পোড়া, পচা-গলা লাশ শনাক্তে ভরসা ডিএনএ টেস্ট
অগ্নিকাণ্ডে পোড়া, পচাগলা লাশ ও অজ্ঞাতনামা লাশ শনাক্তকরণে ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) পরীক্ষাই এখন একমাত্র ভরসা। তাছাড়া যেকোনো বীভৎস লাশ এবং ক্লুলেস (সূত্রহীন) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ফরেনসিক ডিএনএ প্রযুক্তি এখন একমাত্র উপায়।
গত ফেব্রুয়ারিতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহত অগ্নিকাণ্ডে অধিকাংশ লাশ শনাক্তকরণে কাজ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ইউনিট। সর্বমোট ১৬টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেছে এই সংস্থাটি। তবে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা সম্ভব হলেও মর্গে এখনো পড়ে আছে খণ্ড হয়ে যাওয়া দুইটি লাশ। যাদের কারো সঙ্গেই ডিএনএ মিল পাওয়া যায়নি। দাবিদার কোনো পরিবারের সঙ্গে মিলে গেলে এ দুইটিও হস্তান্তর করা হবে।
ফায়ার সার্ভিসের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ ৮৮ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকার। প্রাণহানি ঘটেছে এক হাজার ৪০০ জন। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচ হাজার জন।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আলী আহমেদ খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, যে কোনো অগ্নিকাণ্ডের লাশ সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত থাকে। অধিকাংশ লাশই শনাক্তকরণে জটিলতা দেখা দেয়। সচরাচর ফরেনসিক পরীক্ষা ছাড়া এ লাশগুলো একেবারে শনাক্ত করা যায় না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, শুধু পোড়া না, পচা লাশ, অর্ধগলিত লাশ কিংবা দুর্ঘটনায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত লাশ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেসব ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার শরণাপন্ন হতে হয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান বলেন, ডিএনএ পরীক্ষা বা ডিএনএ প্রোফাইল মূলত একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি। যার মাধ্যমে ডিএনএ বিশেষ অঞ্চল তুলনা করে, একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে মিল বা অমিল খুঁজে বের করা যায়। ডিএনএ -এর উৎস হিসেবে কাজ করে এমন নমুনা যেমন, রক্ত, লালা, হাড়, দাঁত, চুল, পেশী কলা, টুথব্রাশ, পোশাক, সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। পরে অন্যজনের সঙ্গে ম্যাচ করার চেষ্টা করা হয়।
বাংলাদেশে একমাত্র জাতীয় ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি, ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউক্লিয়াস মেডিসিন ভবনে। তাছাড়া সরকারিভাবে একটি ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি সিআইডিতে রয়েছে।
সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরির ডেপুটি চিফ এ্যানালিস্ট আহমেদ ফেরদৌস বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের একটি আধুনিক পরীক্ষাগার রয়েছে। এই ল্যাবে কেবল মামলা তদন্তের প্রয়োজনে ফরেনসিক ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়।
অন্যদিকে, ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু হওয়া ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি এ পর্যন্ত সাড়ে ১৫ হাজারের অধিক সংখ্যক ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এছাড়া প্রায় পাঁচ মামলার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বিচারের সহায়তা দিয়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে।