গোলকিপারের ভুলে প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশের হার
পুরো ম্যাচে গোলের সুযোগ বেশি পেয়েছিল বাংলাদেশ। আক্রমণের তীব্রতাও বেশি শানায় স্বাগতিকরা। কিন্তু ম্যাচ জিতল শ্রীলঙ্কা। প্রথমার্ধের ১০ মিনিটের সময় গোলকিপার শহিদুলের ভুলের সুযোগ নিয়ে মাঝমাঠ থেকে বুদ্ধিদীপ্ত কায়দায় গোল করে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে দেন স্ট্রাইকবার মোহাম্মদ ফজল। সেই গোলেই প্রীতি ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়ে গেল। যাকে বলে কানায় কানায় স্টেডিয়াম পূর্ণ; ঠিক তেমনই দর্শক সমাগম হয়েছিল নীলফামারির শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আর্ন্তজাতিক এই প্রীতি ম্যাচে।
ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে উভয় দলের খেলায় একই চেষ্টার দেখা মিলে- গোল করা! আর সেই তাগিদেই দু’দলের আক্রমণাত্নক মেজাজি ফুটবলে প্রীতি ম্যাচের ‘প্রীতি’ উড়ে গেল! বল নিয়ে কাড়াকাড়ি। তীব্র প্রতিযোগিতা। জমাট উত্তেজনা। দ্রুতগতির আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ফুটবলের দারুণ লড়াই। আর শুরুর লড়াইয়ের এই ধাপেই গোল পেয়ে পায় শ্রীলঙ্কা। তবে এই গোলে শ্রীলঙ্কার পরিকল্পিত আক্রমণের কোন কৃতিত্ব নেই। বরং পুরো দায় আছে বাংলাদেশ দলের গোলকিপার শহিদুল আলমের। বল মাঝমাঠে দেখে শহিদুল একটু বেশি আয়েশি হয়ে উঠেন। পোস্টে নিজের জায়গা থেকে আরেকটু ওপরে উঠে আসেন। মাঝমাঠ থেকে সেটা দেখতে পেয়ে সুযোগটা নিলেন শ্রীলঙ্কার ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ ফজল। সেন্টার থেকে বাংলাদেশের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নিলেন। বিপদ বুঝতে পেরে গোলরক্ষক শহিদুল আলম পেছনে সরে এসে হাতের তালু দিয়ে বল পোস্টের ওপর দিয়ে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ। বল জালে, ১-০!
এই গোলের দৃশ্য যতবার রিপ্লেতে দেখবেন গোলকিপার শহিদুল আলম ততবারই আফসোস করবেন-হায় কি করলাম!
পিছিয়ে পড়ার পর গোল শোধের জন্য বাংলাদেশ তেড়েফুঁড়ে উঠে। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণটা বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশ দলের কাছেই ছিল। মাঝমাঠ থেকে বারবার বল শ্রীলঙ্কার রক্ষণভাগ কাঁপিয়ে দেয়। কিন্তু আক্রমণের শেষধাপে এসেই যেন থমকে যায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টা। সুন্দর আক্রমণের শুরুটা হল, কিন্তু শেষ’টা যে হল না! কোন আক্রমণই ফিনিসিং পেল না। ডি বক্সের কোনায় ফাঁকায় বল পেয়েও অধিনায়ক মামুনুল শট মারলেন পোস্টের ওপর দিয়ে! এই ম্যাচে সবচেয়ে গোলের বেশি সুযোগ পেয়েছিলেন একাদশের একমাত্র স্ট্রাইকার শাখায়াত হোসেন রনি। কিন্তু পুরো ম্যাচ জুড়ে তিনি যা করলেন তাতে তাকে এখন ‘মিস মাস্টার’ ডাকা যেতে পারে!
রক্ষণভাগ জমাট রেখে, খেলার জায়গা বিস্তৃত করে শ্রীলঙ্কা ম্যাচের সিংহভাগ সময় যে নিয়ন্ত্রিত ফুটবল খেলে সেটা প্রশংসা পাওয়ার মতোই। তবে এই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় যদি খুঁজতে বলা হয় তবে সবচেয়ে বেশি নম্বর পাবেন শ্রীলঙ্কার গোলকিপার সুজান পেরেইরা। পুরো ম্যাচে আক্রমণে বেশি ছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের শ্রীলঙ্কার একটাই কাজ হয়ে দাড়ায়-বাংলাদেশের আক্রমণ ঠেকানো। আর এই কাজে দারুণ দক্ষতার পরিচয় দেন শ্রীলঙ্কার গোলকিপার পেরেইরা। শ্রীলঙ্কার রক্ষণভাগের শেষধাপে বাধার প্রাচীর হয়ে দাড়ান তিনিই। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল অবিশ্বাস্য কায়দায় লাফিয়ে উঠে ক্লিয়ার করেছেন। বেশিরভাগ সময় তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে গোলপোস্ট সামাল দেয়ার কাজে। কিন্তু একটিবারও কোন ভুলচুক হয়নি।
উল্টো প্রান্তে দাঁড়ানো বাংলাদেশ গোলকিপার শহিদুল আলম শুরুর ১০ মিনিটে মাত্র একটি ভুলই করেন এই ম্যাচে; আর সেই ভুলেই ম্যাচ জিতে নিল শ্রীলঙ্কা।