ট্রান্সপারেন্সির ট্রান্সপারেন্সি ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নিজেদের ট্রান্সপারেন্সি ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দখলদার চিহ্নিত চাঁদাবাজদের পক্ষ নেওয়া এবং না জেনে এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে।
আর এই আঙ্গুল তুলেছেন সরকারের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা। এ বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি চিঠি নিয়ে। টিআইবি সম্প্রতি বরগুনার তালতলীতে নির্মাণাধীন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম, টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়ে উদ্বেগ এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়ার চিঠি পাঠায়।
টিআইবির চিঠিতে বলা হয়- ‘নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে টেংরাগিরিতে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয় নাগরিকদের নানাভাবে হয়রানি করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য সেখানে কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। হয়তো অধিগ্রহণ বলতে যা বুঝায় সে বিষয়টি টিআইবির কাছে পরিষ্কার নয়, নয়তো তারা কোনো রকম খোঁজখবর না নিয়ে শোনা কথার ভিত্তিতে এমন উড়ো চিঠি দিয়ে থাকতে পারে। এটা প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান নিজেরা ব্যক্তিমালিকদের সঙ্গে দরদাম করে জমি কিনেছেন। অথচ টিআইবির কোনো রকম তথ্য যাচাই বাছাই না করে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। এ নিয়ে পিডিবি ও বরগুনা জেলা প্রশাসন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া আরও একটি বড় ধরনের তথ্য বিভ্রাট রয়েছে টিআইবির চিঠিতে। ওই পত্রে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এই তথ্যটিও তারা কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়া দিয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের মে মাসে পত্রিকায় পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি নিজেরাই লেখে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৪ কিলোমিটারের মধ্যে। তাদের নিজেদের বক্তব্যের মধ্যেও দ্বিচারিতা রয়েছে। টিআইবির এই দু’টি তথ্যের মধ্যে কোনোটাই যথাযথ নয়। অনুমান নির্ভর এবং প্রকৃত সত্যকে গোপন করার অভিযোগ উঠেছে। দু’একটি দৈনিকে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট দেখা গেছে। তারাও যথাযথভাবে তথ্য তুলে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে আইসোটেক গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা ফিরোজ চৌধুরী দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, একই দৈনিকে প্রথমে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে ১ কিলোমিটার দূরত্বে এবং একমাসের ব্যবধানে একই দৈনিকের অপর রিপোর্টে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে প্রকল্পটির অবস্থান উল্লেখ করা হয়।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাফার জোন থেকে ৬ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। টিআইবির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য আশা করা যায় না। স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে চোথা নির্ভর না হয়ে আরও যথাযথ সোর্স থেকে নিশ্চিত হওয়া উচিত ছিল।
আবার বলা হয়েছে নালিশি জমির উপর স্থিতাবস্থা থাকা অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু করা হয়। এই তথ্যও সঠিক নয় বলে জানা গেছে। আদালতের কোনো স্থিতাবস্থা নেই। সে কারণে প্রশাসন ও পুলিশকে অহেতুক হেয় করা হয়েছে বলে মনে করে প্রশাসন।
বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘টিআইবিতো কতোকিছু লেখে। আদালতের কোনো স্থিতাবস্থা আছে বলে আমার জানা নেই। আর জমি জমার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের তো কোনো কাজ নেই। জমির বিষয়ে দেখবে জেলা প্রশাসন।’
আইসোটেক গ্রুপের পরিচালক আব্দুস সবুর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আদালতের কোনো স্থিতাবস্থা নেই। টিআইবির এই তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল। ছগির (পিতা:খবির) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী প্রায় ৩শ ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে আটক হয়। জামিনে বেরিয়ে আসার পর মামলার খরচের জন্য আমার কাছে টাকা চায়। সেই টাকা না দেওয়ায় কোর্টে গিয়ে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করে। মামলায় বলে আমার জমি না থাকলেও ভুয়া মালিকদের কাছ থেকে জমি কিনে দখল করা হচ্ছে। যে কারণে জনস্বার্থে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করছি। এরপর আর হাজির হচ্ছে না।’
টিআইবির চিঠির পরতে পরতে তথ্যগত ভুল। বলা হয়েছে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে হয়রানি করা হচ্ছে। এখানেও হয় মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, না হলে চাতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বিশেষ গোষ্ঠিকে খুশি করবার জন্য। তাদের এই তথ্য পুরোপুরি ভুল।
আবার বলা হয়েছে ভুক্তভোগিরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করায় তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। কিন্তু অভিযুক্তরা যে চীনা প্রকৌশলীকে মারপিট করে এবং প্রকল্পের জ্বালানি সরবরাহের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় সে বিষয়ে টিআইবি একেবারেই নিশ্চুপ। একপেশে ভাবে প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন।
যাদের পক্ষে টিআইবি সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা নানা ভাবে চাঁদাবাজির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যা পুলিশ, র্যাব ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দাবাহিনীর তদন্তে উঠে এসেছে। বিশেষ করে জেলা পুলিশের গোপনীয় প্রতিবেদন ঘাটলেই ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, তাহলে কি ধরে নেব টিআইবি চাঁদাবাজদের মদদ দিচ্ছে। যদি তা নাই হবে তাহলে তারা কেনো তাদের সুরে কথা বলছেন। তারা কি পারেন এভাবে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে?
টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জলবায়ু অর্থায়ন সুশাসন ইউনিটের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মু.জাকির হোসেন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
জাকির হোসেন খান ভূমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণ না করা হলে জেলা প্রশাসক কীভাবে যুক্ত থাকে।’
আর সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে দূরত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদেরকে বলেন, তারা স্যাটেলাইট ভিউ থেকে দেখুক। গাছ নাই মনে করে যদি আপনি বনের হিসেব থেকে বাদ দেন তাহলে সেটা যথাযথ হবে না।’