আইন না মেনেই চলছে তামাক পণ্যের প্রচারণা
রংপুর মহানগরীতে আইনের তোয়াক্কা না করেই দিব্যি চলছে তামাক পণ্যের অবৈধ প্রচার-প্রচারণা। বহুজাতিক টোব্যাকো কোম্পানিগুলো ক্রেতা-বিক্রেতাসহ ধূমপানকারীদের রঙছটা বিজ্ঞাপন আর পুরস্কার প্রণোদনায় আকৃষ্ট করছে, যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিরোধী। এ ধরনের কার্যক্রমে প্রতিনিয়িত নগরবাসী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়লেও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো পদক্ষেপ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রংপুর মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের তামাক পণ্যের অধিকাংশ দোকানেই টোব্যাকো কোম্পানিগুলোর অবৈধ বিজ্ঞাপন আর পুরস্কার-প্রণোদনায় ভরপুর। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী এসব বিজ্ঞাপন ও পুরস্কার-প্রণোদনা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি আইন লঙ্ঘন করে জনসম্মুখে দেদারছে চলছে ধূমপান।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ সংশোধন) আইন, ২০০৫ (২০১৩) এর ধারায় বলা আছে, বিক্রয়স্থলে তামাক পণ্যের প্যাকেট বা মোড়ক সাদৃশ্য কোনো দ্রব্য, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যাবে না।
এছাড়া তামাক ব্যবহারে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোনো উপহার, পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান আইনত দণ্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনের এই ধারা অমান্যকারীকে ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা জরিমান বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
মহানগরীর অধিকাংশ তামাক পণ্য বিক্রেতার দোকান বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানির পক্ষ থেকে দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজানো হয়েছে। দোকানে দোকানে শোভা পাচ্ছে সিগারেট কোম্পানিগুলোর হ্যান্ডবিল, স্টিকার ও লিফলেট। আর দোকানদারকে বেশি বিক্রির ওপর দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের উপহার। এছাড়া সিগারেট-বিড়ি কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোম্পানির লোগো সম্বলিত শার্ট-প্যান্ট পড়েও চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা।
মহানগরীর পাবলিক প্লেস হাসপাতাল চত্বর, বাস টার্মিনাল, যাত্রী ছাউনি, গণপরিবহন, সরকারি বিভিন্ন অফিস, আদালত চত্বর, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, খাবার হোটেল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে ধূমপানের মহোৎসব। অথচ আইন অনুযায়ী এসব জনসম্মুখে ধূমপান করলে ৩০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন রয়েছে কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগ না থাকায় প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ স্বাস্থ্যহানির শিকার হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘মহানগরীকে তামাকমুক্ত করতে হলে প্রথমে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা দরকার। যেই কমিটিতে যুবসমাজকে বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে। যারা তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতামূলক বিভিন্ন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করবে। তাহলে আস্তে আস্তে রংপুর মহানগরীকে তামাকমুক্ত করা সম্ভব।’
রংপুর জেলা ও বিভাগীয় কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য সচিব সুশান্ত ভৌমিক বলেন, ‘বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণের যে আইন, সেখানে জেল-জরিমানার যে বিষয়গুলো রয়েছে তা খুবই দুর্বল। তারপরও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যে বিধানগুলো রয়েছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিটি করপোরেশেনের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা দরকার। এই টিমের সদস্যগণ নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাৎক্ষণিকভাবে জেল-জরিমানা চলমান রাখলে দ্রুত আইনটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) এনামুল হাবিব বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কোথাও আইনটি লঙ্ঘিত হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালন করে জেল-জরিমান করা হবে।’
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘এতোদিন রংপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিল না। খুব সাম্প্রতিক সময়ে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনাও দেওয়া আছে। এখন থেকে তামাকজাত দ্রব্য সেবনের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত ও ধূমপানে নিরুৎসাহিতকরণে সিটি করপোরেশন কাজ করবে।’