সমন্বয়হীনতায় ভেস্তে যেতে পারে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা
প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন কিংবা বাজারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। কোথাও সামান্য আগুন আবার কোথাও বড় আগুনের ভয়াবহতা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে ৮ টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সব থেকে ভয়াবহ ছিল বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুন লাগার ঘটনা। এ ঘটনায় ২৬ জন নিহত হওয়াসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
এছাড়া গুলশান-১ নাম্বারের ডিএনসিসি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে ৩০০ টির মতো দোকান পুড়ে যায়। এতে কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এসব অগ্নিকাণ্ডের পর বহুতল ভবনগুলোর অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ভবনগুলোতে ফায়ার এক্সিট না থাকার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে দেখা গেছে, বিল্ডিংয়ের মালিক বা ডেভেলপার যেমন দায়ী। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সমানভাবে দায়ী। বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি এসব ভবনের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে চুড়িহাট্টা নূর ম্যানশন থেকে শুরু করে বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন দুর্ঘটনায় মরদেহের মিছিল দেখতে হয়েছে সারা দেশকে।
আলোচিত এই দুর্ঘটনাগুলোর পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও রাজউক নড়েচড়ে বসেছে। যেকোনো মূল্যেই আগুনের ভয়াবহতা থেকে রাজধানীবাসীকে বাঁচাতে একযোগে কাজ করছেন তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, চুড়িহাট্টা আগুন দুর্ঘটনার পর পুরান ঢাকা এলাকায় বিশেষ টাস্কফোর্সের অভিযানে বিপুল সংখ্যক কেমিক্যালের গোডাউন বন্ধ করেছে ডিএসসিসি।
এদিকে, বনানীর এফআর টাওয়ারের দুর্ঘটনার পর একই সঙ্গে মাঠে কাজ করছে ডিএনসিসি ও রাজউক।
ডিএনসিসি ও রাজউক সূত্রে জানা গেছে, এফআর টাওয়ারের দুর্ঘটনার পর ডিএনসিসির কমপ্লায়েন্স টিম বহুতল ভবনগুলো পরিদর্শনে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সংস্থাটির একাধিক দল বিভিন্ন এলাকার ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা, ফায়ার অ্যালার্ম, জরুরি নির্গমন পথসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করছে। সেসব ঠিক না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, নকশাবহির্ভূত ভবন চিহ্নিত করতে অভিযানে নেমেছে রাজউক। অভিযানে রাজউকের ৮টি জোনের ২৪টি টিম পরিদর্শন করেছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও বহুতল ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যাচাইয়ে মাঠে নেমেছে ১০টি দল।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেরিতে হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ কাজ যেন লোক দেখানো না হয়। রাজধানীকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে যেন তারা এ কাজ চালিয়ে যান।
একই বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষদের দেরিতে হলেও পদক্ষেপ নেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দীর্ঘ দিনের গাফেলতির কারণে রাজধানীর ভবনগুলোর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে তাড়াহুড়ো করে যেন লোক দেখানো কাজ না করা হয়। এতে করে এক শ্রেণির অস্বাদু ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করে কাজগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে করা হয়। এই কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে করা হলে আগুন দুর্ঘটনার ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
অন্যদিকে, আরও বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, রাজধানীকে ভয়াবহ আগুন দুর্ঘটনা থেকে বাঁচানোর জন্য যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে তা গঠনমূলক। কিন্তু ডিএসসিসি, ডিএনসিসি ও রাজউকের কাজে প্রচুর সমন্বয়হীনতা রয়েছে। ফলে এর সুফল নাও পেতে পারেন রাজধানীবাসী।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এফআর টাওয়ারের আগুনের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করার বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রচুর সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। এতে করে সিদ্ধান্তগুলোর কার্যকারিতা অনেকাংশ কমে যাবে।
তিনি বলেন, ‘আগুনের ভয়াবহতা থেকে রাজধানীবাসীকে বাঁচাতে হলে এসব সিদ্ধান্ত একজনের নেতৃত্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মেয়র সব থেকে ভালো পছন্দ হতে পারে।’