প্রবাসীদের অর্জিত জ্ঞান দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রবাসীরাসহ আমরা যদি আমাদের সমস্ত জ্ঞান, বুদ্ধি যদি জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানোর কথা চিন্তা করি তাহলে কিন্তু একটা দেশকে উন্নত করা কঠিন কিছু না। শুধু ব্যক্তি স্বার্থের কথা চিন্তা না করে জনগণের স্বার্থের কথা চিন্তা করাটাই হচ্ছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ারদের প্রথম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রবাসীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রবাসীরা আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। এমনকি ছয়দফা আন্দোলনের সময় জাতির পিতার প্রতি যে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়া হয়েছিল তার প্রতিবাদ করা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে প্রবাসীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। এমনকি পঁচাত্তরের পরেও যখন আমরা বিদেশে রিফিউজি হিসেবে আশ্রিত ছিলাম তখন প্রতিবাদ কিন্তু লন্ডনপ্রবাসী ড. রাজ্জাক প্রথম সেখানে তিনি একটা কনভেশন করেন এবং জাতির পিতার হত্যার প্রতিবাদ করেন। শুধু তাই না প্রবাসীদের অর্জিত অর্থ আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট যদি না ঘটত তাহলে কিন্তু অনেকেই দেশে থেকে যেতে পারতেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে শরিক হতে পারতেন। কিন্তু যে পরিবর্তনটা হয়েছিল সেটা দেশের কল্যাণে হয় নি। হয়ত একটা গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে তারা কোন কাজ করেনি। যদি করত তাহলে বাংলাদেশ বহু আগেই উন্নত হত। আর সেটা করেনি বলেই আমরা পিছিয়ে ছিলাম।
প্রবাসীদের বাংলাদেশের উন্নয়নে শরিক হওয়ার আগ্রহকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা সবসময় বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেইন’। আমি কিন্তু কখনো এই কথাটা মনে করিনা। কাজেই আমি কখনো ব্রেন ড্রেইন বলিনি। আমি বরং বলেছি বিদেশে গেলে জ্ঞান অর্জন হয়। কারণ আমরা যদি বিশ্বে না যাই, না দেখি তাহলে আমরা জানব কী করে বিশ্বের কোথায় কীভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। প্রবাসে যারা শিক্ষা গ্রহণ করতে যান, অনেকে বিদেশেই থেকে যান, অনাবাসী হয়ে যান। কিন্তু সেখানেও একটা সম্ভবনা থাকে-যে অভিজ্ঞতটা আপনারা সঞ্চয় করেন সেটাও মূল্যবান। আপনারা সে জ্ঞান অর্জন করে আজকে বাংলাদেশের উন্নয়নের শরিক হতে চান, দেশের কাজে লাগাতে চান। আমি সে জন্য আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে আপনারা এই উদ্যোগটা নিয়েছেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আগে যেসব সরকারি খাত ছিল তার সবগুলোকে আমি বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। এর উদ্দেশ্য ছিল দুটো। একটা হচ্ছে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি হবে। আমার দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিপাবে। শুধু সরকার পারবে না সরকারি প্রতিষ্ঠান করে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে আমার দেশে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। কাজেই দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করতে আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে অর্থনৈতিক নীতিমালা আমরা প্রণয়ন করেছি তাতে বেসরকারি খাতটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহি চৌধুরীসহ আরো অনেকে।
সম্মেলনে ৩০ টি দেশ থেকে আগত প্রবাসী ইঞ্জিনিয়াররা অংশ নিয়েছেন।