রাস্তায় গান গেয়ে ৬০ বছর
রাস্তায় রাস্তায় দোতারা বাজিয়ে গান গেয়ে কেটে গেছে ৬০ বছর। এখন সামছুল ইসলামের বয়স ৭৩। তারপরেও থেমে নেই তার গান। অভাবে নয়, গান গাওয়া তার স্বভাব। গান গেয়েই মরতে চান তিনি। তবে বয়সের ভারে কণ্ঠ নেই আগের মতো। তবুও গেয়ে যাচ্ছেন গান। সংসারে নেই কোনো অভাব। কিন্তু গানের নেশা তাকে ঘরমুখী করতে পারেনি। বিভিন্ন হাট, বাজর, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনে দোতারা বাজিয়ে গান গেয়ে অর্থ উপার্জন করা তার নেশা এবং পেশা।
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্যাপুর গ্রামের বাসিন্দা সামছুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় শুক্রবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শহরের সাতমাথা এলাকায়। তিনি জানান, ১৯৫৮ কিংবা ৫৯ সালের কথা, ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় পার্শ্ববর্তী হুদাবালা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের কণ্ঠে গান শুনে মুগ্ধ হন তিনি। এরপর থেকেই লেখাপড়া ছেড়ে তার শিষ্য হয়ে যান।
জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে ঘুরতে থাকেন বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে। দুজনে গান গেয়ে যা আয় হতো তার একটি অংশ পেতেন সামছুল ইসলাম। ৫-৭ বছর পর ঘর ছাড়া সামছুল ইসলামকে ঘরমুখী করতে বিয়ে দেয়া হয় পারিবারিক ভাবে। বিয়ের পর দিনই নববধূকে রেখে ওস্তাদ জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে দোতারা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সামছুল ইসলাম। ১৫-২০ দিন পর বাড়ি ফিরে জানতে পারেন রাগে ক্ষোভে বউ চলে গেছে বাবার বাড়ি গাইবান্ধার তুলশীঘাটে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর ফেরাতে পারেননি ঘরে। কয়েক বছর পর ফের বিয়ে করলেও গান ছাড়েননি তিনি।
সামছুল ইসলাম জানান, দোতারা নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলা ঘুরেছেন তিনি। কখনো চলন্ত ট্রেনে, আবার কখনো রেল স্টেশনে, বিভিন্ন হাটবাজারে গান গেয়ে কেটে গেছে তার ৬০ বছর। গান শোনার পর উপস্থিত লোকজন ২-৪ টাকা করে দেয়। তা দিয়েই চলে যায় তার জীবন। রাত কাটে রেলস্টেশন কিংবা অন্যের বাড়িতে।
তিনি জানান, রাস্তা-ঘাট এবং হাট-বাজারে গান গাওয়া বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা পছন্দ করে না। কিন্তু এসব গান মানুষের মনের কথা বলে। অপসংস্কৃতিতে চাপা পড়ে যাচ্ছে মারফতি, মুর্শিদি, পল্লীগীতি, ভাওইয়া, লালনগীতি গান। তারপরেও এখনো অনেকেই গানের অনুষ্ঠান করার জন্য তাকে ডেকে নিয়ে যান। মানুষকে গান শুনিয়ে যে টাকা পান তা দিয়েই চলে সংসার। সংসারে তার নেই কোনো অভাব। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। তবে ছেলে বিয়ে করে বাড়িতে থাকলেও মা-বাবার খবর রাখে না। এতে দুঃখ নেই সামছুল ইসলামের। মানুষকে গান শুনিয়ে আয় করা টাকা পাঠিয়ে দেন স্ত্রীর কাছে। তাতেই ভালোভাবে চলে যায় সংসার।