বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হচ্ছে কুষ্টিয়া শহর বাইপাস



এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হচ্ছে কুষ্টিয়া শহর বাইপাস। ছবি: বার্তা২৪.কম

বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হচ্ছে কুষ্টিয়া শহর বাইপাস। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কুষ্টিয়া শহর। কুষ্টিয়া শহরকে নিরাপদ রাখতেই ব্যস্ততম সড়কের বিকল্প বাইপাস সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যদিও এটি কুষ্টিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল।

জেলা সদরে বাইপাস সড়ক না থাকায় সব যানবাহনই মজমপুর গেটের উপর দিয়ে চলাচল করছে। এর ফলে শহরে প্রায় প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঘটছে অনেক প্রাণহানির ঘটনা।

মজমপুর রেলগেটে ট্রেন চলাচলের সময় গেট বন্ধ থাকলে যানজট চরম আকার ধারণ করে। শহরতলী বটতৈল মোড় থেকে শুরু হয়েছে বিসিক শিল্পনগরী, বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড, সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস, বিএটিবির কারখানা, চৌড়হাস মোড় ও বাজার, মুকুল সংঘ স্কুল, প্রতীতি বিদ্যালয়, স্টেডিয়াম কাস্টমস মোড়, বিআরবি হাসপাতাল, উপজেলা মোড়, এলজিইডি অফিস, ডিসি কোর্ট, সাদ্দাম বাজার মোড়, সার্কিট হাউজ, জেলা স্কুলসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

এছাড়াও ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-রাজশাহী একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। যা কুষ্টিয়া শহরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। এ মহাসড়কে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। মংলা বন্দর চালু হওয়ার পর থেকে আরও বেশি চাপ বাড়ে এ সড়কে। যার ফলে শহরে প্রতিনিয়তই যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গেল বছরে শতাধিক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে।

এছাড়া মজমপুর রেলগেটে ট্রেন চলাচলের সময় গেট বন্ধ থাকায় যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করে। তবুও কোনো সঠিক পথ পায়নি শহরবাসী।

বিএনপি সরকারের আমলে বটতৈল এলাকায় এই বাইপাস সড়কের উদ্বোধন করা হয়। তারপরও হয়নি কিছু কাজ। তবে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর ৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুষ্টিয়া শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে মনিকো লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

আগামী ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বাইপাস সড়কের উদ্বোধন করবেন।

বাইপাসটি খুলে দেয়া হলে এ অঞ্চলের সড়ক ব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা হবে। সাড়ে ২২ লাখ মানুষের স্বপ্নের বাইপাস সড়ক দিয়ে এ মাস থেকে গাড়ি চলবে জেনে আনন্দিত জেলাবাসী।

সড়ক ও জনপথ অফিস সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সব কাজ শেষ হয়েছে। দুই প্রান্তে সড়ক বর্ধিতকরণ ছাড়াও গোল চত্বর নির্মাণের কাজও শেষ।

এতে ছোট বড় মিলিয়ে ২৩ সেতু ও কালভার্ট এবং একটি রেল ওভারপাস রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ সড়টি নির্মাণের ফলে এলাকার চেহারা বদলে গেছে। সড়কের দুই পাসে গড়ে উঠছে নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান। এ সড়ক ঘিরে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ সড়কে অনেকেই বিকেলে ঘুরতে আসে। সড়কের পাশে অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, বাইপাস সড়কের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এখন শুধু খুলে দেয়ার অপেক্ষা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়কটি উদ্বোধন করবেন। সড়কটি খুলে দেওয়া হলে শহরে গাড়ির চাপ যেমন কমবে, তেমনি কমে যাবে দুর্ঘটনা। সড়কের দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন করতে গাছও লাগানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুষ্টিয়া শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০০৫ সাল থেকে বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় তা আটকে যায়। পরে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ফের শুরু হয় অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। নানা অনিশ্চয়তার পর শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে আলোর মুখ দেখতে পায় প্রকল্পটি। এরপর দ্রুতগতিতে বাইপাস সড়ক নির্মাণকাজ এগিয়ে যায়। প্রকল্পের ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্তের ডাবল লেন বিশিষ্ট প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাইপাস সড়ক, একটি পিসি গার্ডার সেতু ও ২১টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

এদিকে, সড়কটি চালু হলে জেলার আর্থ-সামাজিক চিত্র বদলে যাবে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা কুষ্টিয়া। উর্বর কৃষিজমি এ জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলেও গত তিন দশকে এখানে গড়ে উঠেছে নানামুখী শিল্প। তবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে জেলাটি দীর্ঘদিন পিছিয়ে ছিল।

বিশেষ করে শহরের উপর দিয়ে যাওয়া মহাসড়কটি নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। কারণ সড়কটিতে যানজট ও দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ছিল নিত্য ঘটনা। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই জেলাবাসীর দাবি ছিল, একটি শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণের। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই বাস্তবায়িত হয়েছে শহর বাইপাস সড়ক।

কুষ্টিয়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহবুল আলম বার্তা২৪.কমকে জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগের মহাসড়কটি কুষ্টিয়া শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় এখানে নানামুখী বিড়ম্বনা ও যানজট ছিল নিত্য ঘটনা। তাছাড়া দুর্ঘটনায় প্রাণহানির চিত্রও ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে বাইপাস সড়কটি খুলে দেয়া হলে সব বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবে শহরবাসী।

কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, কুষ্টিয়া শহর বাইপাস বহু আগেই নির্মাণের প্রয়োজন ছিল। এখন এ সড়কটি বাস্তবায়নে জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। এই বাইপাস সড়ক নির্মাণের ফলে কুষ্টিয়া শহরের উপর চাপ কমবে।

তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিক উন্মোচিত হবে। পরিবর্তন আসবে এখানকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে। ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন হবে। সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে কুষ্টিয়ার যোগাযোগের নতুন মাত্রা তৈরি হবে।

   

তীব্র তাপপ্রবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটির সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন ছুটি কাটিয়ে আগামী রোববার (২১ এপ্রিল) খুলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এরই মধ্যে দেশের তাপমাত্রা অসহ্য অবস্থায় পৌঁছানোয় কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও ৭ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করছে প্রশাসন। এর মধ্যে স্কুল কলেজ খুললে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আগামী ৭ দিনের জন্য শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, এ বছর শিখন ঘাটতি পূরণে মাধ্যমিকে ১৫ দিন ছুটি কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রমজানের শুরুতে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অন্যদিকে, রমজানের প্রথম ১০ দিন ক্লাস চালু ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একইভাবে সব কলেজ ও মাদরাসায়ও ছুটি কমিয়ে রমজানের শুরুর দিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ক্লাস হয়। ছুটি শেষে রোববার থেকে পুরোদমে চালু হচ্ছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

 

;

বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার বাতাসে নেই স্বস্তির খবর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। কয়েক দিনের তীব্র গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ায় ঢাকার বাতাস আবারও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, ১২১ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে মেগাসিটি ঢাকা। আজ ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। গতকাল শুক্রবারও ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ছিল।

এদিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ১৭৮ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি শহর। এ ছাড়া ১৭৩ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই, ১৬৩ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, এরপর নেপালের কাঠমান্ডু ১৬২ স্কোর নিয়ে আছে চতুর্থ স্থানে। ১৫৮ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাই শহর।

একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।

 

;

শসার দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় মানিকগঞ্জের কৃষকেরা



খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিগুলো এখন সবুজ সমারোহে ভরপুর। ধানের পাশাপাশি সবজি চাষাবাদে এখন ব্যস্ত কৃষক। জমিতে বপন করা প্রতিটি শসা গাছের ডগায় ডগায় ঝুলছে ছোট বড় শসা। ২/১ দিন পর পর জমি থেকে শসা সংগ্রহ করছে সবজি চাষিরা।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। জমিতে বপন করা শসা গাছের যত্ন নিতে ভর দুপুরেও শসা ক্ষেতে ব্যস্ত কৃষকেরা। জমিতে বপন করা গাছের ফলন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। এর পাশাপাশি কীটনাশকসহ ভিটামিন প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।


আশানুরূপ ফলনের পরও বাজারদর নিয়ে হতাশায় জেলার সবজি চাষিরা। কয়েকদিন আগেও প্রায় ১০০ টাকার কাছাকাছি ছিল প্রতি কেজি শসার দাম। তবে সপ্তাহ দু’য়েক সময় গড়ানোর আগেই শসার দাম নেমে এসেছে ৫০ টাকার নিচে। দ্রুত গতিতে শসার দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় মানিকগঞ্জের সবজি চাষিরা।

রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অনুকূল আবহাওয়া আর বাম্পার ফলনের কারণে দিনকে দিন মানিকগঞ্জে বেড়ে চলেছে শসাসহ নানা প্রকারের সবজির চাষাবাদ। তবে সার, কীটনাশক, বীজসহ শ্রমিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবজির দাম বাড়েনি বলে অভিযোগ সবজি চাষিদের।

মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলাতেই কম-বেশি আবাদ হয় সবজির। তবে জেলার সাটুরিয়া, সিংগাইর এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলাতে সবজি, বিশেষ করে শসার আবাদ হয়েছে বেশি এলাকায়। প্রথম দিকে শসার দাম বেশি হলেও আগামীর দিনগুলোতে শসার দর-দাম নিয়ে চিন্তিত কৃষকেরা।


মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাহেবপাড়া এলাকার সবজি চাষি মো. নয়া মিয়া বলেন, এক বিঘা জমিতে শসা আবাদের জন্য জমি তৈরি, বীজ বপন, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।

কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি শসা পাইকারি হিসেবে ৮৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি শসা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। বাজারদর এই গতিতে কমতে থাকলে শসা চাষে নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আনোয়ার হোসেন নামের আরেক শসা চাষি বলেন, যারা আগাম শসার আবাদ করেছে তারা দামে শসা বিক্রি করতে পেরেছিল। এখনকার বাজারদর যা আছে তাতে কোনোরকমে চালানো যাবে। কিন্তু দরপতন আরও হলে লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।

মোস্তফা হোসেন নামের এক বৃদ্ধ সবজি চাষি বলেন, বাজারে গেলে সবজির দাম হাতের নাগালের বাইরে মনে হয়। কিন্তু এই সবজি চাষাবাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর শ্রমিকের বাজারদর যে হারে বেড়েছে সেই তুলনায় সবজির দাম অনেক কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।


মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী রবিউল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ১১৯১ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। সবজির আবাদ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সবজি আবাদের পরিমাণ আরও বাড়বে।

আলাদাভাবে শসা আবাদের জমির পরিমাণের তথ্য এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। তবে জেলায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। শসাসহ বিভিন্ন সবজি চাষে নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে সহায়তার জন্য কৃষি বিভাগের লোকজন কাজ করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

;

‘প্রচণ্ড গরমেও আমরা আগুনের কাছে বন্দি’



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রচণ্ড গরমে যখন মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছে, ঠিক তখন তাদের আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে গরমকে উপেক্ষা করে কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাদের বয়স প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ছুঁই ছুঁই। কেউ কেউ পড়েছেন ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত, আবার কেউ কেউ টেন-ফেল। শেষমেশ তাদের জায়গা হয়েছে মিষ্টির কারখানার আগুনের চুলার পাশে। সমস্যা একটাই অভাব। যার কারণে আজ তারা আগুনের কাছে বন্দি অনেকটাই!

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) তালার পাটকেলঘাটা ভাগ্যকুল মিষ্টি কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে প্রথমে ঢুকতেই দেখা যায় দাউ-দাউ করে জ্বলছে বড়-বড় চুলা। চুলার ওপরে বসানো কড়াই আর তার মধ্যে আগুনের জ্বালের মধ্য দিয়ে ফুটছে দুধ। চুলার পাশে দাঁড়িয়ে সেই দুধ নাড়া দিচ্ছে অভিজিত গুড্ডুর মতো ছেলেরা।

চুলার পাশে একটু যেতেই মনে হলো আগুনের হলকা গায়ের ওপরে এসে পড়ল। মনে হচ্ছে আগুনের তাপে গায়ের লোমগুলো যেন পুড়ে যাচ্ছে। একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ আর অন্যদিকে চুলার আগুন। যেখানে মানুষ এক তাপদাহ সহ্য করতে নাজেহাল আর সেখানে তারা একে একে দুই তাপদাহের সঙ্গে লড়াই করছে। প্রচণ্ড এই তাপে যখন মানুষ নাজেহাল তখন চুলার পাশে দাঁড়িয়ে তারা ছোট গেঞ্জি গায়ে দিয়ে কাজ করছে।


তাদের একজন চুলায় দুধ জ্বাল দিতে থাকা অভিজিত মন্ডল গুড্ডু বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে আমরা আগুনের কাছে বন্দি। শুধু অভাবের কারণে। আমরা এখানে টাকার জন্য আগুনের সাথে লড়াই করছি। এই প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে আগুনের কাছে গেলে মনে হয় জীবন বের হয়ে গেল। এতো তাপ সহ্য করে আছি শুধুমাত্র টাকার জন্য। কারণ বাড়িতে বাবা প্যারালাইজড। অভাবের কারণে সেই ক্লাস ফাইভ থেকে বাইরে বের হয়ে পড়েছি। সেই থেকে আগুনের সাথে লড়াই। আগুনের পাশে থেকে-থেকে বেঁচে থেকেও শরীরটা পুড়ে গেছে। পুড়তে-পুড়তে এই শরীরে আগুন দিলেও আর পুড়বে না।

পাশের চুলায় দুধ ঢালতে থাকা অপু মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, দিনেরাতে মিলে মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুম হয়। বাকি ১৮ ঘণ্টা চুলার আগুনের পাশে থেকে কাজ করতে হয়। সকাল ১১টায় উঠে চুলা ধরিয়ে দুধ জ্বাল দিয়ে কাজ করতে করতে দুপুর ২টায় খেয়েদেয়ে একটু রেস্ট, তারপর আবার কাজ শুরু করে রাতে খেয়ে একটানা কাজ করে শেষ ভোর ৫ টা। এভাবে ঝড়, বৃষ্টি, গরম, বন্যা সবকিছু কাটছে আগুনের সাথে।

মিষ্টি গোল করতে থাকা বাঁধন রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা প্রায় ২০-৩০ জন ছেলে এখানে কাজ করি। প্রায় সবার বয়স ১৮, ১৯, ২০ বছর ছুঁই ছুঁই। টাকার জন্য আমরা সবাই এখানে কাজ করছি। এটাই সত্যি যে টাকা হলে মানুষ সব জায়গাতে আটকায়। আমরা যেমন টাকার জন্য আগুনের কাছে আটকে গেছি। এটাই কপাল। এ দেহ আগুনে পুড়ে ছাই।

;