গ্যাস সরবরাহে জালালাবাদের সিস্টেম লস নয়, গেইন হয়
গ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লস নয় বরং সিস্টেম গেইন হয় বলে জানিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড।
বুধবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর চলমান গণশুনানির চতুর্থদিনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এদিন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি জালালাবাদ ও বাখরাবাদের আবেদনের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয়।
বিকেলে গ্যাসের দাম গড়ে ১০২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। এই প্রস্তাবের পক্ষে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা সিস্টেম লস নয়, সিস্টেম গেইন করেছে। অর্থাৎ যা গ্যাস কিনেছে তার চেয়ে ১.১২ শতাংশ বেশি বিক্রি করেছে। ধারাবাহিকভাবে গত তিন অর্থবছরে এমন হয়েছে। গত অর্থ বছরে ৩ হাজার ৩৩৮ এমএমসিএম গ্যাস কিনলেও বিক্রি করা হয়েছে ৩ হাজার ৪০৮ এমএমসিএম।
এ সময় বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম প্রশ্ন করেন, কী করে সিস্টেম গেইন হয়?
তখন কোম্পানির জিএম (অর্থ) বলেন, ‘আসলে আমরা একটি পয়েন্ট থেকে কিনে একটি পয়েন্টেই বিক্রি করি না। বরং অনেক পয়েন্টে বিক্রি করি। এ কারণে এমনটা হয়ে থাকে।’
পরে চেয়ারম্যান আবারও বলেন, `২ আর ২ যোগ করলে ৪ হবে, কিন্তু ৫ হয় না- এটাই চিরন্তন সত্য। ১০ ঘনমিটার কিনে, ১১ ঘনমিটার বিক্রি করছেন- এটা কোনো যুক্তি দিয়েই জাস্টিফাই করা যায় না। আপনাদের যুক্তি, দুই আর দুইয়ে পাঁচ হওয়ার মতো। এটার কারণ ফাইন্ড আউট করুন।’
এ সময় জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব জহির রায়হান বলেন, ‘এটা আমাকে অবাক করেছে। তবে এর সুবিধা যেনো গ্রাহকরাও সমান হারে পান। ‘
পরে বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর সব পক্ষের বক্তব্য শোনা হচ্ছে, তবে কেউ চাইলে লিখিত বক্তব্য জমা দিতে পারবেন। কমিশন সবকিছু বিবেচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে।’
জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব জহির রায়হান বলেন, ‘আমি কয়েকদিনের শুনানিতে যা বুঝলাম, তাতে বেশিরভাগ বক্তা আবাসিক এলাকায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। এখানে অল্প টাকা বাড়লেও অনেকে হৈ চৈ করছেন। সে কারণে আমি অনুরোধ করব বিইআরসি যেনো বিষয়টি বিবেচনা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখানে উপস্থিত থেকে অনেক কিছু শিখছি। অনেকে অনেক কথা বলেছেন। আমার মনে হয়েছে কিছু বিষয়ে আমাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে দুর্নীতির বিষয়ে আমাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। দুর্নীতি কমাতে পারলেও গ্রাহকরা কিছুটা রিলিফ পাবেন। আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করব, এ বিষয়ে আন্তরিক ভূমিকা রাখুন।’
উল্লেখ্য, বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩.১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৭৪ টাকা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮.১০ টাকা, প্রি-পেইড মিটারে ৯.১০ (ঘনমিটার) টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬.৪১ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া আবাসিকে একচুলায় ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩৫০ টাকা, দুই চুলা ৮০০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৪৪০ টাকা, সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ২.৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.৪৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯.৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮.০৪ টাকা, শিল্পে ৭.৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪.০৫ টাকা, বাণিজ্যিকে ১৭.০৪ টাকার পরিবর্তে ২৪.০৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
গণশুনানিতে ব্যবসায়ী ও বাম রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, ভোক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন অংশ নিয়ে এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধীতা করছেন। বুধবার টিসিবি ভবনের মূল ফটকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা গণশুনানি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিতরণ কোম্পানি কর্ণফুলী ও উত্তরাঞ্চলের বিতরণ কোম্পানি পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের প্রস্তাবের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।