকল্পনার সঙ্গে সবচেয়ে ভাল মিল খাচ্ছে ফ্রান্সের কিলিয়েন এমবাপ্পের নামটা। রাশিয়া বিশ্বকাপে সেরা তরুণ ফুটবলারের ট্রফি জিতেছেন ১৯ বছর বয়সী এই তারকা। একক পারফরমেন্সে দলকে জেতানোর ক্ষমতা যে তিনি রাখেন- তার প্রমাণও মিলেছে। নতুন মৌসুমে নতুন কোচ হিসেবে হুলেন লোপেতেগুইকে দায়িত্ব দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এই স্প্যানিশ কোচ জানেন তার কাছ থেকে রিয়াল মাদ্রিদ কি চায়? আর সেই সাফল্যের প্রত্যাশায় রিয়ালের নতুন কোচ দলে নতুন কোন তারকাকে এনে অন্তত প্রাথমিক চমকটা দেখাতে চান। সেই চাহিদা পুরুনের জন্য তার কাছে এই মূহূর্তে সবচেয়ে পছন্দের নামটিই হতে পারে কিলিয়েন এমবাপ্পে!
বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরমেন্স। বল পায়ে গতিতে ঝড় তোলা। বিতর্কহীন জীবন। তারুণ্যের শক্তি। টিনেজ বয়সেই পেলের সঙ্গে তুলনার শুরু। তাকে দলে ভেড়াতে খুব রেকর্ড পরিমান খরচও নেই। এমনসব হিসেবÑনিকেষ কষেই রিয়াল মাদ্রিদ আপাতত এমবাপ্পের নাম নেইমারের চেয়ে তালিকার ওপরের দিকেই রেখেছে।
তবে নেইমারের জন্য যে রিয়াল মাদ্রিদ কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না-এমন কিছু নয়। রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সেরা পছন্দের খেলোয়াড়দের একজন নেইমার। বার্সোলোনায় যোগ দেয়ার আগে থেকেই নেইমারকে দলে টানার পরিকল্পনা করেছিলেন পেরেজ। ২০০৫ সালে রবিনহোর বিনিময়ে স্যান্টোস থেকে নেইমারকে রিয়ালে আনার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু সেসময়ের দলবদলের লড়াইয়ে রিয়ালকে হারিয়ে দেয় বার্সেলোনা।
স্যান্টোস থেকে নেইমার বার্সোলোনায় যোগ দেন। চারবছর বার্সায় কাটানোর পর নেইমার গত বছর রেকর্ড মুল্যে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ক্লাবে নাম লেখান। তখনই ধারণা করা হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদে আসার জন্যই বার্সা ছেড়ে সাময়িক সময়ের জন্য নেইমার সেইন্ট জার্মেই ক্লাবকে মধ্যবর্ত্তি স্টেশন হিসেবে বেছে নিয়েছেন!
দলবদলের বাজারের সর্বশেষ গুঞ্জন হল নেইমারের জন্য এখনো দরজা খুলে রেখেছেন রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট পেরেজ। তবে বিশ্বকাপে এমবাপ্পের পারফরমেন্সটাই রিয়াল মাদ্রিদের সিদ্ধান্তকে এখন প্রভাবিত করছে।
নেইমার না এমবাপ্পে-এই প্রশ্নে অধিকতর পছন্দের তালিকায় শেষের জনের নামের পাশেই রিয়াল মাদ্রিদ বোর্ডের সমর্থনটা বেশি বলে শোনা যাচ্ছে! বয়সটা অনেক বড় ফ্যাক্টর এক্ষেত্রে। ঠিকমতো রাখতে পারলে সামনের এক দশক পর্যন্ত এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদদের তারকা মেলার সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা হয়ে থাকতে পারেন। আর যদি ফর্ম নিয়ে কোন সমস্যায় পড়েন কখনো, তবে তাকে বেঁচে দেয়ার সুযোগ তো থাকছেই। এমন তরুণ খেলোয়াড়ের একটা ভাল বিক্রয়মুল্যও অবশ্যই মিলবে।
বিশ্বকাপ যেখানে এমবাপ্পের জন্য আর্শীবাদ, ঠিক সেই টুর্নামেন্টেই নেইমার এবার সার্বিক অর্থে সমালোচনাই একটু বেশি কামিয়েছেন। ফাউল আদায়ের জন্য মাঠে বারবার পড়ে গিয়ে অভিনয়ের জন্য খোদ ব্রাজিলের অনেক সাবেক তারকা তার কড়া সমালোচনা করেছেন। সামান্য ধাক্কায় তিনি মাঠে যেভাবে কাতরতা দেখানোর অভিনয় করেছেন, পল্টি খেয়েছেন, সেটা তার মাপের একজন খেলোয়াড়কে ঠিক মানায় না।
বার্সেলোনায় যে কড়া নিয়মের মধ্যে ছিলেন নেইমার, সেটা প্যারিস সেইন্ট জার্মেই এসে খুঁইয়ে বসেছেন বছরখানেকেই। পেনাল্টি বা ফ্রিকিক নিয়ে সতীর্থ কাভানির সঙ্গে মাঠে তার তর্কাতর্কির ঘটনাও জানাচ্ছে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে নেইমারের সময়টা খুব একটা সুখে কাটছে না। রিয়াল মাদ্রিদ যদি ডাকে তবে সাড়া দিতে নেইমারও এক পায়ে দাড়িয়ে।
তবে রিয়ালের আগ্রহ যে এখন তার আরেক ক্লাব সতীর্থ এমবাপ্পের ওপরই বেশি!