আদালতে হাজিরা দিতে আসামিদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ
ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে মামলার হাজিরা দিতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন আসামিরা।
ফৌজদারী মামলা বিচারের ক্ষেত্রে মামলার প্রতিটি তারিখে আদালতে হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু হাজিরা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রায়ের আগেই সাজা পেয়ে যাচ্ছেন আসামিরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) পুরান ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঘুরে দেখা গেছে একটি ছাপড়া অস্থায়ী টিনশেডে বসে বিচার কাজ করছেন বিচারকরা। এজলাসের সামনে মাত্র ছয় ফুটের একটি বারান্দা।
অল্প এ জায়গায় সিজেএমসহ ৭টি আদালত, ৭টি বিচারকের খাস কামরা, স্টেনোগ্রাফার, প্রশাসনিক কর্মকর্তার দপ্তর, নাজির, নকলখানা, দুর্নীতি দমন কমিশনের জিআর সেকশন, মটরযান সেকশনসহ অনেক অফিস।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে থাকা সাভার, আশুলিয়া, ধামরায়, উত্তর কেরানীগঞ্জ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানার মামলার বিচার হয় এ আদালতে।
নতুন ভবন নির্মানের জন্য বছর দুয়েক আগে পুরান ভবন ছেড়ে টিনশেডে সিজেএম ভবন স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে আসামিদের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু মাস দুয়েক থেকে এ দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে ওঠে।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাচিত সদস্য মোস্তফা সরোয়ার মুরাদ বার্তা২৪ কে বলেন, দু হাতের কনুই দিয়ে ঠেলে বহু কষ্টে এজলাসে ঢুকেছি। এতটুকু বারান্দায় শতশত আসামি। কোন বয়স্ক কিংবা মহিলা আইনজীবীর পক্ষে এসব আদালতে প্রবেশ করা অসম্ভব। আর প্রচণ্ড গরম আর ঠেলাঠেলিতে আসামিরাও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
আদালতে মামলার শুনানিতে আসা আইনজীবী সাজিয়া ইয়াসমিন লিজা বলেন, ভিড় এড়াতে আদালত শুরুর বহু আগেই এজলাসে চলে এসেছি। শুনানি শেষ আরেক কোর্টে যাব। কিন্তু ভিড়ের জন্য বের হতে পারছি না। সব শুনানি শেষে ভিড় একটু পাতলা হলে তারপর বের হবো।
মামলায় হাজিরা দিতে আসা ষাটোর্ধ আসামি হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ভিড়ের মধ্যে বুকে এমন চাপ খেয়েছি মনে হচ্ছে দম বন্ধ যাবে। যে কোন সময় যে কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
মামলার শুনানির সময় সংশ্লিস্ট আদালতে বিচারক আতিকুর রহমান বলেন, আমরা সিজেএমের নির্দেশে প্রত্যেক মামলার আসামিদের হাজিরা গ্রহণ করি। এতে আসামি ও আইনজীবীদের কষ্ট হলেও আমাদের কিছুই করার নেই।
সংশ্লিস্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল বার্তা২৪কে বলেন, থানার মামলাগুলোতে আসামিরা জিআর সেকশনে হাজিরা দিলে পুলিশ আসামি দেখে হাজিরা লিখে রাখতো। সেখানে থেকেই আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হতো। এজলাস পর্যন্ত আসতে হতো না। কিন্তু মাস দুয়েক আগে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে খবর আসে পুলিশের কাছে হাজিরার সুযোগে অনেক আসামি আদালতে না এসে কিংবা অন্য কাউকে দিয়ে প্রক্সি হাজিরা দিচ্ছে। এ সংবাদের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রত্যেক আসামির হাজিরা ডাকার নির্দেশ দেন।