৬১ রকমের আচারের কারিগর মকবুল
আচার দেখলে জিভে জল আসে না, এমন মানুষ পাওয়া ভার। সেই আচারের কারিগর মো: মকবুল হোসেন। সিলেটে মকবুলের আচারের বেশ সুনাম। মকবুলের হাতের তৈরি ব্যতিক্রমি সব আচার কেবল সিলেট নয়, সাত সমুদ্রের ওপারেও যাচ্ছে।
৬১ রকমের আচার তৈরি করতে পারেন মকবুল। নসিমন-করিমনের আদলে তৈরি একটি গাড়িতে করে সিলেট শহরে আচার বিক্রি করেন তিনি। তার আচারের নাম দিয়েছেন ‘মীম ফুডস প্রডাক্ট‘।
মকবুল হোসেনের বাড়ি বরিশাল জেলার গৌরনদী এলাকায়। মকবুল জানান, নয় বছর বয়সেই ঢাকায় চলে যান তিনি। জ্যোতিষ পাল নামক এক কারিগরের কাছ থেকে টুকটাক আচার তৈরির কাজ শেখেন। যিনি বোম্বে কাশ্মিরি নামক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। জ্যোতিষ দেশের বিভিন্ন জেলায় মেলায় আচার বিক্রি করতে যেতেন। সঙ্গে মকবুলকেও নিয়ে যেতেন।
১৯৯৬ সালে সিলেটে একটি মেলায় আসেন মকবুল। দেখলেন ঐ মেলায় আচারের বিক্রি বেশ ভালো। ঠিক করলেন সিলেটে ব্যবসা করবেন। ২০০১ সালে ছুটে আসলেন সিলেটে। কিনলেন ছোট্ট একটি ভ্যান। শুরু হয় তার আচার বিক্রির সংগ্রামী জীবন।
মকবুল জানান, ২০০৯ সালে সেই ভ্যানগাড়িটি হঠাৎ ভেঙে পড়ে। জিন্দাবাজারের কিছু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় কাউন্সিলর একটি গাড়ির জন্য কিছু টাকা বরাদ্দ দেন। সেই টাকা দিয়ে ‘নসিমন-করিমন’ এর আদলে একটি গাড়ি তৈরি করেন।
গ্লাস দিয়ে সেই গাড়িটিকে পরিবেশসম্মত ও ধুলাবালি থেকে নিরাপদ গাড়িতে রূপ দেন। এরপর থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন মকবুল। দিনের বেলা কাটে বাসায় আচার তৈরি করে। আর রাতে জিন্দাবাজারের জিন্দাপীরের মাজারের বিপরীতে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
রাতের বেলা কেন জানতে চাইলে মকবুল বলেন, ‘দিনের বেলা কোন মার্কেটের সামনে দাড়াঁতে দেয় না। এ জন্য রাতে বের হই। এছাড়া অনেক বিদেশি কাস্টমার ফোন দিয়ে বাসা থেকেই আচার সংগ্রহ করে নিয়ে যান।’
মকবুল বার্তা২৪.কমকে জানান, তিনি ৬১ রকমের আচার তৈরি করতে পারেন। এসব আচারের নাম শুনলেই অনেকের জিভে জলে এসে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ত্রিফলা, লটকন, মিষ্টি খেজুর, বয়রা, হরিতকী, আল বকেরা, আদা লেবু, কমলা, পেয়ারা, বরই, চলতা, মিষ্টি আম, টক আম, পাকা আম ও টক-ঝাল আমের আচার, টক তেতুল, সাতকরা, নাগা মরিচ, কাঁচা মরিচ, আমলকি ইত্যাদি।
এছাড়াও আদা-রসুন, কদবেল, মিষ্টি জলপাই আচার, বরই, তেঁতুল, বরিশালের আমড়া, বারো জাতের মিক্স, লেবৌরই, পেঁপে, ডেফল, আনারস, কামরাঙ্গা, শুকনা মরিচ, মন গোটা, তৈকর, গাজর, করল্লা, কাঁঠাল, আপেল, আঙ্গুর, বেগুন, নারেকেলের, তালের ও বেলের আচার অন্যতম।
মকবুলের আচারের স্বাদই আলাদা বলে মন্তব্য করেন স্কুল শিক্ষিকা সায়রা বেগম। তিনি বলেন, ‘খেলেই মনে হয়, খুব যত্ন করে বানানো। তার কাছে সাতকরার আচারটারই একটু অন্যরকম স্বাদের।’
মকবুল হোসেন জানান, তিনি বর্তমানে সিলেট নগরীর শেখাঘাট ইঙ্গুলাল রোডে বসবাস করছেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে তার। বড় মেয়ে মীম মদন মোহন কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়ছে। আচার বিক্রি করে সংসার বেশ ভালো যাচ্ছে বলে জানান তিনি।