লাইসেন্স ছাড়াই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করছে বিমান!
নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করতে লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটার তোয়াক্কা করছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা এখনও নীতিমালার কপি হাতে পায়নি।
এদিকে, ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিং, কার্গো লোড-আনলোড, বোর্ডিং পাসসহ বিভিন্ন সেবা নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নীতিমালা করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কিন্তু বিমানকে কিছুতেই নিয়ম নীতির আওতায় আনতে পারছে না সংস্থাটি।
নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ‘এ’ ক্যাটাগরির লাইসেন্স নিতে হবে। যেকোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই বছর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ‘এ’ ক্যাটাগরির লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে চাইলে অবশ্যই তা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ বিনিয়োগ থাকতে হবে, যেখানে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা থাকবে ৫১ শতাংশ। এই নীতিমালা প্রণয়নের প্রায় ৮ মাসেও লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেনি বিমান কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘বি’ ক্যাটাগরির লাইসেন্স এবং দেশীয় কোনো এয়ারলাইন্স নিজেদের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করতে চাইলে ‘সি’ ক্যাটাগরির লাইসেন্স লাগবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচক’র এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র ব্যবসা করছে বিমান। তারা ইচ্ছামতো এই কাজ করে আসছে। কিন্তু নীতিমালা হওয়ায় তাদের ব্যবস্থা এখন বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় অনেক কিছুই আইনের মধ্যে থেকে করতে হবে। তাই বারবার বলার পরও লাইসেন্স নিচ্ছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি সংস্থাই যদি লাইসেন্স ছাড়া কাজ করে, নিয়ম নীতি না মানে তাহলে সেটা বিপদের। নীতিমালা প্রণয়নের পর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের চিত্র পরিবর্তন হবে বলে মনে করা হয়েছি। কিন্তু সেটা বিমানের কারণেই সম্ভব হচ্ছে না।’
লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘আমরা এখনো নীতিমালার কপি হাতে পাইনি। হাতে পেলে এ বিষয়ে কথা বলা যাবে।’
এ সময় তিনি নীতিমালা হাতে না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিমানের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নীতিমালা প্রণয়নের পর থেকেই বিমানের ঊর্ধ্বতনরা রীতিমতো ভয়ে আছেন। প্রতিদিন প্রায় ২৫০ ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করছে বিমান। এখন যদি নীতিমালা বাস্তবায়ন হয় তাহলে প্রতিযোগীর সংখ্যা বাড়বে। অনেক প্রতিষ্ঠানই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অন্য কোম্পানির কাছে কাজ চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিমানের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে বেবিচক’র ফ্লাইট সেফটি ও রেগুলেশন পরিচালক উইং কমান্ডার চৌধুরী এম জিয়াউল কবীর বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে সেবার মান অনেক বাড়বে। পাশাপাশি এই সংশ্লিষ্ট কাজ সহজেই আমরা তদারকি করতে পারবো।’