ট্রেন্টব্রিজে ইংল্যান্ডের টার্গেট ৫২১ রান
ঢাকা: ঠিক যাকে বলে পারফেক্ট একটা দিন; তেমন স্বস্তিদায়ক আনন্দ নিয়েই ট্রেন্ট্রব্রিজ টেস্টের তৃতীয়দিন কাটল ভারতের। আর ইংল্যান্ডের সামনে এখন ম্যাচ জেতার জন্য ৫২১ রানের বিশাল পাহাড় টপকানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ।
বিরাট কোহলি ইংল্যান্ড সফরে আরেকটি সেঞ্চুরি পেলেন। চেতেশ্বর পুজারার ব্যাটও রানে হাসল। অলরাউন্ডার নামের প্রতি সুবিচার করলেন হার্দিক পান্ডে বল ও রানের সমান হিসেবে হাফসেঞ্চুরি তুলে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটে ৩৫২ রান তুলে দান ছেড়ে দেয় ভারত। ইংল্যান্ডের সামনে ম্যাচ জিততে ভারত ৫২১ রানের টার্গেট ছুড়েছে।
একটু জানিয়ে রাখি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত চতুর্থ ইনিংসে এতবেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড কারো নেই। টেন্ট্রব্রিজে জিততে হলে এখন ইংল্যান্ডকে সেই রান তাড়ার বিশ্বরেকর্ড গড়তে হবে। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬১ রানে গুটিয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড টেন্ট্রব্রিজের চতুর্থ ইনিংসে এই বিশাল টার্গেট টপকে যাবে- এমন বিশ্বাসের পক্ষে বাজি ধরার লোকের সংখ্যা খুবই কম!
অবাক হওয়ার কিছু নেই যদি চতুর্থদিনেই এই ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। এমনকি চতুর্থদিনের সকালেই!
যে উইকেটে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে রান তুলতে হাসফাঁস করে সেই উইকেটে ভারত উভয় ইনিংসে তিন’শ প্লাস স্কোর গড়ে। বিরাট কোহলি যেন পণ নিয়েই সফর শুরু করেছেন, এবার নিজেকে চেনাবেন অন্য মেজাজে। গেলবারের ইংল্যান্ড সফরে ব্যাটসম্যান কোহলি ছিলেন মহাব্যর্থ। এবার শপথ নিয়েছেন সেই ব্যর্থতা ঘুচিয়ে সেরা কিছু অর্জনের জন্য। সিরিজের প্রথম দুই টেস্ট ভারত হেরেছে। কিন্তু বিরাট কোহলির ব্যাট যে ‘বিরাট’ কিছু দেখিয়েছে সেই দুই টেস্টেও। চলতি সিরিজের তিন টেস্টের ছয় ইনিংসে বিরাট কোহলির রান সংখ্যা এমন ১৪৯, ৫১, ২৩, ১৭, ৯৭ ও ১০৩! এখনো সিরিজের দুটি টেস্ট বাকি।
ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলি এই সিরিজে আর কি কি কর্ম করেন সেটা দেখার বিষয়। আর ভারত দল দেখাতে চায় ০-২ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে থাকলেও তারা ঘুরে দাঁড়াতে জানে। সেই ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পায়ের নিচে শক্ত জমিন পেয়ে গেছে ভারত ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে। দ্বিতীয়দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ও পুজারা তৃতীয়দিনের সকালের পুরোটাই শাসন করেন। ৮২ বলে হাফসেঞ্চুরি করা কোহলি কিছুটা ধীরগতি এবং সাবধানী ভঙ্গিতে সামনে বাড়েন। দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘন্টায় পুজারা ৭২ রানে ফিরে গেলেও কোহলি ঠিকই সেঞ্চুরির পথে হাঁটেন। তবে ভাগ্য ভালো প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসটাও তার শেষ হতে পারতো নার্ভাস নাইন্টিজের ঘরেই। জেমস অ্যান্ডারসনের বলে ৯৪ রানের সময় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন কোহলি। চতুর্থ স্লিপে দাড়ানো জেনিংস সেটা হাতে রাখতে পারেননি। সফরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির জন্য জেনিংসকে আলাদা করে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন কোহলি। ৬৮ নম্বর টেস্টে এটি তার ২৩তম সেঞ্চুরি। ১০৩ রান করে কোহলি ফিরে আসার পর ট্রেন্টব্রিজে ব্যাট হাতে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করেন হার্দিক পান্ডে। আগেরদিন বল হাতে ৫ উইকেট শিকারি পান্ডে ব্যাট হাতেও ট্রেন্টব্রিজ টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখছেন। তার ৭ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৫২ বলে ৫২ রানের হাফসেঞ্চুরি ভারতের ম্যাচ জয়ের স্বপ্নকে আরও সবুজ করে তোলে।
ম্যাচ জিততে হলে চাই ৫২১ রান। স্কোরবোর্ডে এই চাহিদা পত্র দেখলেই তো ইংল্যান্ডের নার্ভাস হয়ে পড়ার কথা। তৃতীয়দিনের শেষ বিকালের ৯ ওভারের বোলিং স্পেল অবশ্য ইংল্যান্ড নিরাপদেই পার করে দেয়। এই নিরাপত্তা চতুর্থদিন কতক্ষণ থাকে সেটাই এখন দেখার বিষয়? সমস্যা আরেকটা আছে ইংল্যান্ডের। দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্ট আঙ্গুলে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে। দ্বিতীয় ইনিংসে বেয়ারস্ট ব্যাট করতে পারবেন কিনা সেটাও নিশ্চিত নয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনি: ৩২৯/১০ ও দ্বিতীয় ইনি: ৩৫২/৭ ডিক্লে: ১১০ ওভারে, ধাওয়ান ৪৪, রাহুল ৩৬, পুজারা ৭২, কোহলি ১০৩, পান্ডে ৫২*, স্টোকস ২/৬৮, রাশিদ ৩/১০১)।
ইংল্যান্ড ১ম ইনি: ১৬১/১০ (৩৮.২ ওভারে, কুক ২৯, জেনিংস ২০, রুট ১৬, বাটলার ৩৯, পান্ডে ৫/২৮, বুমরাহ ২/৩৭, শর্মা ২/৩২)। ও দ্বিতীয় ইনিংস: ২৩/০ (৯ ওভারে, কুক ৯*, জেনিংস ১৩*)।