স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে!
সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ছয় লেনের কালনা সেতুর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর)। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সকাল ১০টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
কালনা সেতু এখন আর কথার কথা বা কল্পনা নয়, সত্যিই নির্মাণ হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চলের মধুমতি নদীর কালনা ফেরিঘাটে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এই সেতুর নির্মাণ কাজের তদারকি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলে নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে কালনা ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর না হলেও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ কালনা ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় পাশ করে। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এরপর কেটে গেল আরও চারটি বছর। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হল।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ছয় লেনের এই সেতুটি হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুত গতির এবং দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক হবে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। সেতুটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় হবে ৯৫৯ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হবে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আব্দুল মোমেন লি. যৌথভাবে এই সেতুটি নির্মাণ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কালনা ফেরিঘাটের দক্ষিণ পাশে নির্মিত হবে সেতুটি। এর উভয় পাড়ে সেতুর মালামাল আনা শুরু হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সেতু কর্তৃপক্ষ লোহাগড়ার মদিনা পাড়ায় ভাড়া বাড়িতে তাদের কার্যালয় স্থাপন করেছে। মদিনা পাড়ার একটু পূর্বে গন্ধবাড়িয়া এলাকায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কালনা ঘাট এলাকায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।
নড়াইল-মাওয়া সড়কের বাস চালক সুজন বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন একাধিকবার কালনা ঘাট পার হয়ে মাওয়ায় যেতে হয়। আমরা সময় মতো ফেরি পাই না। যার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রীদের পৌঁছে দিতে পারি না। ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে অল্প সময়ের মধ্যে মাওয়া ঘাটে যেতে পারব।’
চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গোপালগঞ্জে চাকরি করি। প্রতি সপ্তাহে পাঁচদিন আমাকে কালনা ঘাট পার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। সময় মতো ফেরি না পাওয়ার কারণে বেশি টাকা ব্যয় করে নৌকায় পার হতে হয়। এতে সময় ও জীবনের ঝুঁকি থাকে। সেতুটি নির্মাণ হলে সহজেই যেতে পারব।’
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সুমন সিংহ জানান, গত ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। তখন থেকে ৩৬ মাসে অর্থাৎ ৩ বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সেতুটির পাইলিং শুরু হবে। ডিসেম্বর থেকে সেতুর মূল পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে। এর সঙ্গে সংযোগ সড়কের কাজও চলবে।
ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের পরিচালক কে এম আতিকুল হক জানান, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী ছয় লেনের সেতু হবে এটি। এমন সেতু দেশে প্রথম নির্মাণ হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নড়াইল জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কালনা সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।