শ্রমিক সংকটে মাঠেই পাকছে ধান
বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। শ্রমিক সংকটে মাঠেই পাকছে ধান। পাকা ধান ঘরে উঠানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। এখন পর্যন্ত ৫০ ভাগ ধান উঠানে তুলতে পেরেছে কৃষকরা। বাকি ধান এখনো মাঠে পড়ে আছে।
আমন কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে কার্তিক মাসে শেষ সপ্তহে থেকে। এখন চলছে অগ্রহায়ণ মাস। অগ্রহায়ণ মাস পড়লেও শ্রমিকের সংকটে পুরোদমে আমন কাটা শুরু করতে পারেনি বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা।
মাঠে মাঠে ধান পেকে গেছে পুরোদমে। তবুও মিলছে না কৃষি শ্রমিক।
বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা জানান, কার্তিক মাস থেকে আমন কাটা মাড়াই শুরু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০ ভাগ ধান উঠানে তুলতে পেরেছে কৃষকেরা। ধান কাটা শ্রমিক সংকটে বাকি ৫০ ভাগ ধান মাঠে পাকা অবস্থায় পড়ে আছে।
কৃষকেরা আরো জানান, প্রতি বছর আমন কাটা-মাড়াই মৌসুম শুরুর আগে কয়েক হাজার ধান কাটা শ্রমিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আসে বরেন্দ্র অঞ্চলে। কিন্ত এবার ধানের ফলন কম ও বাজারে ধানের দাম না থাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। অল্প সংখ্যক শ্রমিক দল যারা মাঠে ধান কাটছেন তারাও বেশি মজুরির চুক্তিতে কাটছেন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নঁওগা, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হয়েছে আরো ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের উপরে।
রাজশাহী তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক বুলবুল জানান, চলতি বছর তিনি ৭ বিঘা জমিতে আমন চাষাবাদ করেছেন। গত ১৫ দিন আগে থেকে মাঠে ধান পেকে গেছে। অতিরিক্ত অর্থ দিয়েও শ্রমিক মিলছেনা। তাই সময় মত ঘরে ধান তুলতে পারবেন কিনা সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, শুরুতে ধান কাটতে পারলে রবিশষ্য রোপন করা যেত। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না। ধান কাটার আগেই ক্ষেত শুকায় চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
একই উপজেলার কলমা ইউপির কলমা গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে আমন চাষাবাদ করেছিলেন। ১৫ দিন আগে মাঠে সব ধান পাকলেও শ্রমিক সংকটে ধান কাটা শুরু করতে পাছিলেন না। অবশেষে একদিন আগে শ্রমিকদের অতিরিক্ত মুজুরি দিয়ে ধান কাটাতে শুরু করেছেন।
কৃষিশ্রমিক সংকট শুধু তানোর উপজেলায় নয়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার আমনুরা এলাকা, নাচোল, রহনপুর, নওগাঁর নিয়ামতপুর ও পোরশা উপজেলায় শ্রমিক সংকটে আমন এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাটতে পারেনি বলে জানান কৃষকেরা।
তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম জানান, কৃষিশ্রমিক সংকট থাকলেও সময় মত ধান ঘরে তুলতে দিন রাত মাঠে কাজ করছেন স্থানীয় কৃষিশ্রমিক ও কৃষকেরা। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় ধান কাটতে কিছুটা অনিহা দেখাচ্ছে শ্রমিকেরা।