তামিমের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশ ৩০১, চোখে জয়ের স্বপ্ন
৩০১ রান।
নিরাপদ স্কোর?
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্ক স্টেডিয়ামে রান তাড়ার পরিসংখ্যানের পাতা উল্টালে ইনিংস শেষে বাংলাদেশ আপাত স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতেই পারে। এই মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড ২৬৬ রানের। বাংলাদেশ যে এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে আরো বড় রানের। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ জিততে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করতে হবে ৩০২ রান। গড়তে হবে এই মাঠে রান তাড়ার নতুন রেকর্ড। ওয়ার্নার পার্কে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেটে ৩০১ রান তুলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। এই প্রথম তিনশ পেরুনো রান গড়ল।
ব্যাটিংয়ে এমন সাফল্যের পর জয়ের একটা বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ। আর জিতলেই সিরিজ জয়। ওয়ানডে ট্রফি নিয়ে উৎসব! তবে সেই স্বপ্ন সফল করার কাজ অর্ধেক পুরো হয়েছে ব্যাটিংয়ে। বাকি অর্ধেক পুরো করতে হলে বোলিংয়ে কাজটা সুসম্পন্ন করতে হবে।
ওয়ানডে সিরিজ ঠিক যেখান থেকে শুরু করেছিলেন তামিম ইকবাল, সেখানে এসেই শেষ করলেন। শুরুটা হয়েছিল তার বড় সেঞ্চুরি দিয়ে। তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচেও পেলেন আরেকটি সেঞ্চুরি। একটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দুই সেঞ্চুরি! বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে মাত্র একবার ঘটেছিল। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন সেই ঘটনাও ঘটিয়েছিলেন ঐ একজনই; তামিম ইকবাল। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে মিরপুরে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন বাংলাদেশের এই ওপেনার। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে নিজের সেই একক রেকর্ডকে আরো নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে।
গায়ানায় প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ১৩০। পরের ম্যাচে ৫৭। এবার ওয়ার্নার পার্কে ১০৩ রান। তিন ম্যাচের সিরিজে ২৯০ রান। রান গড় ১৪৫। এই ওয়ানডে সিরিজের নতুন নাম আপনি দিতেই পারেন-‘তামিম ইকবালের সিরিজ!’
ওয়ার্নার পার্ক মুলত ব্যাটিং সহায়ক উইকেট এই চিন্তা নিয়েই মাশরাফি টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেন। শুরুটা করে বাংলাদেশ একটু ধীরগতিতে। শুরুর ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে রান উঠে ১ উইকেটে ৩৭ রান। তামিম ইকবাল পুরো সিরিজে যেমন রান এবং সাফল্যের ধারাবাহিকতার প্রতীক; ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী এনামুল হক বিজয় ঠিক তার উল্টো! ব্যর্থতায় তার নিত্য সঙ্গী এই সিরিজে। তিন ম্যাচেই ফ্লপ। সিরিজে আরেকটা বিষয় বেশ ধারাবাহিকভাবে দেখল বাংলাদেশ; দ্বিতীয় সাকিব এবং তামিমের জুটিতে বড় রান। ৩৫ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর সাকিব ও তামিমের জুটিতে যোগ হল ৮১ রান। সাকিব স্ট্রাইকরেট বাড়ানোর পরিকল্পনায় সুইপ শট খেলতে গিয়ে নিজের ইনিংসকে ৩৭ রানের বেশি বাড়াতে পারেননি।
মুশফিকও ফিরে আসেন চটজলদি। তবে তামিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জুটিতে বাংলাদেশ এই ম্যাচে বড় স্কোরের পথে হাঁটে। ১২০ বলে সেঞ্চুরি পান তামিম। ওয়ানডেতে এটি তার ১১ নম্বর সেঞ্চুরি। আর এশিয়ার বাইরে চতুর্থ। তামিম ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যানের এশিয়ার বাইরে ওয়ানডেতে এতগুলো সেঞ্চুরি নেই। তামিম ১০৩ রানে বিদায় নেয়ার পর ব্যাটিংয়ে প্রমোশন নিয়ে নামেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
অধিনায়কের এই পরিকল্পনাটা দারুণভাবে কাজে দেয়। চার বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ২৫ বলে ৩৬ রান আসে মাশরাফির মারকুটো ব্যাট থেকে। এর মধ্যে ৪২ নম্বর ওভারে জেসন হোল্ডারকে টানা তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান। মাহমুদউল্লাহ এই ম্যাচে ব্যাট হাতে ফিনিসারের দায়িত্ব পালন করেন। ৪৯ বলে তার ৬৭ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে ৩০১ রানের স্বাস্থ্যবান স্কোর এনে দেয়।
হ্যাঁ, সিরিজের আগের ম্যাচগুলোতে যারা ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন, সেই তারা এই ম্যাচেও তাই রইলেন; সাব্বির রহমান ১২ রানে আউট!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ৩০১/৬ (৫০ ওভারে, তামিম ১০৩, এনামুল ১০, সাকিব ৩৭, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৬৭, মাশরাফি ৩৬, সাব্বির ১২, মোসাদ্দেক ১১, নার্স ২/৫৩, হোল্ডার ২/৫৫)।