ফরাসি কোম্পানির পাওনা পরিশোধ না করলে তিক্ত পরিস্থিতির আশঙ্কা
জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড প্রকল্পের জন্য ফরাসি কোম্পানির পাওনা যথা সময়ে পরিশোধ না করলে দুই দেশের মধ্যে তিক্ত পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। প্রকল্প বাবদ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে ফরাসি কোম্পানি ওবারথার টেকনোলজিসের পাওনা ২৬ মিলিয়ান মার্কিন ডলার বা ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকা।
সম্প্রতি অর্থ সচিব আব্দুল রউফ তালুকদারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তরাষ্ট্রীয় সর্ম্পক বিদ্যমান। এ সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনা করে অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি কোনো রকম তিক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে ফরাসি ওই কোম্পানির পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়াও আইডিইএ প্রকল্পের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার জানিয়েছিলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ১৪ মিলিয়ান মার্কিন ডলার পরিশোধ করা না হলে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
গত ১০ অক্টোবর ওবারথার টেকনোলজিস ও নির্বাচন কমিশন একটি চুক্তি সই করে। যেখানে ফরাসি কোম্পানির বকেয়া কমিয়ে ২৬ মিলিয়ান মার্কিন ডলার বা ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ওই অর্থের মধ্যে আইডিইএমআইএ’কে প্রথম কিস্তি ১৪ মিলিয়ান মার্কিন ডলার গত ৩০ নভেম্বর পরিশোধ করতে বলা হয়। সেই টাকা পরিশোধে অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো সম্মতি দেয়নি। চুক্তি অনুসারে অবশিষ্ট ১২ মিলিয়ান মার্কিন ডলার ২০ ডিসেম্বের মধ্যে দেওয়ার কথা।
অন্যদিকে, পরিকল্পনা কমিশনের বাড়তি বরাদ্দ থেকে জাতীয় স্মার্ট আইডি কার্ড উৎপাদন ও বিতরণ কাজে নিয়োজিত ফরাসি ওবারথার টেকনোলজিস কোম্পানির পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেয় অর্থ বিভাগ। নির্বাচন কমিশন (ইসি) অর্থ বিভাগের কাছে ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় স্মার্ট আইডি কার্ডের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ওবরাথার টেকনোলজিসের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী ২৬ মিলিয়ান মার্কিন ডলার বা ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন।
চিঠির প্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ জানায়, আইডিইএ প্রকল্পটি এখনও চলমান। ফলে প্রস্তাবিত উক্ত দায় প্রকল্পের আওতায় পরিশোধ হওয়ায় নিয়মসিদ্ধ। তাই অর্থ বরাদ্দ পেতে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের নিদের্শনা দেওয়া হয়।
এর আগে অর্থ বিভাগের কাছে চলতি অর্থ বাজেটের (২০১৮-১৯) অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা খাত থেকে এ অর্থ বরাদ্দ চায় কমিশন। কিন্তু এ খাতে অর্থ ফুরিয়ে শেষ হয়ে গেছে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছিল।
সূত্রে জানা গেছে, আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় নয় কোটি স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন, মুদ্রণ ও বিতরণের জন্য ফরাসি প্রতিষ্ঠান ওবারথার টেকনোলজিসের সাথে চুক্তি করে ইসি। কিন্তু কোম্পানিটি নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মাত্র এক কোটি নয় লাখ স্মার্ট কার্ডের কাজ সম্পন্ন করে। ফলে শর্ত অনুযায়ী চুক্তি বাতিল করে ইসি। পরে নিজস্ব জনবল ব্যবহার করে স্মার্ট কার্ড বিতরণের কাজ শুরু করে সংস্থাটি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কয়েক ধাপে বেড়ে বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যদিও প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২০১১ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুন মাসে। পরবর্তীতে প্রকল্পটির মোট ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে বাস্তবায়নকাল ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
প্রকল্পের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ৯০ মিলিয়ন স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন, মুদ্রণ ও বিতরণ; ১০ মিলিয়ন লেমিনেটিং আইডি কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণ; সব উপজেলায় ইন্টারনেট সংযোগ ও ম্যানেজমেন্ট চার্জ; ডেটা সেন্টার (ডিসি) ও ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম (ডিআরএস) সফটওয়ার ও সাপোর্ট সার্ভিস ব্যয়; কম্পিউটার ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ব্যয়; পরামর্শক সেবা ক্রয় এবং জনবলের বেতন ভাতা বাড়ানো।