আত্মসমর্পণ করবে ৮০ জন সর্বহারা সদস্য
জঙ্গি ‘বাংলা ভাই’ এর এলাকাখ্যাত রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ৮০ জন সর্বহারা সদস্য আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন। উত্তরাঞ্চলের দুর্ধর্ষ চরমপন্থিনেতা আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবুর নেতৃত্বে চরমপন্থিরা আত্মসর্মপন করবে বলে নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ।
সূত্রমতে, রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলা ও কুষ্টিয়ার জেলার চরমপন্থি সদস্য ও মাদকব্যবসায়ীরা ওইদিন আত্মসমর্পণ করবেন। সরকার ঘোষিত আত্মসমর্পণের সুযোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পুলিশ সূত্রমতে, আগামী ৯ এপ্রিল পাবনা জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত ওই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারীসহ (বিপিএম, পিপিএম) পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রাজশাহীর বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ সোমবার (০১ এপ্রিল) বার্তা২৪.কম-কে জানান, ৯ এপ্রিল পাবনা জেলা স্টেডিয়ামে রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলাসহ কুষ্টিয়া জেলার অপরাধীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। সেখানে বাগমারার অপরাধীদের সংখ্যাই বেশি। বিভিন্ন সময়ে তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানোয় তারা পুলিশের ভয়ে তটস্থ। তাই আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাই।
রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ জানান, সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নিয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও পুলিশের বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে অপরাধীরা নিজেদের সমর্পণের কথা জানিয়েছেন। অপরাধীরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে পারে, সেভাবে তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হবে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘বাংলা ভাইসহ জঙ্গিদের উত্থানের পর রাজশাহীর বাগমারাসহ এ অঞ্চলে যে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তৃতি ঘটেছিল, এই আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তা প্রশমিত হবে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীসহ অপরাধীদেরও সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বাগমারা থানা সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরাঞ্চলের সর্বহারা গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবু। তিনি বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের চৌকিপাড়া মহল্লার নূরুল হুদার ছেলে। দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তবে অবস্থান পরিবর্তন করে বাবু গ্রেফতার এড়িয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
সর্বশেষ চরমপন্থি বাবু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাগমারায় যুবলীগ নেতা চঞ্চল কুমারকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতারে সাড়াশি অভিযান অব্যাহত রাখে। ফলে তিনি কোনোভাবেই আর এলাকায় ফিরতে পারেন নি। পরে তিনি ও তার দলবল আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।
আত্মসমর্পণ তালিকায় নাম লেখানো বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা এলাকার একজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের মোবাইলে কথা হয়। পেশায় ভ্যানচালক ওই ব্যক্তি নাম-পরিচয় প্রকাশ না শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমাদের নেতা বাবু ভাই, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খারাপ কাজ ছেড়ে দিবো। আমরাও তার সঙ্গে একমত হয়ে ভালো পথে ফিরতে চাই। পরিবার-পরিজন ছেড়ে সবসময় দৌড়ে বেড়ানো, ভয় নিয়ে চলার চেয়ে আত্মসমর্পণ করা অনেক ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের সিভিল পোশাকের লোকজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভয় দিয়েছেন। আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। তাই আমরা মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজ ফিরতে চাই। সরকার আমাদের মাফ করে দিয়ে ভালো পথে চলার সুযোগ দেবে। এজন্য আমরা প্রায় সবাই ৯ তারিখ (এপ্রিল) পাবনা স্টেডিয়ামে যাবো। মন্ত্রীর (স্বরাষ্ট্র) কাছে মাফ চাইবো।’
জানতে চাইলে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাগমারা রক্তাক্ত এক জনপদে পরিণত হয়েছিল। এখানে জাহেলিয়াতের যুগের সূচনা করেছিল কিছু জঙ্গি, সন্ত্রাসী। এলাকার সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ও মগজ ধোলাই করে বিপথগামী করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাগমারাকে শান্ত রাখার জন্য আমি চেষ্টা করে গেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি গত তিন মেয়াদে বাগমারার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। অশান্ত বাগমারাকে আজকের অবস্থায় আনতে কতটা পরিশ্রম ও ধৈর্য নিয়ে কাজ করতে হয়েছে, সেটা এলাকার মানুষ খুব ভালো করে জানেন। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উন্নয়ন ও শান্তির ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টায় অপরাধীদের আত্মসমর্পণ ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। আমার বিশ্বাস-তারা ভুল বুঝতে পেরেছে, তাদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজ ও পরিবারে ফেরানোর ব্যবস্থা করবে সরকার।’