মোশাররফকে ছেড়ে মেয়র নাছিরের হাত ধরলেন ছালাম
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। মোশাররফের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছালাম মেয়র নাছিরের সঙ্গে হাত মেলানোয় মোশাররফ শিবিরে দেখা দিয়েছে ভাঙনের সুর। যদিও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের দাবি, আবদুচ ছালাম মেয়র নাছিরের হাত ধরায় তার উপর কোনো প্রভাব পড়বে না ।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেই। এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সে হিসেবে মোশাররফ হোসেনের বাইরে গিয়ে কোন কিছু করা সম্ভব ছিল না ছালামের। এবার মোশাররফ থেকে বের হয়ে যাওয়ায় গণপূর্ত বিভাগের চলমান প্রকল্প গুলো থমকে যাবে কিনা- এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সুত্র মতে, মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে চাপা বিরোধ চলে আসছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের। সে হিসেবে ছালাম মোশাররফের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে মেয়রের সঙ্গে তারও বিরোধ চলতে থাকে। এ বিরোধের জের ধরে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সমন্বয় সভায় উপস্থিত থাকতেন না সিডিএর চেয়ারম্যান ছালাম।
এদিকে গত সোমবার নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের মধ্যস্থতায় (ছালাম- নাছির) দুই নেতা বসেছিলেন এক টেবিলে। সঙ্গে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও।
নগর ভবনে এ বৈঠকের পরে আওয়ামী লীগ ঘরোয়া সমর্থকদের মাঝেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। শহরজুড়ে “টক অব দ্যা টাউনে” পরিণত হয় এ বৈঠক।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তাই মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন জরুরি। আবার চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে সিটি করপোরেশনের মেয়রও চান তাদের মাঝে রাজনৈতিক দূরত্ব কমে আসুক। ফলে সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দূরত্ব ঘুচিয়ে চট্টগ্রামের উন্নয়নে একসঙ্গে পথচলার বার্তা দিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান মো.আবদুচ ছালাম। মেয়র নাছির নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ছালাম একই কমিটির কোষাধ্যক্ষ।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ছালাম আমার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হলেও আমার কাছ থেকে ‘ছালাম’ চলে গেলে আমার কিছুই আসে যায় না। ছালাম আমার অনুসারী হবে এমন কোন কথা নেই। আমরা সবাই শেখ হাসিনার অনুসারী, বঙ্গবন্ধুর অনুসারী।
ছালাম-নাছিরের সঙ্গে হাত মেলানোর প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে তালে মাতাল জাতে ঠিক, এর নাম আওয়ামী লীগ। সুতরাং কে কোন দিকে যাবে সেটা মুখ্য নয়, মূখ্য হলো আওয়ামী লীগ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সভা শেষে মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান হাত ধরাধরি করে সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলে আসছিলেন, সিডিএ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করছে না। এতে নগরীতে জনদুর্ভোগ হচ্ছে বলেও মত ছিল মেয়রের।
সমন্বয়হীনতা নিয়ে গত ২১ জুন দলীয় সভায় নাছির ও ছালামের মধ্যে বাকবিতণ্ডাও হয়। এরপর সিডিএ চেয়ারম্যান ২৪ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমন্বয় সভায়ও অনুপস্থিত থাকেন। পরে আর কোন সমন্বয় সভাতেও উপস্থিত ছিলেন না ছালাম।
তবে সোমবারের সভায় মেয়র দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে কোন সমন্বয়হীনতা ছিল না। আর ছালামের দাবি, মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোন দূরত্বে নেই।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, সামনে নির্বাচন তাই আমাদের ছোটখাট মনোমালিন্যগুলো দূর করা দরকার। প্রধানমন্ত্রীও চান দলীয় মতভেদ দূর করার জন্য। তাই আমিও সানন্দে হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। কারণ চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য তা দরকার।
মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের মন্তব্যের বিষয়ে নাছির বলেন, তিনি মন্ত্রী, তিনি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন। আমি ছালাম ভাইকে সঙ্গে পেয়েছি সেটাই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কোন কথা নেই। তাই আগামী নির্বাচনের পরে ছালাম আমার সঙ্গে না থাকলেও আশ্চর্য হবো না।
আবদুচ ছালাম বলেন, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের কোন সুযোগ নেই। মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবেই আমি সিডিএ চেয়ারম্যান হয়েছি। সুতরাং কে কি বললো সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। ‘যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তাদের মেসেজ দেওয়ার জন্য আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বসেছি।
এ ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সমন্বয় প্রয়োজন। সেটা রাজনীতির ক্ষেত্রে হোক, উন্নয়নের ক্ষেত্রে হোক। দলের মধ্যে কখনো বিভেদ ছিল না। একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়ত থাকতে পারে। এখন সবাই দলকে এগিয়ে নিতে এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে এক সঙ্গে কাজ করবে।