তামিমের সেঞ্চুরির সিরিজে ট্রফি বাংলাদেশের
জেতার জন্য বড় পুঁজি পায় বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকেই। ৩০১ রান যে কোন বিচারে বড় স্কোর। ব্যাটসম্যানদের সাফল্যের সুরে বোলাররাও গাইলেন ম্যাচ জয়ের গান। শেষের দিকে ফিল্ডিংও হল অনবদ্য। সেই সম্মিলিত সাফল্যে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতল ১৮ রানে। সেই সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি হল বাংলাদেশের।
তিন ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডে ম্যাচ বাংলাদেশ শুরু করেছিল জয় দিয়ে। শেষও করল জয়ের আনন্দ দিয়ে। ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ সাফল্য নিয়েই ঘরে ফিরছে।
শেষ ২০ বলে ম্যাচ জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন দাড়ায় ৪৩ রান। হাতে উইকেট জমা থাকায় টি-টুয়েন্টি স্টাইলে ব্যাট চালায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু রান-বলের ব্যবধানটা কমিয়ে আনতে পারেনি। শেষ ওভারে সমীকরণটা দাড়ায় এমন; ৬ বলে চাই ২৮ রান। মুস্তাফিজের করা সেই ওভারের প্রথম বল থেকে রোভম্যান পাওয়েল ছক্কা হাঁকালেও পরে ব্যাটে-বলে তেমন লাগাতে পারেননি। ১৮ রানে সিরিজের ফাইনাল এই ম্যাচ জিতে ট্রফি জয়ের আনন্দে ভাসল বাংলাদেশ।
এশিয়ার বাইরে অনেকদিন পরে কোন দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। শেষ জিতেছিল ২০০৯ সালে। কোন সন্দেহ নেই টেস্ট সিরিজে বাজেভাবে হারের পর মুষড়ে পড়া বাংলাদেশ এই ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি জিতে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।
ওয়ার্নার পার্কে সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয়। তামিম ইকবালের ১০৩ রানের সেঞ্চুরি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হার না মানা ৬৭ রান, সাকিবের ধৈর্য্যশীল ব্যাটিংয়ের এই তিনের যোগফলে ম্যাচে বাংলাদেশের জমা দাড়ায় ৩০১ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডে তামিম শুরু করেছিলেন অপরাজিত ১৩০ রানের সেঞ্চুরি দিয়ে। তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচেও হাঁকালেন আরেকটি সেঞ্চুরি! একটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এর আগে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকানোর কৃতিত্বও ছিল তারই। ২০১৫ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই কৃতিত্ব গড়েন তামিম। এবার নিজের রেকর্ডের সেই তালিকা আরো সমৃদ্ধ করলেন।
নামের পাশে বিগহিটার নিয়ে দলে থাকলে মিডলঅর্ডারে এদের ব্যাটিং মোটেও বড়কিছু করে দেখাতে পারছে না। তাই মাশরাফি এই ম্যাচে সেই বিগহিটারদের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে নিজেই একটু আগেভাগে ব্যাটিংয়ে নামেন। দারুণ কাজে দেয় তার এই কৌশল। ২৫ বলে তার ৩৬ রান জানান দিল শুধু বোলিং বা অধিনায়কত্বের মস্তিস্ক নয়, এখনো ব্যাটিংয়ের কব্জিটা বেশ কার্যকর তার।
বাংলাদেশ ইনিংসের ফিনিসিংটা এল মাহমুদউল্লার ব্যাটে। ৩ ছক্কা ও ৫ বাউন্ডারিতে ৪৯ বলে তার অপরাজিত ৬৭ রানের ঝলমলো ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর তিনশ রান ছাড়াল। এই ম্যাচ জেতার আসল পুঁজি ব্যাটিংয়েই পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
পরে বোলাররা সেই সাফল্যের বাগানেও বেড়িয়ে এলেন! ফিরলেন জয় আনন্দ নিয়ে!
শুরুর দুই ম্যাচে প্রায় ঘুমিয়ে থাকা ‘ব্যাটিং দৈত্য’ ক্রিস গেইল যেন সত্যিকার অর্থেই জেগে উঠেছিলেন শেষ ওয়ানডেতে। সিরিজে নিজের প্রথম হাফসেঞ্চুরি পান মাত্র ৪০ বলে। হাফসেঞ্চুরি পুরো হওয়ার পর গেইলের ব্যাটে রান ক্ষিদে আর বেড়ে গেল। যেভাবে খেলছিলেন ততক্ষন পর্যন্ত বাংলাদেশের ফিল্ডারদের বল কুড়িয়ে আনা ছাড়া আর করার কিছুই ছিল না। তার একটা বিশাল ছক্কায় অবশ্য সেই বলও একবার হারিয়ে যায়! রুবেল হোসেনের বলে ক্রিস গেইল ৭৩ রানে আউট হওয়ার পর স্বস্তি ফিরে পায় বাংলাদেশ। ৬৬ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় গেইল কি অনায়াস ভঙ্গিতেই এই রান করেন। গেইলের ওপেনিং জুটি এভিন লুইসের সঙ্গে সিরিজে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জার হিসেবটা এমন; মাশরাফি ৩, লুইস ০!
সিরিজের তিন ম্যাচে তিন ম্যাচেই মাশরাফির বলে আউট হন লুইস। শেষ ম্যাচে একটু বেশি বড় ব্যর্থ। ১৩ বল করতে খেলেন ৩৩ বল! দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে গেইল যখন মাঠ ছাড়ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরবোর্ডে রান তখন ১০৫। সাঁই হোপ ও শিমরন হেটমায়ারের ব্যাটে সেই পুঁজি আরও বাড়ে। ফিরতি স্পেলে হেটমায়ারকে ৩০ রানে ফেরান মেহেদি মিরাজ। কিন্তু অন্যপ্রান্তে হোপের ব্যাটেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ জয়ের সব ’হোপ’।
শেষের দিকে এসে রান ও বলের ব্যবধান কমিয়ে আনতে হোপকে ঝুঁকি নিয়ে তুলে মারতে হয়। মাশরাফি তার শেষ স্পেলে এসে হোপকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে আরেকবার ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন। মুস্তাফিজ তার পরের স্পেলে অনেক রান খরচ করলেও অধিনায়ক তার ওপরই আস্থা রাখেন। জ্যাসন হোল্ডারের উইকেট তুলে নিয়ে মুস্তাফিজ প্রমান করলেনÑসেটা ছিল সঠিক বিনিয়োগ। রোভম্যান পাওয়েল একপ্রান্ত আঁকড়ে রেখে মারমুখি ব্যাটিং করে গেলেও রানের সঙ্গে বলের দুরুত্ব শেষপর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারেননি।
টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি জিতল বাংলাদেশ। ৩১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ। সেই সিরিজেও এখন বাংলাদেশকেই ফেবারিট দেখাচ্ছে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৩০১/৬ (৫০ ওভারে, তামিম ১০৩, এনামুল ১০, সাকিব ৩৭, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৬৭, মাশরাফি ৩৬, সাব্বির ১২, মোসাদ্দেক ১১, নার্স ২/৫৩, হোল্ডার ২/৫৫)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৮৩/৬ (৫০ ওভারে, গেইল ৭৩, হোপ ৬৪, পাওয়েল ৭৪*, হেটমায়ার ৩০, মাশরাফি ২/৬৩, মেহেদি ১/৪৫, রুবেল ১/৩৪, মুস্তাফিজ ১/৬৩)। ফল: বাংলাদেশ ১৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল। সিরিজ সেরা: তামিম ইকবাল