তিস্তায় সেচ কার্যক্রম শুরু ১৫ জানুয়ারি
দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে উত্তরবঙ্গ তথা রংপুর অঞ্চল। খাদ্য শস্যের ভাণ্ডার রংপুর অঞ্চলে প্রতি বছরই বোরো মৌসুম এলে প্রাকৃতিক উপায়ে পানির ব্যবস্থা না থাকায় চাষাবাদে ফসলি জমিতে সেচের চাহিদা থাকে।
উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের বাঁচিয়ে রেখেছে তিস্তা তার জলদুগ্ধে। কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও পরোক্ষ, তিস্তা নদী হলো উত্তরের জীবনরেখা। তিস্তার কাছে এই অঞ্চলের মানুষদের ঋণ চিরদিনের।
বর্তমানে উজানের জোয়ারে ভাসছে তিস্তা। নদী অববাহিকার জেলে ও মাঝিরা বলছে, নদীতে ভালই পানি আসছে। শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি নদীজুড়ে, চলছে স্রোতধারা। চলছে নৌকা, জেলেরা মাছ ধরছে।
গত এক পনের দিন থেকে নদীতে পানির গড় হিসাব ছিল দেড় হাজার কিউসেক, যা শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার কিউসেকে।
আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে চলতি খরা মৌসুমে বোরো চাষাবাদে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে। উক্ত সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদে উত্তরের তিন জেলা নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বার্তা২৪কে বলেন, ‘চলতি রবি মৌসুমে সেচ দেওয়ার কমান্ড এলাকা তৈরি রয়েছে ৭৯ হাজার হেক্টর। উজানের পানি প্রাপ্তির উপর নির্ভর করবে কত এলাকায় সেচ দিতে পারব। বর্তমানে নদীতে উজানের পানির যে জোয়ার রয়েছে এটা অব্যাহত থাকলে ৫০ হাজার হেক্টর জমি পর্যন্ত সেচ দিতে সক্ষম হব। পানির জোয়ার আরও বাড়লে কমান্ড এলাকার ৭৯ হাজার হেক্টর জমি সেচ পেয়ে যেতে পারে।’
তিনি জানান, এরপরেও চলতি মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার টার্গেট ধরা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা পাঁচ হাজার হেক্টর, জলঢাকায় আট হাজার হেক্টর ও নীলফামারী জেলা সদরে সাত হাজার হেক্টর, কিশোরীগঞ্জে পাঁচ হাজার হেক্টর, সৈয়দপুরে দুই হাজার হেক্টর, রংপুর জেলার গঙ্গাচরা উপজেলায় তিন হাজার হেক্টর ও দিনাজপুর জেলার খানসামা চিরিরবন্দরে এক হাজার ৫০০ হেক্টর।
সাধারণভাবে ধান চাষে সেচ কাজে যে খরচ হয় সে অনুযায়ী সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে ধান চাষ করলে ব্যয় হয় ২০ ভাগের এক ভাগ। এছাড়া ধানের ফলনও হয় বাম্পার। বৃহত্তর রংপুরের মঙ্গা দূরীকরণে তিস্তা সেচ প্রকল্পের ভূমিকা অপরিসীম।
চাপানী এলাকার কৃষক হারুন-উর-রশিদ বলেন, ‘কয়েকদিনের মধ্যে ইরি চাষের জমিতে চারা রোপণ শুরু করা হবে। ক্যানেলে এমন পানি থাকলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি। কিন্তু এমন পানি আদৌ থাকবে কিনা আশঙ্কাও আছে।’