জিতলেই উৎসব, অ্যাডভান্টেজে বাংলাদেশ!
গায়ানায় দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে একটা শব্দ বেশ ঘুরে ফিরে আসছে-অ্যাডভান্টেজ বাংলাদেশ!
সত্যিই তাই।
দুই ম্যাচের টেস্টে বাংলাদেশ দলকে ভেঙ্গেচুরে একাকার করে ওয়ানডেতে সিরিজে নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দাপুটে ভঙ্গিতেই। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ৪৮ রানের একপেশে জয় বদলে দিয়েছে এখন সামনের দিনের চিত্র। ওয়ানডে সিরিজের ট্রফিতে এখন বাংলাদেশ একহাত দিয়েই রেখেছে। পুরো কব্জায় নিতে হলে চাই আরেকটি জয়। সামনে বাকি দুটো ম্যাচ। তারই একটি ২৫ জুলাই গভীর রাতে শুরু।
-সিরিজ কে জিতবে? এই প্রশ্নের উত্তরে মুলত বেশ কিছু কারণে এখন বলাবলি হচ্ছে-অ্যাডভান্টেজ বাংলাদেশ। প্রথমত: সিরিজে লিড। দ্বিতীয়ত: ক্রিকেটারদের ফর্ম। তৃতীয়ত: প্রিয় ভেন্যু।
এই তিন কারণের ব্যাখা এবার শুনি।
তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে জেতা মানেই ১০০ মিটারের দৌড়ে শুরুর ১০ কদম এগিয়ে থাকা। পরের দুটোর যে কোন একটিতে জিতলেই ট্রফি জয়ের আনন্দ। আর ঠিক উল্টো অবস্থায় এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজ বাঁচাতে হলে এই দুটো ম্যাচেই তাদের জিততে হবে। কাজটা এখন তাদের জন্য বেশি কঠিন। এগিয়ে থাকার এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ কি দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজের ফয়সালা করতে পারবে?
উত্তর জানার জন্য ২৫ জুলাই গভীর রাতে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ওয়ানডে দেখতে টিভি সেটের সামনে বসে পড়–ন। জি টিভি এবং চ্যানেল নাইন সরাসরি রাত ১২টা ৩০ মিনিট থেকে এই ম্যাচ সম্প্রচার করবে।
ওয়ানডে ক্রিকেট মানেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য কমফোর্ট জোন। তিন ফরমেটের ক্রিকেটের মধ্যে ৫০ ওভারের এই ক্রিকেটেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে বাংলাদেশ। তারই প্রমান মিলেছে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে। দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের দারুণ ওয়ানডে ফর্ম বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছে বাংলাদেশকে। ম্যাচ পরিস্থিতি কখন কিভাবে বদলে দিতে হয়- সেই দক্ষতা বেশ ভালই রপ্ত সিনিয়র ক্রিকেটারদের। গায়ানার প্রথম ওয়ানডের শুরু থেকে শেষ জুড়ে তো সেই প্রমানই মিলল। তালিসমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার উপস্থিতিই যেন আমূল বদলে দিয়েছে গোটা দলের চেহারা। টেস্ট সিরিজ হারের পর নূয়ে পড়া কাঁধ এখন ওয়ানডেতে এসে শক্তপোক্ত সাবলীল, সতেজ।
সেই সজীবতা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বাংলাদেশ জ্বলে উঠলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাহলে আরেকবার পুড়ছে!
বলা হয়ে থাকে ক্রিকেটে জিততে শুধু ফর্ম না, ভাগ্যও লাগে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে সৌভাগ্যময় ভেন্যু কোনটা? এই প্রশ্নে দলের সব ক্রিকেটারের উত্তর হবে একটাই-গায়ানার প্রভিন্স স্টেডিয়াম। এই মাঠে এখন পর্যন্ত কোন ম্যাচে হারেনি বাংলাদেশ। মাঠের মাটি থেকে শুরু থেকে উইকেটের গুণাগুণ- সবকিছুই যেন বাংলাদেশের বেশ পরিচিত। যেন গায়ানায় নয়, মিরপুরের স্লো, টার্ন এবং লো-বাউন্সের উইকেটে খেলা হচ্ছে। আর এমন উইকেটের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ সখ্য। গায়ানার প্রভিন্স স্টেডিয়াম তাই বাংলাদেশের কাছে অজানা-অচেনা কোন ভেন্যূ নয়। লাকি গ্রাউন্ড।
সেখানে আজও ভাল ক্রিকেট খেলুক বাংলাদেশ, সঙ্গে যেন সৌভাগ্যকেও পায়, কি বলেন?
বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচের হিসেবটা যত সহজ, ঠিক ততই কঠিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। বাংলাদেশের পরিকল্পনায় এই ম্যাচ ট্রফি জয়ের। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের চিন্তায় বাঁচা-মরার! প্রথম ম্যাচে কোথায় এবং কিসে ব্যর্থ হয়েছে দল; সেই হিসেব কষেই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাড়তি সতর্কতা নিয়ে নামবে ক্যারিবীয়রা। প্রথম ম্যাচে ক্যাচিংটা একেবারে যা তা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সাকিব-তামিমের একাধিক ক্যাচ ফেলেছে তারা। স্লো উইকেটে যে ধৈর্য্য নিয়ে ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন তাতেও তারা ব্যর্থ। বোলাররা টেস্ট সিরিজে যে তেজ দেখিয়েছিলেন, তা অনুপস্থিত প্রথম ওয়ানডেতে। সিরিজে ফিরতে মরিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিশ্চয়ই একই ভুল বারবার করতে চাইবে না। তাছাড়া গায়ানার উইকেটে পরে ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতাটা কেমন- সেটা এখনো অজানা বাংলাদেশের। এই ম্যাচে বৃষ্টিও একটা ফ্যাক্টর হতে পারে।
তারপরও সার্বিক বিবেচনায় সিরিজ জয়ের সম্ভাবনার সূচকে ভাল সুবিধায় আছে বাংলাদেশ।
সূচকটা উর্দ্ধমূখী থাকলেই যে জয়োৎসব!
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তামিম, এনামুল, সাকিব, সাব্বির, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক, মাশরাফি, মিরাজ, রুবেল, মুস্তাফিজ।