দেশের জেলখানায় ৪৯৫ বিদেশি বন্দি
ঢাকা: বাংলাদেশের জেলখানায় বিভিন্ন দেশের ৪৯৫ জন নাগরিক বন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। 'কমবেটিং ট্র্যাফিকিং: রিপেট্রিয়েশন অব ভিকটিমস অব ট্র্যাফিকিং' শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন দেশের ৪৯৫ জন নাগরিক বর্তমানে জেলখানায় বন্দি রয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৭ জন কনভেকটেড। তাছাড়া, ৮৬ জন মুক্ত হলেও কোনো দেশ তাদের নিতে রাজি হয়নি। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা জেলখানায় আছেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পৃথিবীজুড়ে যুগ যুগ ধরে জোর করে মানবপাচারের ইতিহাস রয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে এখন জোর করে নয়, প্রলুব্ধ করে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে যারা যাচ্ছেন তারা ভিকটিম হচ্ছেন, অনেকে বিভিন্ন দেশে আটকও রয়েছেন।
ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাইয়ের কারণে মানবপাচার হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মানুষ পাচার করা হয়। তবে এখন প্রলোভিত হওয়া মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। অমরা এখন একটি ভালো জায়গায় আছি। অনেকে এখন বাংলাদেশে আসছে নিজেদের ভাগ্য বদলানোর জন্য। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের সংখ্যাও অনেক কমেছে।
মন্ত্রী জানান, দেশের প্রতিটি জেলায় মানবপাচার রোধে পুলিশের কমিটি রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হয়। এছাড়া, সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃটিশ আমল থেকেই বাংলাদেশে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক এ অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে। তাদের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ- বেঁচে থাকা। তারাই ২০১৫ সালে নৌকা দিয়ে বিদেশে যাওয়ার যারা চেষ্টা করেছিল, যে ঘটনাটি অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তাদের বেশিরভাগই ছিলেন রোহিঙ্গা নাগরিক। এখনো যারা নৌপথে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের ৮০ ভাগই রোহিঙ্গা।
ভারতের আদালত থেকে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বাদল ফরাজি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আনা হলেও তিনি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তার বিষয়টা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এখন একটাই পথ খোলা রয়েছে, রাষ্ট্রপতি যদি তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন তাহলেই তিনি মুক্তি পাবেন। কখনো যদি সে সুযোগ আসে, রাষ্ট্রপতি যদি ক্ষমা করেন, তাহলে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশ প্রধান গিওরগি গিগাউরি, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, অ্যাটসেক ইন্ডিয়ার ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর মানবেন্দ্র নাথ মন্ডল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রমুখ।