তফসিলের আগে নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ চূড়ান্ত করতে চায় ইসি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় তফসিল ঘোষণার আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন। এ লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণার আগে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ১০৩টি কাজ গুছিয়ে রাখছে ইসি।
জানা গেছে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার সময় ধরেই নির্বাচনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে কমিশন। তফসিল ঘোষণার আগে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১০৩টি কাজ চূড়ান্ত করা হবে। এছাড়াও তফসিলের পর থাকবে ৯৯টি কাজ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগাম প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে মনোনয়ন ফরমসহ মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই সংক্রান্ত প্রাথমিক নির্বাচনী ফরম, প্যাকেট মূদ্রণের কাজ সম্পন্ন করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে। অন্যান্য ফরম ও প্যাকেট মূদ্রণেরে কাজ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শেষ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোটকেন্দ্রের জন্য প্রতিষ্ঠান বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা, ভোট কক্ষের সংখ্যা এবং ভোটার সংখ্যার তথ্য সম্বলিত বিবরণী প্রস্তুতের কাজ চলছে।
এছাড়া ভোটকেন্দ্রে ব্যবহৃত ১০ ধরেনের নির্বাচনী সামগ্রীর মধ্যে স্ট্যাম্প প্যাড, ব্যালট বাক্সের লক ও লালগালা বাদে বাকিগুলো পাওয়া গেছে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এগুলোও পাওয়া যাবে। এছাড়া বিদ্যমান ব্যালট বাক্স ও লক মজুদ এবং সংরক্ষণের বিষয়ে তথ্য ও গৃহীত পদক্ষেপ জানাতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভ্যাটের আগের কাজগুলো এগিয়ে নেয়া পাশাপাশি ভোটের পরের কাজগুলোর বিষয়েও আগাম প্রস্তুতি রাখতে চায় কমিশন। এই লক্ষ্যে ভোটের দিন ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশেনের পরের দিন কেন্দ্রভিত্তিক ফল একীভূত করা হবে। নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন শেষে ভোটের দুই দিন পর নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ এবং তিন দিন পর সংসদ সচিবালয়ে তা পাঠানোর কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। ভোট সংক্রান্ত ইসি সচিবালয়ের ‘একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে (প্রাক নির্বাচন ও তফসিল পূর্ববর্তী) প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা’ এবং ‘ (তফসিল ঘোষণার পর) নির্বাচন পরিচালনার জন্য কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সূচি’ সংক্রান্ত চেক লিস্ট ইতোমধ্যে কমিশন অনুমোদন করেছে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভোটের তফসিলের আগে মাঠ পর্যায়ে মনোনয়নপত্র, ভোটার তালিকার সিডিসহ সব ধরনের সামগ্রি-ম্যানুয়েল রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট করতে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সব কিছু প্রস্তুত থাকবে। ইতোমধ্যে দুটি কর্মপরিকল্পনা ধরে কাজ গুছিয়ে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, তফসিল ঘোষণার আগে ২২টি খাতে ১০৩টি কাজ সাজানো হয়েছে। যাতে করে তফসিল ঘোষণার পরই সব কাজ দ্রুততম সময়ে করা সম্ভব হয়। নির্ধারিত সময়ের এসব কাজের অধিকাংশই সম্পন্ন হয়েছে; আগাম প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো ৩১ অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকবে।
জানা গেছে, পরিকল্পনার ২২ খাতে ১০৩ কাজের জন্য হাতে রয়েছে দুই সপ্তাহ। ৩০ অক্টোবর তিনশ নির্বাচনী এলাকার জিআইএস প্রস্তুত ও মানচিত্রসহ পুস্তিকা প্রস্তুত। প্রার্থীদের জন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত। ৩১ অক্টোবর ছবিসহ ও ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি মুদ্রণ। ১০ নভেম্বর সম্পুরক ভোটার তালিকার সিডি রেজিস্ট্রেশন অফিসারকে সরবরাহ। ২০ থেকে ৩১ অক্টোবর বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের জন্য হেল্পডেস্ক করতে মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ; নিয়মিত সংবাদ অবলোকন করে কমিশনকে অবহিত করতে টিম গঠন; সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা; সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের জন্য কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পর্্যায়ে সভা পরিকল্পনা।
এছাড়াও ২৫ অক্টোবর নির্বাচনের ব্যবহৃত সব ফরম, প্যাকেট মুদ্রণ সম্পন্ন। ব্যালট বাক্স, লকসহ নির্বাচন দ্রব্যাদির মজুদ পরীক্ষা করে জেলা নির্বাচন অফিসারদের অবহিত। ৩০ অক্টোবর নোনয়নপত্র দাখিল সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন ফরম (ফরম-১, ফরম ২, ফরম-৩), প্যাক্টেসহ অন্যান্য দ্রবাদি মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ। নির্বাচনী দ্রব্য-স্ট্যাম্প প্যাড, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, অফিসিয়াল সিল, গালা ইত্যাদি সংগ্রহ। ২ নভেম্বর ভোটের জন্য আগে সব ব্যালট বাক্স পুনরায় যাচাই ও ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা। ৫ নভেম্বর ম্যানুয়েল মুদ্রণ শেষ করে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানো।
৩১ অক্টোবর মাঠ পর্যায়ে থেকে ভোটকেন্দ্রের তালিকা কমিশনের অনুমোদনের জন্য নির্দেশনা (তফসিল ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে পাঠাতে হবে)। ২৩ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর বিভিন্ন প্রকার ম্যানুয়েল ও নির্দেশিকা মুদ্রণ; ভোটের ফল প্রদর্শন, প্রচার, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন ও যন্ত্রপাতি সংযোজন (ভোটের ১৫ দিন আগে)। ২২ থেকে ২৫ অক্টোবর আন্ত: মন্ত্রণালয় বৈঠক -ঋণখেলাপি সংগ্রহ তথ্য সংগ্রহ, ভোটকেন্দ্র থেকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ভোট গণনার বিবরণী, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি গঠনসহ সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি।
১৭ থেকে ২৫ অক্টোবর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রাথমিক প্যানেল প্রস্তুতে নীতিমালা উপস্থাপন; প্যানেল প্রস্তুতে কর্মকর্তা-কর্মচারির তালিকা সংগ্রহে নির্দেশনা; তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা প্যানেল চূড়ান্ত করবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের শূন্যপদ পূরণে জনপ্রশাসনকে অনুরোধ; সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে এবং অফিস সময়ের পরে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা। ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ অনুসারে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নির্ধারণ করে রিটার্নিং অফিসারে কাছে তথ্য সংগ্রহ; ভোটের ১৫ দিন আগে নিয়োগ চূড়ান্ত ও প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত নির্দেশনা।
১৬ থেকে ৩১ অক্টোবর আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক প্রস্তাবনা ও সভার পরিকল্পনা; বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা পাঠানো সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন (তফসিল ঘোষণার পর কার্যক্রম গ্রহণ)। জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পরিপত্র জারির জন্য প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ:আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কাঙ্খিত পর্যায়ে রাখতে নির্দেশনা প্রস্তাব উপস্থাপন।
অক্টোবরের মধ্যে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ; ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা; আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি ও জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রকিল্পনা প্রণয়ন; প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রেরণ; ভোট নিয়ে নানা তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার সংক্রান্ত প্রস্তুতি।
২০ থেকে ৩০ অক্টোবর দল ও দলীয় প্রধানদের প্রচারণা নিয়ে নীতিমালা জারি। ২৫ থেকে ৩০ অক্টোবর ইভিএম ব্যবহার পাইলটিং করার বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবনা উপস্থাপন; ইভিএম ব্যবহার উপযোগী করা. প্রচারণা; ইভিএম মকভোটিং সংক্রান্ত পরিকল্পনা; ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ফল সংগ্রহ ও পরিস্থিতি প্রতিবেদন। ৩০০ আসনে একটি করে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠনের প্রস্তুতি। প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে মোবাইলে পরিস্থিতি প্রতিবেদন প্রস্তুতি।
টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সুসংহতকরণ, বেসরকারি প্রাথমিক ফল প্রচার, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সফটওয়্যার প্রস্তুত, কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশেসহ সার্বিক প্রযুক্তিগত প্রস্তুকি ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নেওয়ার কর্মপরিকল্পনা রয়েছে।
উল্লেখ্য আগামী ৩০ অক্টোর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নভেম্বরের প্রধমার্ধে তফসিল ও ডিসেম্বরের শেষভাগে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করছে ইসি।