মক্কায় খেজুরে সাফল্য শাহেদের
মক্কা আল মোকাররমা (সৌদি আরব) থেকে: পবিত্র নগরী মক্কার আল মেসফালার ব্যস্ততম ইব্রাহিম খলিল সড়ক। মাত্র চারশ মিটার দূরত্বেই পবিত্র মসজিদুল হারাম। মহান "আল্লার ঘর" বলে পরিচিত কাবাশরিফ মুখী এ সড়কে দিনে রাতের ব্যস্ততা অভিন্ন। সেখানে খেজুরের দোকানে ক্রেতাদের সামলাতে ব্যস্ত মোঃ শাহেদ (৩৪) ও আরফাজ (২৮)। সম্পর্কে মামা - ভাগ্নে। দিনরাতের পার্থক্য নেই এখানে। দুই পালায় ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে "আজুয়া স্টোর" নামের এই দোকান। দোকানটি মূলত প্রবাসী শাহেদের সাফল্যের এক প্রতীক।
এই খেজুরের ব্যবসা করেই মক্কায় প্রতিষ্ঠিত শাহেদ ও তার পরিবার। খেজুর আরবদের প্রধান খাদ্যের তালিকায়।রমজান মাস থেকে শুরু করে সারা বছর ধরেই রয়েছে খেজুরের চাহিদা। তবে হজের ১৫ দিন আগে থেকে শুরু করে শেষের ২০ দিন পর্যন্ত হাজিদের কাছে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে নানা জাতের খেজুরের।
খেজুরকে আরবিতে তুমুর বলে। জনপ্রিয় খেজুরের মধ্যে রয়েছে আজুয়া, আনবারা, সাগি, সাফাওয়ি, মুসকানি, খালাস, ওয়াসালি, বেরহি, শালাবি, ডেইরি, মাবরুম, ওয়ান্নাহ, সেফরি, সুক্কারি, খুদরি ইত্যাদি। এসব খেজুরের দাম জাত, আকার, মানভেদে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫০ রিয়াল।
কেবল সৌদি আরবের উৎপাদিত খেজুরই নয়, জর্ডান, সিরিয়া, মিশর থেকে শুরু করে খোদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা খেজুরও রয়েছে এই দোকানে।
এর মধ্যে কাঁচা খেজুরের চাহিদাও রয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা আজুয়া খেজুরের। পাশাপাশি চকলেট, নানা জাতের দেশি- বিদেশী বাদাম ও দামী মশলাও বিক্রি হয় এখানে। চট্রগ্রামের ফটিকছড়ি থানার শাহ চৌমুহনী গ্রামের সন্তান শাহেদ। বাবা মৃত নবিদুর রহমান। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে শাহেদ সবার ছোট। প্রবাসী তিন ভাইয়ের সুবাদে ২০০৩ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান শাহেদ। এখন অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতায় পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। নিজে ও ভাগ্নে আরফাজসহ ৬ জন আত্মীয় কাজ করেন এখানে।
শাহেদ বলেন, এই খেজুরের দোকান পাল্টে দিয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। বলতে গেলে প্রবাসে খেজুর বিক্রি করেই সাফল্য এসেছে তার। তবে বিনিময়ে অমানসিক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাদের। বিশেষ করে মওসুমে ১৭/১৮ ঘন্টাই দোকানে ব্যয় করতে হয় তাদের। বিক্রেতাদের চাপ একটু কমে গেলেই নিজেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন নানা জাতের মধ্যে সেরা খেজুর বাছাই ও প্যাকেটজাতের কাজে।
শাহেদ জানান, এই ব্যবসার সাফল্যে দেশ থেকে ভাগ্নে ছাড়াও অপর চার স্বজনকে নিয়ে এসেছেন।
তবে বর্তমানে সৌদি সরকারের নানা ফরমান ও ট্যাক্স আরোপ করায় আগের মতো অর্থ সঞ্চয় করাটা বেশ চ্যালেঞ্জ। কারণ, বছর খানেক ধরে ব্যবসা কমে গেলেও ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বেড়ে গেছে বহুগুণে। আগে মওসুমে দিনে ২৫ হাজার রিয়ালের খেজুর বিক্রি হলেও তা নেমে এসেছে ১৫ হাজার রিয়ালে। পাশাপাশি খেজুরের বাদাম ও মশলা জাতীয় পণ্য বিক্রির ওপর এসেছে বিধি নিষেধ বলে জানালেন তিনি।
রাজকীয় সৌদি সরকার সৌদিকরণ নীতির কারণে বোরকা, মোবাইল,ঘড়ি,স্বর্ণসহ ১০ টির বেশি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রবাসীদের ব্যবসা করার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে ব্যবসা জমিয়ে আনা প্রবাসীরা পড়েছেন বিপাকে। সব মিলিয়ে এখানে এখন টিকে থাকাটাই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন শাহেদ।