বঙ্গবন্ধু টানেল: জমির মালিকরা পেলেন ৫ কোটি টাকা
চট্টগ্রামের আনোয়ারা কর্ণফুলী (বঙ্গবন্ধু) টানেল প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ৫০ জন মালিক পেলেন ৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫১১ টাকা।
মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলা হলরুমে টানেলের প্রকল্প পরিচালক ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিরা ভূমির মালিকদের হাতে এই টাকার চেক তুলে দেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্বপ্নের 'বঙ্গবন্ধু টানেল' নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে চাপ কমাতে 'ওয়ান সিটি টু টাউন' করার প্রত্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এ টানেল। ফলে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ অঞ্চল আনোয়ারা উপজেলায় শহর গড়ে তোলা হচ্ছে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদের সভাপতিত্বে ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইদুজ্জামান চৌধুরীর সঞ্চালনায় চেক বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- কর্ণফুলী টানেলের উপ-ব্যবস্থাপক পরিচালক ড. অনুপম সাহা, উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) আমিরুল কায়ছার, বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলেমান, বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ূম শাহ্, চাতরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইয়াছিন হিরো, রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম প্রমুখ।
জানা গেছে, ৩.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ও চারলেনের টানেল নির্মাণে বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে চীন। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করবে।
টানেল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দ্রুত গতিতে চলছে টানেলে বোরিং মেশিন (টিবিএম) স্থাপনের কাজ। পতেঙ্গায় কাজের সুবিধার্থে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে নির্মাণ কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্প কাজের অগ্রগতি কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'প্রকল্পের কাজ ৩২ শতাংশ শেষ হয়েছে, প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।'
আরও জানা গেছে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে ঋণ চুক্তি সই হয়। ওই সময় শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন। প্রথমদিকে এই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ধরা হলেও দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় ব্যয় এক হাজার ৪৩৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বেড়েছে। নির্মাণ ব্যয়ের বাইরে টানেলের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বাবদ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। টানেল নির্মাণকালীন চার বছরে সুদ বাবদ ৪২৯ কোটি টাকা লাগবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের চিত্র বদলে যাবে। গড়ে উঠবে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের নিরবিচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ। সংযোগ স্থাপন হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। যুক্ত করা হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে। দুই টিউব সম্বলিত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল টানেল, পতেঙ্গা ও কর্ণফুলী প্রান্তের ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজসহ মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ২৭ কিলোমিটার বিশিষ্ট 'বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল' নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রামের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও।