এত বই পৃথিবীর কোনো দেশ ছাপায় না: জাফর ইকবাল
শীতের শান্ত সকালে সূর্যি মামা পূব আকাশে উকি দিচ্ছে। বিস্তৃত মাঠে পাখির ছানার মতো কিচিরমিচির করছে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিকের অসংখ্য ছেলে-মেয়েরা। বাবা-মা অথবা বড় ভাই-বোন আছেন তাদের সঙ্গে। বছরের প্রথম দিনে এই ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন শ্রেণীর নতুন বই৷ সামনে সাজানো আছে সুন্দর মঞ্চ। মাইক হাতে মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন ছোটদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
তিনি বললেন, ‘আমি তো মাস্টার মানুষ, ছেলে-মেয়েদেরকে দেখলে আমি প্রশ্ন করি৷ তোমাদের একটা প্রশ্ন করব? বলো দেখি, সমস্ত ছেলে-মেয়েদেরকে বাংলাদেশ কতগুলো বই দেবে?'
উত্তর এলো, ৩৩ কোটি ৷
এরপর ছোটদের এ প্রিয় মানুষ বললেন, ‘এত বই পৃথিবীর কোনো দেশ ছাপায় না ৷ কোনো দেশ ছাপাতে পারবেও না। শুধু বাংলাদেশ পারবে৷ এত কষ্ট করে এতগুলো বই কেনো ছাপায় বলো? তোমাদের জন্য৷ তোমরা বইটা পড়বে তো? বাসায় গিয়ে আজকে রাতেই সবগুলো বই পড়ে ফেলবে, ঠিক আছে?'
মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে‘বই বিতরণ উৎসব ২০১৯' এ বিশেষ অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে যৌথ উদ্যোগে এ বই উৎসবের আয়োজন করে। ঢাকা মহানগরের রমনা, ধানমণ্ডি, লালবাগ, কোতোয়ালীসহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বই
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল৷
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ফোনে যুক্ত হয়ে নিজের বক্তব্য দেন তিনি। উপস্থিত থাকতে না পারায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
উপস্থিত সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি, এ বই উৎসব সার্থক হবে৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বই উৎসব পালন করছি৷ এবার প্রায় ৩৩ কোটি বই আমরা সারা দেশে সমস্ত শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছি৷ শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের মনযোগ সারা পৃথিবীব্যাপী তাক লাগিয়ে দিয়েছে৷ আশা করব, আমাদের শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেয়ে পড়াশোনায় আরও মনযোগী হবে এবং সরকারের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করে দেশকে স্বাবলম্বী করে তুলবে এবং উপযুক্ত মানুষে হিসেবে গড়ে উঠবে-তাদের কাছে এই প্রত্যাশা রাখি৷'
ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘তোমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে তোমরা নতুন বই পাও৷ আমরা কোনোদিন নতুন বই পাই নাই, সবসময় বড় ভাইদের পুরোনো বই নিতাম৷ তোমাদের দেখে আমার ঈর্ষা হচ্ছে৷ কিন্তু খুবই ভাল লাগছে যে, বাংলাদেশ এত ভাল হয়েছে, এত বিজয় লাভ করতে পারছে যে আজকে ৩৩ কোটি বই দেওয়া হচ্ছে৷ তোমরা বেশি করে বই পড়বে, বেশি করে খেলাধুলাও করবে৷ বাংলাদেশে ছেলেরা জেগে উঠেছে, মেয়েরাও জেগে উঠেছে৷ মেয়েরা বরং ছেলেদের চেয়ে বেশি স্কুলে যায়৷ এজন্য আজ থেকে ১০, ২০ বছর পরে বাংলাদেশ হবে একটা সোনার দেশ, সোনার বাংলা, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু৷'
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা দেশের ভবিষ্যৎ, তাই তোমাদের হাতে বই তুলে দেওয়াটা সব থেকে বড় কাজ৷ আমি ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে, যার অক্লান্ত পরিশ্রমেই এটা সফল হয়েছে৷ আশা করি, তোমরা সবাই পড়াশোনায় মনোনিবেশ করবে, সাথে সাথে খেলাধুলাটাও করতে হবে। দুইটা জিনিসই একসাথে চালাতে হবে এবং সবগুলোতেই ভাল করতে হবে৷ আশা করি, তোমাদের এ বছরটা অনেক সুন্দর যাবে, ভালোভাবে যাবে৷'
সভাপতির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আমরা ৩৩ কোটি বই বিতরণ করছি৷ শুধু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আজকে সারা বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে বই বিতরণ করছে৷ এটি সরকারের একটি অভাবনীয় উদ্যোগ৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এটি শুরু হয়েছে ২০১০ সাল থেকে৷'