ট্রেনে বাতি নেই, যৌন হয়রানির শিকার হয় নারীরা



রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), বার্তা২৪.কম
ট্রেনে বাতি নেই, যৌন হয়রানির শিকার হয় নারীরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

ট্রেনে বাতি নেই, যৌন হয়রানির শিকার হয় নারীরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন হয়ে প্রতিদিন আন্তনগর, মেইল ও লোকালসহ ৩২টি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনের মধ্যে শুধু আন্তনগরের বগিতে বাতির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য মেইল ও লোকাল ট্রেনের অনেক বগিতে বাতি নেই, আর থাকলেও নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। এসব ট্রেনে রাতের অন্ধকার দূর করতে হকারের কুপিবাতি আর যাত্রীদের মোবাইলের আলোই হয়ে ওঠে একমাত্র ভরসা।

এ কারণে রাতের অন্ধকারে ট্রেনের বগির ভেতরে ভৌতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এতে প্রায়ই চুরি ও পকেটমারের শিকার হয় যাত্রীরা। পাশাপাশি নারী যাত্রীরা বখাটেদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়।

এছাড়াও জারিয়া-মোহনগঞ্জ ও নাসিরাবাদ ট্রেনে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের একটি চক্র সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকায়, বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও লাইন কেটে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এসব সমস্যার কারণে ট্রেনগুলোতে রাতের যাত্রী আগের চেয়ে কমে গেছে। নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ভোগের কারণে অনেক সময় ট্রেনের বগি যাত্রী শূন্য থাকে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার পর গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে খোঁজ নিয়ে ট্রেনের বগিতে বাতি না থাকার সত্যতা পাওয়া যায়। রাত ৭টা ১৫ মিনিটে নেত্রকোনার জারিয়া থেকে ছেড়ে আসা ময়মনসিংহগামী লোকাল ট্রেনটি স্টেশনে এসে যাত্রাবিরতি দেয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের ৫টি বগির মধ্যে ২টি বগিতেই বাতি নেই। অন্ধকারে ভিড়ের মধ্যে হকারের কুপিবাতির আলোই ছিল যাত্রীদের একমাত্র ভরসা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী যাত্রী বলেন, ‘ট্রেনের এই বগিতে বাতি না থাকায় অন্ধকারে ভৌতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এতো যাত্রীর মাঝে আমরা কয়েকজন মাত্র নারী যাত্রী। তাই আতঙ্কের মধ্যে আছি। এভাবে ময়মনসিংহ পর্যন্ত কীভাবে যাব? খুব ভয় করছে।’

রাত ৭টা ২৭ মিনিটে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ভৈরবগামী লোকাল ট্রেন স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ট্রেনের ৫টি বগির মধ্যে ২টি বগিতে বাতি নেই। বাকি ৩টি বগির মধ্যে ২টিতে বাতি জ্বললেও অপর ১টি বগির বাতি নিভু নিভু করছিল।

ট্রেনযাত্রী মিলন মিয়া জানান, ভৈরব ট্রেনের এই অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই। কোনো বগিতে বাতি জ্বলে, আবার কোনো বগিতে বাতি জ্বলে না। আর এই সুযোগে পকেটমার ও চোরের উৎপাত বেড়ে যায়। রাতের বেলায় ট্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী অন্ধকারাচ্ছন্ন বগিতে টহল দেয় না। তারা শুধু আলো আছে এমন বগিতে টর্চ নিয়ে বসে থাকে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই যাত্রীসেবার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে।

রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তনগর ট্রেন বিজয় এক্সপ্রেস ওই স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। তবে এই ট্রেনের সব বগিতে বাতির ব্যবস্থা ছিল।

গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম মিন্টু জানান, ট্রেনের বগিতে বাতি না থাকার কারণে রাতে যাত্রীদের মালামাল চুরি, ছিনতাই হচ্ছে। নারীরা প্রায়ই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব কারণে রাতের বেলায় লোকাল ট্রেনের যাত্রী কমে যাচ্ছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যাত্রীসেবার মান বাড়াতে রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে নজর দেয়া প্রয়োজন।

শনিবার (২ মার্চ) বিকেলে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনে বাতির বিষয়টি আমাদের আওতাধীন না। এটি ইলেকট্রিক বিভাগের বিষয়। আর ট্রেনে যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা দেখভাল করে। তারপরও আমি বিষয়গুলো সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানাব।’

   

বরিশালে কর্মস্থলমুখী জনস্রোত অব্যাহত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদ উল ফিতরের আগে বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকামুখী জনস্রোত ঈদ পরবর্তি সময়ে এখনো কর্মস্থলমুখী। পরিবহন বিশেষজ্ঞসহ মালিক ও শ্রমিকদের মতে এবারো ঈদ উল ফিতরের আগে পরে বরিশালসহ সন্নিহিত এলাকার সাথে রাজধানী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্তত দশ লাখ মানুষ যাতায়াত করছে। কিন্তু দেশের একমাত্র রেললাইন বিহীন বরিশাল বিভাগে এতদিন নৌপথেই ৭৫ ভাগ যাত্রী যাতায়াত করলেও পদ্মা সেতু চালু হবার পরে সড়ক পথেই ৬৫ ভাগ চলাচল করছে।

নদ-নদী বহুল বরিশাল অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী নৌপথে পৌনে দুশ বছরের জৌলুস হারাতে চললেও পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে’র পরে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল অঞ্চলের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোর অবস্থা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় নয়। বরিশাল মহানগরী থেকে ৯০ কিলোমিটার অপ্রসস্ত জাতীয় মহাসড়ক অতিক্রম করে উত্তরে ভাংগায় বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত পৌছতেই ৩-৪ ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। ফলে পদ্মা সেতু চালু হবার পরে বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকা রাজধানীর যতটা কাছে আসার কথা ছিল, তা এখনো সম্ভব হয়নি। এ মহাসড়কে যানবাহনের আধিক্য ৩ গুনেরও বেশী বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীরপাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সাথে বরিশাল অঞ্চলের সড়ক পরিবহনে বিড়ম্বনা আরো বেড়েছে।

ঈদকে সামনে রেখে গত কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি আরো নাজুক আকার ধারন করে। বরিশাল ও ভাংগা’র মধ্যবর্তি ৯০ কিলোমিটার মহাসড়কের বেশীরভাগ এলাকায়ই দিনরাত যানজট লেগে আছে।

এদিকে ঈদকে ঘিরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদী বন্দরে অতীতের চীরচেনা দৃশ্য না থাকলেও ঈদ পরবর্তি সময়ে যাত্রীদের পদভারে মুখরিত বিগত কয়েকটি দিন। বরিশাল-ঢাকা নৌপথে রুট পারমিটধারী প্রায় ২৯টি যাত্রীবাহী নৌযানের অন্তত ১০টি ইতোমধ্যে হারিয়ে গেলেও অবশিষ্টগুলো কোনমতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। রোববারে বরিশাল নদী বন্দর থেকে ১২টি নৌযান যাত্রী বোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবার পরে সোম ও মঙ্গলবারেও প্রায় একই পরিস্থিতি অব্যাহত ছিল। এমনকি বেশীরভাগ নৌযানই ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুনেরও বেশী যাত্রী বহন করলেও এবার নৌপথে ভাড়া বাড়ায়নি মালিক পক্ষ। নিকটজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরেফেরা শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ আগামী শনিবার পর্যন্তই বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকা থেকে কর্মস্থলে ফিরবেন বলে আশা করছেন সড়ক ও নৌ পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্টজনেরা। দুটি বাস টার্মিনাল ছাড়াও বরিশাল নদী বন্দরেও গত কয়েকদিন পা ফেলার স্থান নেই।

এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে এবার সড়ক পথে যে যার মত করে ভাড়া আদায় করছে। এমনকি অনেক নামী দামী সড়ক পরিবহন কোম্পানী রুট পারমিটের বাইরেও বাস নিয়ে আসছেন বরিশালসহ আশেপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে। ভাড়াও আদায় করছেন তাদের মত করেই। বরিশাল থেকে মাত্র ১৬৫ কিলোমিটার সড়ক পথে ঢাকার বাতানুকুল বাসে সাড়ে ১২'শ টাকা ভাড়া আদায় এখন স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ বিআরটিসি একই পথে ৬'শ টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। তবে রাষ্ট্রীয় এ সড়ক পরিবহন সংস্থাটি ঈদ উপলক্ষে কোন বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করতে পারেনি যানবাহন স্বল্পতায়।

রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটি দিনরাতে বরিশাল-ঢাকা সড়ক পথে প্রায় ৩০টি বাসে যাত্রী পরিবহন করলেও সরকারী নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান, বিআইডব্লিউটিসি এবারের ঈদে ছিলো সম্পূর্ণই নিরুদ্বিগ্ন। দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীন স্টিমার সার্ভিসের জন্য সংস্থাটির হাতে ৬টি যাত্রীবাহী নৌযান থাকলেও তার কোনটিই যাত্রী পরিবহনে নেই।

রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা-বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বরিশালের আকাশ পথে তার সাপ্তাহিক ৪টি ফ্লাইটের বাইরে ঈদের আগে ২টি বিশেষ উড়ানোর ব্যবস্থা করলেও ঈদ পরবর্তী সময়ে ছিল চুপচাপ। তবে বিগত পুরো সপ্তাহ জুড়েই যাত্রীর চাপে জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটিও ৩২'শ টাকার টিকেট সাড়ে ৮ হাজার টাকারও বেশী দামে বিক্রী করছে। এব্যাপারে বিমান-এর বরিশাল বিক্রয় অফিসের জেলা ব্যবস্থাপকের ল্যান্ডফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

;

আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৭৫৭ সালে পলাশির আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। ২১৪ পর একাত্তরের ১৭ এপ্রিল পলাশি থেকে ৭০ কি.মি দূরে বৈদ্যনাথতলা তথা মুজিবনগর আম্রকাননে বাংলার সূর্য় উদিত হয়েছিল।

আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে তখনকার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়। পাশাপাশি এ দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন নানা কর্মসুচী গ্রহণ করেছে।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও মেহেরপেুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন বলেছেন, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল এক স্মরণীয় দিন। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদ্‌যাপনের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গঠনে অবদান রাখবে।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার পর বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা সমবেত হন। যুদ্ধের গতি বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ে একটি সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা সর্বসম্ততিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের নিরষ্কুশ জয় পান। এ নির্বাচনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ১০ এপ্রিল একটি সরকার গঠন করার সিদ্ধান্তে উপনীত হন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচরেরা।

পাকিস্তানের কারাগারেবন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন। আরও সিদ্ধান্ত হয় সৈয়দ নজরুল ইসলাম হবেন উপ-রাষ্ট্রপতি, যিনি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। তাজউদ্দীন আহমদ যুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন। সেদিনই গভীর রাতে (১১ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের রেকর্ড করা একটি ভাষণ গোপন বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। এই বেতার ভাষণের মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সরকার বিশ্ববাসীর সামনে আত্মপ্রকাশ করে। অস্থায়ী সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল ১৪ এপ্রিল ১৯৭১, চুয়াডাঙ্গায়। কিন্তু সেই গোপন সিদ্ধান্তটি সংবাদপত্রে ফাঁস হয়ে যায়। ফলে পাকিস্তানি সেনারা প্রবল বোমাবর্ষণ করে ওই স্থানে। আর এতে ভেস্তে যায় সেই পরিকল্পনা।

মুজিবনগরে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ মধ্যে বেঁচে আছেন মাত্র ২ আনসার সদস্য।

মেজর আবু উসমান চৌধুরীর পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ ইপিআর আনছারের একটি ছোট্ট দল নিয়ে নেতৃবৃন্দকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

গার্ড অব অনার শেষে স্থানীয় শিল্পীদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। বাকের আলীর কোরআন তেলাওয়াত এবং ভবরপাড়া গ্রামের পিন্টু বিশ্বাসের বাইবেল পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।

এরপর আওয়ামী লীগের চিফ হুইফ অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী বাংলার মুক্ত মাটিতে স্বাধীনতাকামী কয়েক হাজার জনতা এবং শতাধিক দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের সামনে দাঁড়িয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

ঐতিহাসিক সেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চিফ হুইফ অধ্যাপক ইউসুফ আলী রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্র প্রধান হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শপথবাক্য পাঠ করান।

এরপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজ উদ্দীন আহমেদের নাম ঘোষণা করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শক্রমে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য আইন, সংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে খন্দকার মোশতাক আহমদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এএইচএম কামরুজ্জামান এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং শপথ পাঠ করান।

মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্নেল এম এ জি ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ পদে কর্নেল আব্দুর রবের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহমেদ উপস্থিত সকলের সামনে ৩০ মিনিটের এক উদ্দীপনাময় ভাষণ দেন।

তিনি বলেন, আজ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হবে এ বৈদ্যনাথতলা এবং এর নতুন নাম হবে মুজিবনগর। তিনি বিশ্ববাসীর কাছে নতুন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিদান ও সামরিক সাহায্যের আবেদন জানান। সেদিন থেকেই বৈদ্যনাথতলা মুজিবনগর নামে পরিচিত।

বক্তৃতা এবং শপথগ্রহণ পর্ব শেষে নেতৃবৃন্দ মঞ্চ থেকে নেমে এলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন মেজর আবু উসমান চৌধুরী। উপস্থিত জনতার মূহুর্মূহু জয়বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মুজিবনগরের আম্রকানন। সব মিলিয়ে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বেই টানা ৯ মাস যুদ্ধ শেষে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলার স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে ঠাঁই করে নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

;

টাঙ্গাইলে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে টাঙ্গাইলের বাসাইলে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাইকানীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঈশ্বরগঞ্জ বাজার বণিক সমবায় সমিতির উদ্যোগে এই লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাক-ঢোলের বাজনায়, গানের তালে তালে যেন এ আনন্দময় উৎসবের আয়োজন। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার ঘন্টার তালে তালে চলে লাঠির কসরত। লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও পাল্টা আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা। তাতে দেখে উৎসাহ দিচ্ছেন দর্শকরা। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এসেছেন লাঠি খেলা দেখতে।

লাঠিয়াল সুভাষ বলেন,আমি ৪০ বছর ধরে লাঠি খেলা খেলি। লাঠি খেলার অনেক নাম আছে।এই খেলাটি আমরা ধরে রেখেছি।দর্শক লাঠি খেলা দেখে খুশি হয়। আমরা অনেক জায়গায় লাঠি খেলা খেলতে যাই। লাঠি খেলার মধ্যে দিয়ে আমরা দর্শকদের মাঝে হাসি খুশি ভাবে থাকি।

আরেক লাঠিয়াল পরেশ সরকার বলেন, আমার বাপ-দাদারা লাঠি খেলা খেলতো। তাদের কাছেই এই খেলা শিখেছি। শুধু পহেলা বৈশাখে লাঠি খেলা খেলি না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে লাঠি খেলায় অংশ নেই।

লাঠি খেলা দেখতে আসা বাসাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম মিয়া বলেন, লাঠি খেলা আগে গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে হতো। এখন সেই লাঠি খেলা বিলুপ্তির পথে। এই লাঠি খেলা দেখতে অনেক মানুষ এসেছেন। লাঠি খেলা আমাদের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনুক। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফিরে আসুক। আমরা এটাই আশা করি।

উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রাম বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতির একটি অন্যতম বাহন হলো লাঠি খেলা। শুধু লাঠি খেলা নয় বাঙ্গালী সংস্কৃতির প্রতিটি খেলায় আমাদের কাছে থেকে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। বাঙ্গালী সংস্কৃতি যুব সমাজের মাঝে তুলে ধরতে পারলে নেশা, মাদক, সন্ত্রাস মুক্ত থাকবে।

;

ধামরাইয়ে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মৎস খামারির মৃত্যু



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা জেলার ধামরাইয়ে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে আবু কাশেম (৪২) নামে এক মৎস ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের কিশোরী নগর এলাকায় এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

হাসপাতালে নেওয়ার পথে গাড়িতেই তার মৃত্যু হয়। মৃত আবু কাশেম ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব বালিথা এলাকার মৃত সমেজ উদ্দিনের ছেলে।

মৃতের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, দুপুরের দিকে নিজের চাষের পুকুরে মাছ ধরতে যান কাশেমসহ আরও চারজন। বিকেলের দিকে বৃষ্টি শুরু হলে আশ্রয় নিতে তারা পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। বেলা সোয়া ৩টার দিকে বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে হাঁটার পথেই ছিটকে পড়ে আহত হন কাশেম। উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী শামীম আহমেদ বলেন, আমরা মাছ ধরছিলাম। তখন বৃষ্টি নামে। আশ্রয় নিতে আমরা পাশের একটি বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। কাশেম ছিল সবার সামনে, ১০ গজ দূরে একজন আর ২০-২৫ গজ দূরে আমি আমার পেছনে অপরজর। তখনই বিকট শব্দে নীল রংয়ের একটা কিছু কাশেমের ঠিক কাছেই পড়ে। কাশেম মাটিতে পড়ে যায়। আমরাও পড়ে যাই। এরপর কয়েক মিনিট পর তাকে নিয়ে পাশের একটি বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। তারপর তাকে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মৃতের ছেলে মো. মাসুদ রানা বলেন, দুপুরের দিকে বাবা মাছ ধরতে পুকুরে যান। তিনটার দিকে শুনতে পারি বজ্রপাতের সময় তিনি পড়ে যান। হাসপাতালের নেওয়ার সময় জয়পুরা এলাকায় গাড়িতে তার মৃত্যু হয়। পরে বাড়ি ফিরে আসি।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবু তাহের সরদার বলেন, বজ্রপাতের সময় বিকট আওয়াজে সে ছিটকে পড়ে যায়। তখন তার সঙ্গে আরও চারজন ছিল। তারাই পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সে মারা যায়। বিষয়টি শুনে উপজেলা প্রশাসন তার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরাও তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

এ ঘটনায় খবর পেয়ে মৃতের বাড়ি গিয়ে পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ধামরাই উপজেলা প্রশাসন।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, এমন ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। কাল বৈশাখী ঝড়ের সময় কোনো দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে। এখানে বজ্রপাতে যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমরা মর্মাহত। তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতেও তাদের সব ধরনের সহযোগীতা দেওয়া হবে।

;