ত্রিমুখী প্রকল্পে এগুচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দরে এখন থেকে শুধু যুক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাবে- বন্দর চেয়ারম্যান
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ বলেন,‘এখন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহরে শুধু যুক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাবে। কখনো নতুন ইকুইপমেন্ট যুক্ত হবে, আবার কখনো লাইটার জেটি বাড়বে, কখনো বে টার্মিনাল কিংবা পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের খবর পাওয়া যাবে।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জুলফিকার আজিজের এই বক্তব্যের প্রমাণ ইতিমধ্যে পাওয়া হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা আগামীর বন্দর বলে খ্যাত বে টার্মিনাল কার্যক্রম গতি পেল। ইপিজেড থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সাগরের উপকূলীয় এলাকায় গড়ে উঠতে যাওয়া বে টার্মিনালের ভূমি বরাদ্দ কার্যক্রম সম্পন্ন হলো। প্রায় তিন বছর ধরে আটকে থাকা প্রকল্পটি এই চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো। শুধু বে টার্মিনাল নয়, ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। ডিপিএম ( সরাসরি সংগ্রহ পদ্ধতি) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর প্রায় ১৮০০ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি। কর্ণফুলী নদীর তীরে চিটাগাং ড্রাইডক ও বোট ক্লাবের মধ্যবর্তী এলাকায় নির্মাণ হতে যাওয়া প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে গিয়ে দেখা যায়, ওমেরা অয়েল কোম্পানি ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বেস ডিপোর মধ্যবর্তী নিচু ভূমিতে নির্মাণ কাজ চলছে। এখানে থাকা স্থাপনাগুলোকে ( মেরিন ফিশারিজ, রেড ক্রিসেন্ট বেইস ক্যাম্প, কাস্টমস, পুলিশ ক্যাম্প) লালদিয়ায় ইনকনট্রেন্ডের পেছনের জায়গায় পুনর্বাসণ করা হবে। সেখানে বন্দরের একটি সার্ভিস জেটি ছাড়াও ৫টি লাইটার জেটি নির্মাণ করা হবে।
জানা যায়, আগামী বছরের শেষ নাগাদ প্রকল্পটি চালু হতে পারে। ২৬ একর জায়গায় গড়ে তোলা টার্মিনালে চারটি জেটি হচ্ছে। এরমধ্যে তিনটি জেটি ( প্রতিটি ২০০ মিটার দীর্ঘ) হবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য এবং একটি হবে ডলফিন জেটি ( ২২০ মিটার দীর্ঘ)।
শুধু পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল আগামী বছরের শেষ নাগাদ চালুর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করা বন্দর ইতিমধ্যে বন্দরের বহি:নোঙরে পণ্যবাহী জাহাজের অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনতে সদরঘাটে ৫টি লাইটার জেটি চালু করেছে। এই ৫টি জেটি বিভিন্ন শিল্পগ্রুপকে ইতিমধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকার ও রড শিল্পের জন্য এই জেটিগুলোকে বরাদ্দ দেয়ায় শিল্পগ্রুপগুলো তাদের পণ্য নিয়ে আসতে পারছে। সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার সরবরাহের জন্য ৫ নম্বর লাইটার জেটি বরাদ্দ পাওয়া কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন,‘ লাইটার জেটিগুলো শিল্পগ্রুপকে বরাদ্দ দেয়ায় বন্দর যেমন আর্থিক সুবিধা পাবে তেমনিভাবে আমরাও দ্রুত আমাদের পণ্য খালাস করতে পারবে। এতে ভোক্তারা লাভবান হবে। পণ্য নিয়ে আর জাহাজগুলোকে বহি:নোঙ্গরে অপেক্ষা করতে হবে না।‘
তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ বলেন, ব্যবসা বান্ধব বন্দর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে আরো ১৫টি লাইটার জেটি করা হবে। এতে পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম দ্রুত হবে।
এদিকে নতুন জেটি ও টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহেও বন্দর এগিয়ে যাচ্ছে। চীন থেকে আসা তিনটি কিউ গ্যান্ট্রি ক্রেন আগামীকাল সোমবার থেকে পুরোদমে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করবে। আগামী ৫ অক্টোবর (শুক্রবার) আসছে আরো তিনটি কিউ গ্যান্ট্রি ক্রেন। এছাড়া আগামী মার্চে আসছে আরো চারটি কিউ গ্যান্ট্রি ক্রেন। এসব ইকুইপমেন্ট বন্দরের বহরে যুক্ত হলে বেড়ে যাবে বন্দরের সক্ষমতা। এবিষয়ে চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন,‘ বন্দরে এখন ইকুইপমেন্ট যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি লাইটার জেটি ও নতুন টার্মিনালের কাজও শুরু হয়েছে। এগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হলে অবশ্যই এর সুফল দেশবাসী পাবে।‘
উল্লেখ্য, দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি হ্যান্ডেল করা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দিন দিন পণ্য পরিবহন বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০১৪ সালে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ২১৯, ২০১৫ সালে ২০ লাখ ২৪ হাজার ২০৭, ২০১৬ সালে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৯ এবং ২০১৭ সালে ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭টি একক কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে। চলতি বছর গত মাস (আগস্ট) পর্যন্ত ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৯৮১ টি একক কনটেইনার হ্যান্ডেল করা হয়।