সিক্স মার্ডারঃ ৬ বছর অন্ধকারে ডিবি, মামলা যাবে কাউন্টার টেররিজমে
দীর্ঘ ৬ বছরেও রাজধানীর গোপীবাগে বহুল আলোচিত সিক্স মার্ডারের কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা বলা হলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই তাদের হাতে। পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার তদন্তে জঙ্গিবাদের বিষয় উঠে এসেছে। তাই জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা বিশেষায়িত ইউনিট মামলাটির উপযুক্ত তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ হতে পারে।
এদিকে কথিত ধর্মগুরু লুৎফর রহমান ফারুকসহ ৬ জনকে গলা কেটে হত্যার এ ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবির সদস্যসহ ৬ জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন এ বিষয়ে জবানবন্দিও দিয়েছে। তবুও মামলাটি সামনের দিকে এগোতে পারছে না।
দীর্ঘ প্রায় ৬ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই মামলাটি ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটে স্থানান্তরের আবেদন করেছে ডিবি।
গত ৬ বছরে তাদের অগ্রগতি সম্পর্কে ডিবির তদন্তকারী সূত্র বলেছে, ধর্মীয় ভিন্ন মতাদর্শের কারণে গোপীবাগের ওই ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এ পর্যন্ত গ্রেফতার ৬ জনের মধ্যে মিঠু নামের এক জঙ্গি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সে নিজে ওই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়নি, তবে জেএমবির বেশ কয়েকজন সদস্য হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে উল্লেখ করেছে।
জেএমবি'র কোন সদস্যরা তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের অংশ নিয়েছে? এমন প্রশ্নে (গোয়েন্দা পুলিশ) ডিবি থেকে বলা হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত জেএমবি সদস্যরা জঙ্গিবিরোধী বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে বলে ধারণা। এ কারণে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা শনাক্ত না হওয়ায় হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট বর্ণনা, তথ্যা-প্রমাণ জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মামলার অগ্রগতির সম্পর্কে নিহত ফারুকের ছোট ছেলে ও মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল ফারুকের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, মামলায় দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি আমরা দেখি নি। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসল অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের শাস্তি দাবি আমরা, প্রথম থেকেই জানিয়ে আসছি। পুলিশও চেষ্টা করছে। তবে এখনও আমরা কিছু জানতে পারিনি।
অন্যদিকে এ পর্যন্ত সিক্স মার্ডার মামলায় তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। বর্তমান এই মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার শিকদার মো. হাসান ইমাম মামলার বিষয়ে বার্তা২৪.কমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই মামলার তদন্ত শেষ করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে মামলাটির সঙ্গে জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় সিটিটিসি ইউনিটে স্থানান্তরের আবেদন জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গ, ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গোপীবাগের আরকে মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বর আয়না বাড়ির দোতলায় কথিত ধর্মগুরু লুৎফর রহমান ফারুক (৬০) ও তার ছেলে মনির হোসেন (৩০), অনুসারী সাইদুর রহমান (৩০), মজিবর রহমান (৩২), রাসেল (৩০) এবং বাসার তত্ত্বাবধায়ক মঞ্জুর আলম মঞ্জুকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
পরদিন ওয়ারী থানায় অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন ফারুকের ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল ফারুক। ওই দিনই থানা পুলিশের কাছ থেকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় ডিবি।
এর আগে ১৯৯৯ সালের দিকে ফারুক ঢাকায় এসে পীর দাবি করে নিজের মতাদর্শ প্রচার শুরু করেন। স্ত্রীসহ হজ করে আসার পর তার অনুসারীরা প্রচার করেন, ফারুক স্বপ্নে ইমাম মাহাদীর সেনাপতি হয়েছেন। সেই থেকে তিনি নিজেকে ইমাম মাহাদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন।