মনোনয়ন না পেয়েও ন্যাম ভবন ছাড়েননি সাবেক এমপিরা
দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও দুই মাস আগে। নতুন সরকার গঠন শেষ হয়েছে সেও দুই মাস হতে চলল। এবার বেশকিছু সংসদীয় আসনে নতুন মুখ এসেছে। কাজেই নতুনদের জন্য পুরনোদের বাসা ছেড়ে দিতে হবে এটাই রেওয়াজ। তাছাড়া যিনি এমপি হতে পারেননি তার তো সরকারি বাসায় থাকারও কথা নয়।
এমপি হওয়া দূরের কথা মনোনয়নই নেননি- এমন এমপিরাও তাদের ন্যাম ভবনের বাসা দখলে রেখেছেন এখনো অবদি। সংসদ সচিবালয় থেকে চিঠি দেওয়ার পরেও ৩০ থেকে ৩৫ জন সংসদ সদস্য তাদের বরাদ্দকৃত বাসা বুঝিয়ে দেননি। যে কারণে নতুন এমপিদের বাসা বরাদ্দে হিমশিম খাচ্ছে সংসদ সচিবালয়।
মনোনয়ন পাননি এখনো বাসা দখলে রেখেছেন এমন অন্তত পাঁচ জন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কম এর প্রতিবেদকের সঙ্গে। তাদের অধিকাংশই বলছেন, ঢাকার বাইরে থাকায় ছাড়তে পারেননি। আবার কেউ বলছেন ঢাকায় উপযুক্ত পরিবেশে বাসা ভাড়া পাচ্ছেন না, তাই একটু সময় লাগছে। তবে বিষয়টি যে যুক্তিসঙ্গত হয়নি তারা স্বীকারও করেছেন।
বাসা না ছাড়ার তালিকাভুক্তদের মধ্যে দশম সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সদস্যরাই বেশি। অনেক সংরক্ষিত আসনের সদস্যরাও রয়েছেন।
একাদশ সংসদে দলীয় মনোনয়ন পাননি পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল। তার আসনে এবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ভোট করেছেন। গত ৩০ ডিসেম্বরের আগেই তিনি বুঝতে পেরেছেন ন্যাম ভবনের বাসা ছেড়ে দিতে হবে। তারপরেও ছাড়েননি।
এ বিষয়ে এ কে এম এ আউয়াল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি এলাকায় রয়েছি, ন্যাম ফ্ল্যাটের বাসায় না থাকলেও বুঝিয়ে দিইনি। কিছুদিনের মধ্যেই দিয়ে দেব। আসলে নির্বাচনের পর সেভাবে ঢাকায় যাওয়া হয় না, তাই একটু সময় লেগেছে। সংসদ সচিবালয় থেকে আমাদের গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। আমি দ্রুতই বুঝিয়ে দেব।’
কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এমপি হতে পারিনি, বাসা তো ছাড়তেই হবে। বাসায় এখনো আমার স্টিকার, ছবিসহ বিভিন্ন জিনিস রয়েছে। সেগুলো আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সরিয়ে নেব এবং বাসা বুঝিয়ে দেব।’
জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য হবিগঞ্জ-১ আসনের আব্দুল মুনিম চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে প্রথমে ন্যাম ভবনের বাসায় থাকার কথা বলেন। পরে যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, এবার তো সংসদ সদস্য হিসেবে ভোটও করেননি তাহলে কিভাবে বাসায় থাকেন? পরক্ষণেই বলেন, ‘আমি তো বাসায় থাকি না। এলাকায় থাকি। তবে বাসা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বুঝিয়ে দেব।’
দশম সংসদের জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের সদস্য মেরিনা রহমান এখনো ন্যাম ফ্ল্যাটের বাসাতেই থাকেন। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি চিঠি পাইনি। তবে নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু এমপি না, তাই বাসা ছেড়ে দিতে হবে। তবে এবার আমার ছেলে আহসান আদেলুর রহমান সংসদ সদস্য হয়েছে। আমি যতটুক জানতে পেরেছিলাম আমার ছেলেই উঠবে। পরে শুনেছি পাশের একটি ফ্ল্যাট আমার ছেলেকে দেওয়া হয়েছে। আমি শীঘ্রই আমার নামে বরাদ্দকৃত বাসা ছেড়ে দেব।’
দশম সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সদস্য উম্মে রাজিয়া কাজল এখনো ন্যাম ভবনের বাসাতেই থাকেন। তিনিও স্বীকার করেন, বাসাটি আরও আগেই ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। তবে ঢাকায় বাসা পেতে একটু সময় লাগাতে তার বাসা ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে আগামী সাত দিনের মধ্যে ছেড়ে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কাজল।
এ রকম প্রায় ৫০ জন সংসদ সদস্য যারা এবার দলের মনোনয়ন না পেলেও তার নামে বরাদ্দকৃত বাসাটি দখলে রেখেছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা চিঠি দিয়েছি। পুরনো এমপিদের মধ্যে যারা এবার এমপি হতে পারেননি, তাদের গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাসা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু অনেকেই এখনো দেননি। যেহেতু তাদেরও নতুন বাসা পেতে সময় লাগে তাই একটু সময় নিচ্ছি। আশা করি অতি দ্রুত তারা বাসা ছেড়ে যাবেন।‘
একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও ন্যাম ভবনে বরাদ্দকৃত বাসা ছাড়েননি এমন তালিকায় আরও রয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য গাজিপুর-৩ আসনের অ্যাড. রহমত আলী, জাতীয় পার্টির কুমিল্লা-৮ আসনের নুরুল ইসলাম মিলন, কুড়িগ্রাম-৪ রুহুল আমিন, নড়াইল-২ আসনের শেখ হাফিজুর রহমান, নাটোর-২ আসনের আবুল কালাম আজাদ।
জাপা’র সংরক্ষিত আসনের নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরী, এ, কে, এম মোস্তাফিজুর রহমান,সুকুমার রঞ্জন ঘোষ,এস. এম, আবুল কালাম আজাদ, অ্যাড. মোঃ রহমত আলী, মো. আব্দুর রহমান, বেগম হেপী বড়াল, বেগম রিফাত আমিন, বেগম ফাতেমা জোহরা রাণী, বেগম শাহানারা বেগম, বেগম সফুরা বেগম, বেগম আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী প্রমুখ। এরা সবাই এখনো ন্যাম ফ্ল্যাটের বাসা নিজের দখলে রেখেছেন।