মালয়েশিয়া থেকে ফিরতে হচ্ছে কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিককে



ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
আউটসোর্সিং কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রাসেল আহমেদ হৃদয়ের মতো কয়েক লাখ বাংলাদেশি, ভিসা নবায়নের নতুন কোনো সুযোগ না দিলে এই মেয়াদ শেষে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরতে হবে তাদের/ ছবি: সংগৃহীত

আউটসোর্সিং কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রাসেল আহমেদ হৃদয়ের মতো কয়েক লাখ বাংলাদেশি, ভিসা নবায়নের নতুন কোনো সুযোগ না দিলে এই মেয়াদ শেষে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরতে হবে তাদের/ ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখা ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দোহাই দিয়ে কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার। এই লক্ষ্যে প্রায় ২৭৯টি আউটসোর্সিং কোম্পানি বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন এসব কোম্পানির মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়া শ্রমিকরা। সেই সাথে ক্ষতির মুখে পড়বেন মালয়েশিয়া যেতে কোম্পানিগুলোর সাথে চুক্তিবদ্ধ বাংলাদেশিরাও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশটির আউসোর্সিং কোম্পানিগুলো তালিকা করে বন্ধ করা হয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে লাখ লাখ শ্রমিক চুক্তিভিত্তিকভাবে মালয়েশিয়ায় গেছেন। ফলে এই কোম্পানিগুলো বন্ধ হওয়ায় মালয়েশিয়া থেকে নির্বাসিত হওয়ার আশঙ্কায় পড়েছেন এসব অভিবাসীরা। তাদের আর নতুন করে ভিসা নবায়ন নাও হতে পারে।

মালয়েশিয়ান কর্মকর্তারা বলেছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। যার মধ্যে দুই লাখ শ্রমিকের ভিসা নবায়ন না হলে তাদের দেশে ফিরতে হবে। আর অনিয়মিত আরও চার লাখ শ্রমিককে দেশে ফিরতে হতে পারে। ফলে প্রায় ছয় লাখ শ্রমিক এখন অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। সেদেশের কর্তৃপক্ষ অবৈধ অভিবাসীদের আর বৈধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এলএলএইচ গোল্ডেন এসডিএন বিএইডি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধভাবে ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া যান রাসেল আহমেদ হৃদয় নামের এক বাংলাদেশি যুবক। এক বছর পর আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নেন তিনি। গতকাল এই কোম্পানির আউটসোর্সিং বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছে সে দেশের সরকার। এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন তিনি।

হৃদয় বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মালয়েশিয়ান সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে চরম অনিশ্চিয়তায় পড়েছি। লাখ লাখ টাকা দিয়ে অনেকে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে। এখন এসব কোম্পানির আউটসোর্সিং বিভাগ বন্ধ হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি আমরা।’

এদিকে দেশটির অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও দেশটিতে অবৈধদের বসবাস ঠেকাতে বিভাগটি কাজ করছে এবং দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার তাগিদে কোনো পক্ষের সঙ্গে আপোস করা হবে না।

এদিকে গত ৭ থেকে ৮ মার্চ মালয়েশিয়ায় সেদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম।

তিনি বলছেন, মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন তারা আর অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করবেন না। মালয়েশিয়ায় ছয় লাখেরও বেশি অনিয়মিত বাংলাদেশি রয়েছে এবং তাদেরকে নির্বাসিত করা হতে পারে। তবে ছয় লাখের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ভিসা সংক্রান্ত কাগজপত্র বৈধকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও বাকি তিন লাখের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম বলছেন, আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলো বন্ধের ক্ষেত্রে হাইকমিশনের সাথে ঐ কোম্পানি অথবা মালয়েশিয়া সরকার যোগাযোগ করেনি। তবে এটি একটি ভাল পদক্ষেপ। ২০১৬ সালের পর আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে আর বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। তবে এর আগে বহু সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা হয়েছে। মূলত অভিবাসন আইন লঙ্ঘনকারীদেরই আটক করা হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে আউটসোর্সিং কোম্পানি বিপি অ্যাডভান্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম-কে জানান, প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের মধ্যে দুই জন বাংলাদেশি ও একজন ভারতীয়। বাংলাদেশি দুই মালিক গত তিন বছরে প্রায় ৮০ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য। কিন্তু তাদের ভিসা এখনো হয়নি। ফলে তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আর আউটসোর্সিং বিভাগ বন্ধ হওয়ায় তাদের ভিসা হওয়ার সম্ভবনাও নেই।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২১ মার্চ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ অভিবাসীদের আটকের লক্ষ্যে চার হাজার ৪৫৪টি অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে আটক করা হয় ৬৩ হাজার ২৮৬ অভিবাসীকে। এদের মধ্যে তিন হাজার ১৬৪ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে আটকদের মধ্য থেকে গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ১৩ হাজার ৬৭৭ জন অবৈধ অভিবাসীকে।

তবে শুধু শ্রমিকই নয়, অবৈধ অভিবাসী রাখার অপরাধে গ্রেফতার করা হয় ৩১১ জন স্থানীয় মালিককে। আটকদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ান চার হাজার ৭২৯, ফিলিপাইন এক হাজার ৩৬২, মিয়ানমার এক হাজার ৩৫৭ জন। এছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ও ভিয়েতনামের নাগরিকরাও আটক হন।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন রেগুলেশন অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করে কাগজপত্র থাকলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় জেল-জরিমানা করা হচ্ছে বলে জানান ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক ইন্দিরা খায়রুল দাজাইমি। দেশটির অভিবাসন বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী-মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশিকে কোনোভাবেই অবস্থান করতে দেয়া হবে না।

এছাড়া গত বছর ৭২ হাজার ৩৬১ জনকে পাসপোর্ট ও ভিসা জটিলতার কারণে অভিবাসন আইনে পাঁচ বছরের জন্য মালয়েশিয়ায় প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিদিনই অবৈধ অবস্থানের অভিযোগ এনে ধরপাকড় চলছে। কুয়ালালামপুরের বাইরেও যেসব এলাকায় বাংলাদেশিদের অবস্থান বেশি ঐসব এলাকায় চলছে অভিযান।

মালয়েশিয়া প্রবাসী কমিউনিটি নেতারা বলছেন, ‘ভয়ে ভয়ে দিন-কাটানো এই অবৈধ বাংলাদেশিরা অনেকেই অভিযোগ করছেন, কথিত এজেন্টদের হাতে প্রতারিত হওয়াতেই তারা আজ অবধি দেশটির বৈধ শ্রমিকের স্বীকৃতি পাননি। বহুদিন মালয়েশিয়ায় থাকার পরও যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, এই ধরপাকড় অভিযান নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে মালয়েশিয়ার মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অভিবাসীরা স্ব-ইচ্ছায় দেশে ফিরতে পারেন। তবে জোরপূর্বক কাউকে দেশে ফেরানো যুক্তিসঙ্গত নয়। এক্ষেত্রে সরকারের সঠিক উদ্যোগ জরুরি।

এর আগে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার জন্য পরিচালিত রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম শেষ হয়েছিল গত বছরের ৩০ জুন। এরপর আরও এক মাস সময় বাড়িয়ে ৩০ আগস্টের মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল দেশটির সরকার। ইতোমধ্যে সেই সময়ও শেষ হয়ে গেছে।

   

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মানবাধিকার সম্পর্কিত একটি নতুন শাখা চালু করার পরামর্শ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বৈঠকে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কুতুপালং এবং ভাসানচর পরিদর্শনের জন্য বৈঠকে প্রস্তাব করা হয়।

কমিটির সভাপতি এ কে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শাহরিয়ার আলম, নাহিম রাজ্জাক, নিজাম উদ্দিন জলিল, নুরুল ইসলাম নাহিদ, হাবিবুর রহমান, সাইমুম সারওয়ার, জারা জাবীন মাহবুব অংশ নেন।

 

;

ঢাকাসহ ৮ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকাসহ দেশের আট জেলার ওপর দিয়ে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। সেইসঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলা হচ্ছে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট জেলার ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে, আবহাওয়া অফিসের অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এ অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

;

ইসলামি সংগীত শিল্পী সালমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় নিহত তিনজনের একজন সালমান আজাদী। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং ইসলামি সঙ্গীত শিল্পী ও প্রশিক্ষক। তার মৃত্যুতে ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালমান আজাদী।

তিনি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার হাপানিয়া এলাকার মৃত কোরবান আলীর ছেলে। নিহত সালমান স্ত্রী ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে নগরীর মাসকান্দা এলাকায় থাকতেন।

জানা গেছে, ইসলামি সংঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ময়মনসিংহে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন সালমান আজাদী। ইসলামি সঙ্গীতের প্রসারে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন সালমান ইসলামি সঙ্গীত একাডেমি। প্রায় দুই বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ইসলামি গান শেখাতেন। এছাড়াও ত্রিশালে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ইসলামি সঙ্গীতের প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি।

উদীয়মান এ ইসলাম সঙ্গীত শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাভিভূত পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, ক্যাম্পাসের সহপাঠী-শিক্ষার্থী, ইসলামি সংস্কৃতি প্রেমিসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা। শতশত মানুষের ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেন শোক বইয়ে পরিণত হয়েছে সানমানের ফেসবুক টাইমলাইন।

আব্দুর রহিম ভূঁইয়া নামে একজন লিখেছেন, কিছু মৃত্যুর সংবাদ মানুষকে ভীষণ বেদনা দেয়, ভীষণ কষ্ট দেয়। আর এই মৃত্যু যদি অকালে হয় বা আকস্মিক হয় তার শোক কাটিয়ে উঠা মোটেও সহজ না। সালমান আজাদী ইসলামিক শিল্প একাডেমির শিক্ষক ও স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। তিনি বাচ্চাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। বাচ্চাদের সুস্থ ধারার ইসলামিক সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যাপারে তার অনেক পরিকল্পনা ছিল।

হানজালা রমজান মুন্না নামে আরেকজন লিখেছেন, প্রিয় হাসিমাখা মুখ ও সুন্দর করে কথা উপস্থাপন ছিল যার নৈমিত্তিক অভ্যাস। ইসলামি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ায় পেছনে ময়মনসিংহ শহরে যাদের অবদান, তাদেরই একজন ছিলেন। মনের মধ্যে ছিল ইসলামের জন্য তীব্র ভালবাসা। ভাইয়ের ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতের উঁচু মাক্বাম দান করুন।

স্বামীর শোকে বাকরুদ্ধ স্ত্রী খাদিজা খাতুন জানান, সালমান নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার ক্লাস করতেই ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ত্রিশাল যাচ্ছিলেন তিনি।

এদিকে সালমান আজাদীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। এক শোকবার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৭-'১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে স্নাতকোত্তরে ২০২১-'২২ সেশনে অধ্যয়নরত মো. সালমান আজাদী (২৫) বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় ত্রিশালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়-পরিবারের পক্ষে আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। সেইসঙ্গে সালমানের বিদেহী আত্মার চিরশান্তির জন্য প্রার্থনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন জানান, বিনা ময়নাতদন্তের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে, ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার ত্রিশাল বাজারের সাইফুল কমিশনারের বাসার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত অন্য দুইজন হলেন, উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের রুদ্রগ্রামের এনামুল হকের মেয়ে রুবাইরা তাজনিম (২) ও চিকনা মনোহর এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩৪)।

;

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরাঙ্গনাদের সম্মাননা দাবি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের বহু যুবক ও ছাত্র জনতার আত্মহুতির অবদান। এই যুদ্ধে নারীদের অবদানও কোন অংশে কম নয়। এ যুদ্ধে অসংখ্য নারী সরাসরি অংশগ্রহণের পাশাপাশি ইজ্জতও দিতে হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বেদনা দত্ত। বেদনা দত্তের মতো বীরাঙ্গনাদের স্মরণীয় করে রাখতে বীরাঙ্গনা স্মৃতিসৌধ বা রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়দের।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বড়ি-বাড়ির বেদনা দত্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বেই স্বামী মারা যাওয়ায় অবুঝ তিন শিশুকে নিয়ে অনেক দুঃখ কষ্টে দিন পার করছিলেন। ঠিক সেই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাওয়ানোসহ তাদের নানাভাবে সহয়তা করতেন বেদনা দত্ত। আর এমন খবর পেয়ে রাজাকার সদস্যরা বেদনাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে পাকিস্তানি হায়েনাদের হাতে তুলে দেয়। বাড়ির পাশে রেল ব্রিজের নিচে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে ৪ দিনে নির্যাতন শেষে মৃত ভেবে পাশের জঙ্গলে ফেলে দেয় বেদনাকে।

পরে সেখান থেকে দুইদিন পর প্রাণ ফিরে পেলেও ইজ্জত আর সন্তানদের জীবন রক্ষায় এলাকা ছেড়ে নিজেকে আড়াল করে রাখেন তিনি। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে আসলেও জীবন চলে অনাহারে অর্ধাহারে। এভাবেই পার করতে হয়েছে জীবনের প্রায় অর্ধশতাব্দি। অবশেষে এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের নজরে আসলে তার কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে তাকে বীরাঙ্গনা হিসেবে নথিভুক্ত করেন এবং ভাতার আওতায় আনেন। সেই সাথে মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে তার জন্য তৈরি করা হয় বীর নিবাস। এখন এলাকাবাসীর দাবি বেদনা দত্তের অবর্তমানে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণের। অথবা তার নামে স্থানীয় কোন রাস্তা বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি মুক্তিযুদ্ধাসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় জিনারদী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উদ্দিন পাঠান বলেন, আমরা জানতামই না আমাদের এলাকায় একজন বীরাঙ্গনা রয়েছে। সরকার যখন বেদনা দত্তকে একটি বীর নিবাস তৈরি করে দেয় তখনই জানতে পারি এই এলাকায় একজন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্মম নির্যাতনের শিকার এই নারী হয়তো একদিন থাকবেনা। কিন্তু তাকে যেনো পরবর্তী প্রজন্ম মনে রাখে এবং স্মরণ করে সেজন্য তার নামে একটি সড়কের নামকরণ বা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানাই।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেদনা দত্তের মতো আরও যারা বীরাঙ্গনা রয়েছেন তাদের অসামান্য অবদান রয়েছে। নরসিংদীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছে যা প্রক্রিয়া দিন রয়েছে। অচিরেই এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

;