২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: রহস্য উদঘাটন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাত ধরে
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক এক কালো অধ্যায়। এ হামলার মাধ্যমে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না ষড়যন্ত্রকারীদের, তারা চেয়েছিল দেশের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগকে চিরতরে শেষ করে দিতে।
ভয়াবহ ওই হামলায় শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হয় প্রায় ৪শ’ জন।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরের দিন মতিঝিল থানায় এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা করেন। মামলার পর থেকে শুরু হয় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তদন্তের নামে নাটক। তদন্তের শুরুর দিকে নাটক সাজানো হয় শৈবাল সাহা পার্থকে নিয়ে। কিন্তু তদন্তের নামে এ প্রহসন নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক।
তদন্তে সূত্রে আরও জানা গেছে, ঘটনার ১০ মাসের মাথায় ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বীরকোট গ্রাম থেকে জজ মিয়া নামের এক যুবককে আটক করে সিআইডি। ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে জজ মিয়ার কাছ থেকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করে তদন্তের নামে মিথ্যা গল্প প্রচার করেন মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ ও বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন। আর এ সাজানো গল্পের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।
তবে ২০০৬ সালে সাজানো এ নাটকের গল্প ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন।
তিনি ওই সময় সাংবাদিকদের বলেন, জজ মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই সিআইডি তার পরিবারকে মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিয়ে আসছিল। জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলা মামলার রাজসাক্ষী করার সিআইডির পরিকল্পনার কথাও তিনি ফাঁস করে দেন।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হতে শুরু করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে তদন্তের উদ্যোগ নেয় মামলার।
সেই তদন্তে বের হয়ে আসে বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সহযোগিতায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি)-এর জঙ্গিরা এ হামলা করে।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আদালতে দু’টি অভিযোগপত্র জমা দেন। এ অভিযোগপত্রে পিন্টুসহ ২২ জঙ্গিকে আসামি করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াত সেক্রেটারী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়।