কৃষক নয়, মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী
মৌসুমের শুরুতেই এবার শীতকালীন সবজির বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। সবজির পাইকারি বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে তা দুই-তিন গুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। কৃষক তাদের কষ্টে ফলানো সবজি বিক্রি করে চাহিদা মতো দাম না পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা হাত বদলের মাধ্যমে কয়েকগুণ মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সোমবার (৫ নভেম্বর) বগুড়ার সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারি বাজার মহাস্থান হাট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
কৃষক তাদের জমিতে চাষ করা টাটকা সবজি বিক্রি করতে এসে দাম না পেয়ে হতাশ হচ্ছে। বগুড়া সদরের রায়মাঝিড়া গ্রামের কৃষক মোখলেছার রহমান মহাস্থান হাটে ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি করতে এসেছেন। তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগে ফুলকপি ১৬০০ টাকা মণ এবং বাঁধাকপি ২০০০ টাকা শতকরা হিসাবে বিক্রি করছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমে ফুলকপি ৭০০ টাকা মণ এবং বাঁধাকপি ১৪০০ টাকা শতকরায় বিক্রি করছেন।
শিবগঞ্জের পিরব গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম এ বছর বেগুন চাষ করেছেন। তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগেও তিনি বেগুন বিক্রি করেছেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে। সেই বেগুন এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ২০০ টাকা মণ দরে।
মহাস্থানে সবজির পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধাকপি ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা শতকরা, ফুলকপি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ, লাউ ২০০০ টাকা শতকরা, মুলা ২০০ টাকা মণ, লাল বেগুন ২০০ টাকা মণ, সবুজ বেগুন ৬০০ টাকা মণ, পটল ৪০০ টাকা মণ, করলা ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ, বরবটি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ, শিম ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা মণ, ধনিয়া পাতা ১৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষকরা জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। মৌসুমের শুরুতেই এভাবে দাম কমতে থাকলে একমাস পর সবজি বিক্রি করতে এসে তাদের খরচ উঠবে না। বিশেষ করে মুলা এবং বেগুন নিয়ে কৃষকরা বেশি দুশ্চিন্তায়।
বগুড়া সদরের পলাশবাড়ি গ্রামের কৃষক হায়দার আলী জানান, তিনি ২০ শতাংশ জমিতে পটল চাষ করেছেন। আজ মহাস্থান হাটে পটল বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা মণ অর্থাৎ ১০ টাকা কেজি দরে। অথচ এই পটল খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজি দরে। মহাস্থান হাট থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বের শহর বগুড়ার বিভিন্ন খুচরা বাজারে এখনো চড়া মূল্যে শীতকালীন সবজি বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পাইকারি বাজার থেকে তিনগুণ বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা দ্বিগুণ মূল্যে সবজি বিক্রি করার কারণ হিসেবে জানান, পরিবহন খরচ ছাড়াও পাইকারি হাটে সবজি কিনতে এবং খুচরা বাজারে সবজি বিক্রি করতে দুইবার খাজনা দিতে হয়।
এই অঞ্চলের কৃষকরা জানান, অধিক লাভের আশায় অনেকেই এবার আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তাদের ফলনও ভালো হয়েছে। যারা আগাম সবজি বিক্রি করেছে তারাই বেশি লাভবান হয়েছে। এখন দিন যত যাবে সবজির দাম তত কমতে থাকবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় পুরো শীত মৌসুমে সবজির চাহিদা থাকে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিকটন। এবার সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করায় মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ৩ লাখ মেট্রিকটনেরও বেশি সবজির ফলন হবে।