‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সঠিক পথে নেই প্রশাসন’
এক সপ্তাহ আগেই শেষ হলো ডিএমপি'র ১৫ দিনব্যাপী বিশেষ ট্রাফিক পক্ষ। পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এই ট্রাফিক পক্ষ চালানো হয়। কিন্তু বিশেষ এই আয়োজন শেষ হওয়ার সপ্তাহ না ঘুরতেই রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরলো চার জনের। আবারও স্কুল শিক্ষার্থীর রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। সরকারের সকল প্রচেষ্টা যেন ব্যর্থ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে।
সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক স্কুল শিক্ষার্থীসহ চার জন নিহত হন। একই সময়ের ভেতরে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সর্বমোট সাত জন।
রাজধানীসহ সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ না হওয়া এবং পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা না আনতে পারার জন্য প্রশাসনের সঠিক নীতি নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, সমস্যা সমাধানে এখন পর্যন্ত সরকার সঠিক নীতি বা রাস্তা খুঁজে বের করতে পারেনি। মাঝে মধ্যে জনগণকে আইওয়াশ করার জন্য দৃশ্যমান কিছু কাজ দেখান ট্র্যাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা পর্যন্ত। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে স্থায়ী কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ট্র্যাফিক সপ্তাহ বা পক্ষ’র মতো কিছু কার্যক্রম সামনে আসলেও তাও কাজে আসছে না সমস্যা সমাধানে।
বিশেষজ্ঞদের এমন মতের সত্যতাও মিলছে বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া তথ্যে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) তথ্য মতে, ঘটা করে রাজধানীতে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হলেও এর কোনো সুফল আসেনি। এমনকি, ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালে ঢাকা শহরের পরিবহনের বেহাল পরিস্থিতির ন্যূনতম কোনো উন্নতিও চোখে পড়েনি।
সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর সড়কসহ সারাদেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের অধিকাংশেরই যথাযথ ট্রাফিক সংকেত নেই। এছাড়া, কিছু জায়গায় এসব সংকেত থাকলেও এর কোনো ব্যবহার নেই। ফলে সড়কে তৈরি হচ্ছে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা। আর এসব কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হচ্ছে মানুষদের।
বিআরটিএ’র তথ্য মতে, ঢাকাসহ সারাদেশে প্রায় ১৮ লাখ ভুয়া চালক দিয়ে যানবাহন চালানো হচ্ছে। এসব চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ন্যূনতম কোনো ধারণা নেই। ফলে তারা গাড়ি চালায় নিজেদের ইচ্ছা মতো, বেপরোয়াভাবে।
আরও একাধিক সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, এসব সমস্যা যখন কোনো কারণে সরকার বা দেশের মানুষের সামনে চলে আসে, তখন সংশ্লিষ্টরা তড়িঘড়ি করে কিছু করার চেষ্টা করেন। পরে এসব তোড়জোড় নানা কারণে নির্দিষ্ট সময়ে এসে থেমে যায়। এই থেমে যাওয়ার পেছনে সঠিক পরিকল্পনা আর সদিচ্ছা না থাকাসহ নানা কারণ রয়েছে।
এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনা ও পরিবহন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন সঠিক পথে নেই। আর থাকবেই বা কেন। কীভাবে এই দুই সমস্যা থেকে বাঁচা যায়, এ বিষয়ে কি কোনো গবেষণা হয়েছে? অথবা আমাদের কাছে কোনো তথ্য আছে? কে বা কারা গবেষণা করে শহরের পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে, সে বিষয়েও সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) –এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখনো সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এই আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা সমস্যা সমাধানে আইন না থাকলে তো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে, রাস্তায় দক্ষ চালকদের হাতে গাড়ি নেই। সে অর্থে বলতে গেলে দেশে দক্ষ চালকের নেই বললেই চলে। তাই সমস্যা সমাধানে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
উল্লেখ্য, ট্রাফিক পক্ষ উদ্বোধনের সময় রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা, আইন না মানা। দেশের সুনাগরিক হিসেবে ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তা মেনে চলুন। না হলে পরিবহন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।