চকবাজার অগ্নিকাণ্ডের দায় কার?
ওয়াহিদ ম্যানশন। দেশজুড়ে শোকের একটি নাম। যাকে ঘিরে কেঁদে উঠছে মানুষের অন্তরআত্মা। এই ভবনে গাড়ি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ কেড়ে নিয়েছে ৬৭টি তাজা প্রাণ। সেই সঙ্গে শেষ হয়েছে ৬৭টি স্বপ্নও।
দুর্ঘটনা কবলিত পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ ম্যানশন নিয়ে এখন উঠছে নানা সমালোচনা-আলোচনা। এমনকি ভবনটির বেজমেন্টে প্রচুর পরিমাণ কেমিক্যালের সন্ধান পাওয়া গেছে। অনেকের ধারণা, কোনোভাবে যদি এই বেজমেন্টে আগুন স্পর্শ করত তাহলে আরো ভয়ানক আকার ধারণ করত।
২০১০ সালের নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর চকবাজারের ঘটনা আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো পুরান ঢাকার জীবন-যাপনের ঝুঁকিপূর্ণ চিত্র। পুরান ঢাকার ঐহিত্যের আড়ালে ছাড়িয়ে পড়েছে নানা অনিয়ম। সরু অলিগলিতে ঘেঞ্জি জীবন-যাপন, অবৈধ কারখানায় সায়লাব রাজধানীর এ অংশ।
এমন নানা অনিয়মের কারণেই চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড বড় আকার ধারণ করেছে। ওয়াহিদ ম্যানশনের অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে হলেও ভবনগুলোতে কেমিক্যাল কারখানা ও দোকান থাকায় থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুধু ওয়াহিদ ম্যানশন নয়, পুরান ঢাকার সব ভবনের একই চিত্র। অবৈধ কেমিক্যাল কারখানা, কসমেটিক কারখানা দিয়ে সয়লাব। বাড়ির মালিকরা ফ্যামিলি বাসার চেয়ে কোম্পানিগুলোকে বাসা ভাড়া দিতে চায়। কারণ, তাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করতে পারে। আর অবৈধ কারখানা হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ভাড়া দিতে তেমন কাপর্ণ্য করেন না।
শুক্রবার (২২ফেব্রুয়ারি) ওয়াহিদ ম্যানশন দেখতে আসা স্থানীয়দের এমন অভিযোগ-ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম সজীব। তিনি ওয়াহিদ ম্যানশনের বাসিন্দা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন সজীবের পরিবার। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের বাসার অর্থাৎ হাজী ওয়াহিদ ম্যানশন ভবনের তিনতলার তিনটি ইউনিট ছাড়া সবগুলো ফ্ল্যাটেই পারফিউম বা বিভিন্ন ক্যামিকেলের গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেওয়া। বাসার মালিক ফ্যামিলি বাসা ভাড়া দেওয়ার থেকে কেমিক্যালের গোডাউন ভাড়া দিতে চান বেশি। বাসা ভাড়ার থেকে কেমিক্যালের গোডাউন ভাড়া দিলেই বেশি টাকা পাওয়া যায়।’
পুরান ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাড়ির মালিকরা পরিবারগুলোর থেকে কোম্পানিগুলোকে ভাড়া দিতে বেশি পছন্দ করেন। কারণ কোম্পানিকে ভাড়া দিলে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া যায়। অ্যাডভান্স দুই থেকে চার বছরের জন্য পাওয়া যায়। এমনকি পরিবারগুলোকে বের করে দিয়ে গোডাউন ভাড়া দেয় পুরান ঢাকার অনেক বাড়ির মালিক।’
ওয়াহিদ ম্যানশনের আরেক বাসিন্দা মুন্নি বেগম বলেন, ‘বাড়ির মালিকদের অনেক বার বলেছি, ফ্যামিলি বাসায় গোডাউন ভাড়া দেবেন না। কিন্তু মালিকরা কথা শোনেন না। উল্টো বলেন, আপনাদের না পোষালে চলে যান। এখন মালিকদের পুরো বাসাটাই পুড়লো এখন কী বলবে।’
তবে ভাড়াটিয়াদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন পুরান ঢাকার বাড়ির মালিকরা। তাদের দাবি, ‘ভাড়াটিয়ারা ফ্যামিলি বাসা নেওয়ার কথা বলে গোডাউন করে, কোম্পানি খুলে বসে।’
বাড়িওয়ালা আজগার উদ্দিন শাহীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাড়িওয়ালারা ভাড়া দেয়, কিন্তু দেখে না ভিতরে কি রাখা হচ্ছে। যারা ভাড়া নিচ্ছে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফ্যামিলি থাকেন এটা বলেন। কিন্তু লুকিয়ে কেমিক্যাল কারখানা খুলে রাখে। দেখতে চাইলে বলে কিছু নাই। কম্পিউটার দেখায়, কাগজপত্র দেখায়। এসব বিষয়ে বাড়িওয়ালাদের ততটা দোষ থাকে না।’
চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সরকারের উচিত পুরান ঢাকাকে নিয়ে নতুন করে ভাবা। বিশেষ করে আবাসিক এলাকায় কোন প্রকার কেমিক্যাল বা বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা নিষিদ্ধ করার দাবিও জানান তারা।