পাল্টাপাল্টি হামলা-ভাঙচুরে কক্সবাজারে উত্তেজনা
কক্সবাজারের চারটি সংসদীয় আসনেই প্রার্থী দিয়েছে দেশের শীর্ষ ১২ রাজনৈতিক দল। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে কয়েকজন। তার মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি হামলা, ভাঙচুর, আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ও ফাঁকা গুলিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা যায়, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ ও মহাজোটের প্রার্থী জাফর আলম, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে মহাজোটের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নিয়ে সংশয় থাকলেও আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদ।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে মহাজোটের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের লুৎফর রহমান কাজল, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী আলোচিত সাংসদ আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী শাহিন আক্তার ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শাহজাহান চৌধুরী।
ঘুরেফিরে এসব প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে কক্সবাজারে। চকরিয়া-পেকুয়া আসনে দফায় দফায় ফাঁকা গুলিবর্ষণে আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসীও।
জানা যায়, শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে কক্সবাজার-১ আসনের নৌকার প্রার্থী জাফর আলমের দুইটি নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা গুলিও করেছেন। পেকুয়া বাজার ও টৈটংয়ের হাজী বাজারে আগুন দেওয়ার এ ঘটনা ঘটে।
সম্প্রতি একই আসনে চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় হামলা-ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার জন্য দুই শীর্ষ দলের প্রার্থীরা পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ করেন।
কক্সবাজার-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী লুৎফর রহমান কাজল অভিযোগ করে বলেন, ‘রামুতে আমাকে কোনো অফিস করতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচনী প্রচাররগাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে। হামলা করে উল্টো আমাদেরকে মামলা দেওয়া হয়েছে।’
মহাজোটের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘বিপরীত প্রার্থীর লোকজন আমার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নাজেহাল ও মারধর করছে। বিএনপির প্রার্থীর লোকজন খুবই উত্তেজিত অবস্থায় আছেন। তাদের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণেই তার সমর্থকরা উত্তেজিত অবস্থায় রয়েছেন।’
কক্সবাজার-১ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘গণসংযোগকালে গুলিব করা হয়। এ ঘটনার পর থানায় গেলে আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। থানাতেই দুই রাউন্ড গুলি করা হয়। ডুলাহাজারায় গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগ হামলা চালায়।‘
মহাজোটের প্রার্থী জাফর আলম বলেন, ‘তিনি (হাসিনা আহমেদ) থানার ভেতর থেকে নিজেই বের হননি। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তৈরির জন্যই তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যাননি। আমাদের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে তার লোকজন গুলি করেছে।’
কক্সবাজার-৪ মহাজোটের প্রার্থী শাহিন আক্তারের পক্ষে তার স্বামী ও সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী গতকালকেও একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এর আগেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বার বার অনুরোধ করেছি যাতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিএনপির প্রার্থীর কারণে যেকোনো মুহূর্তে অঘটন ঘটার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।’
বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশ একজন প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করছে। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে একজন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য তারা সিরিয়াস ভূমিকা পালন করছে। আমি এ ধরণের নজির কখনো দেখিনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বার্তা২৪কে বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ইতোমধ্যে মাঠে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আসছে, তদন্ত করছি। যদি কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে সত্যতা মিলে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’