কৃষকদের চোখের পানিতে ভিজে তিস্তার বালু
‘রাজনৈতিক দলগুলো তিস্তাকে ইস্যু করে রাজনীতির মাঠ গরম করে, বিভিন্ন দল তিস্তাপাড়ে লংমার্চ করে, তিস্তা ইস্যু করে ভারত-বাংলাদেশ দর কষাকষিও হয়। কিন্তু কবে হবে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন? আমাদের চোখের জলে তিস্তার বালু ভিজে যায়। বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করে সময় মত পানি দিতে পারি না।’
এসব কথা বলছিলেন তিস্তাপাড়ের জাব্বার হোসেন। তিনি বলেন, ‘কৃষকদের নিয়ে কতদিন রাজনৈতি চলবে? বর্ষাকালে তিস্তাপাড়ের মানুষকে ডুবিয়ে রাখে আর শুকনো মৌসুমে কৃষকদের পানির জন্য দিশেহারা হয়ে পড়ে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় এক লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমি। দ্বিতীয় পর্যায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আরও ছয় থেকে লাখ হেক্টর জমি। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের আশায় অপেক্ষা করেছিলেন আরও কয়েক লাখ কৃষক। কিন্তু আশায় গুড়েবালি।
দ্বিতীয় পর্যায়ের কথা দূরে থাকুক প্রথম পর্যায়ে যে এলাকায় সেচ দেওয়া হতো তাও আর সম্ভব হচ্ছে না। এখন শুষ্ক মৌসুমে নদীকেই আর বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এসব নিয়ম শুধু নীলফামারীর দিকে কার্যক্রম হয়। লালমনিরহাটের তিস্তা পাড়ের মানুষের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ লেগেই আছে।
২০১৪ সালেও ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছিল। অভিন্ন নদী হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ভারত একতরফা তিস্তার পানি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে হঠাৎ করে পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়।
কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। যাদের একটুখানি সামর্থ্য ছিল তারা গভীর নলকূপ বসিয়ে কোনো রকমে ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। আর যাদের সামর্থ্য ছিল না তারা ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। জমি ফেটে চৌচির হয়েছিল।
২০১৭ সালে ২২ হাজার হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও পাঁচ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ রেশনিং সিস্টেমে পানি দিতে হলে যে ন্যূনতম পানির প্রবাহ প্রয়োজন, তাও কখনও কখনও ছিল না। ২০১৮ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় জমি নেওয়া হয়েছে মাত্র সাত হাজার হেক্টর। তবে এই সাত হাজার হেক্টর জমিতেও পরিমাণ মতো পানি মিলছে না বলে জানা গেছে।
তিস্তাপাড়ের আনোয়ার হোসেন বার্তা২৪কে বলেন, ‘এবার পানির সংকট শুরু থেকেই। যা পানি তিস্তা ব্যারেজের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তা চলে যাচ্ছে নীলফামারী ক্যানেলে। ঐ দিকের কিছু কৃষক সুবিধা পাচ্ছে। এসবের কারণে ফলন যে ভালো হবে না, তা বুঝতে পারছি।’
পারুলিয়ার কৃষক আফসার হোসেন বার্তা২৪কে বলেন, ‘এবার আবাদ করে জমিতে পানি দিতেই চোখে সরিষা ফুল দেখছি। সঠিক সময়ে পানি না পেয়ে ভুট্টাসহ সবজি চাষে এবার অনেক টাকা লোকসান হবে মনে হচ্ছে।’
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বার্তা২৪কে বলেন, ‘গতবারে পানির প্রবাহ ছিল তিন থেকে চার শত, এবার প্রায় সাড়ে তিন হাজার। ভারত থেকে আসা পানি বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজের মজুদ করে রাখা হয়েছে। কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী গেট খুলে দেওয়া হবে।’