শ্রমিক দিবস বলে কিছু নেই নিম্ন আয়ের মানুষের
দুপুর১২টা, সূর্য ঠিক মাথার উপর, প্রচণ্ড রোদ সঙ্গে অসহ্য গরম, এই সময় রাজধানীর কমলাপুরের রাস্তায় রিকশা চালাচ্ছেন ৭০ বয়সী এক বৃদ্ধ। তার চোখমুখ বেয়ে পানির মত ঝরছে ঘাম। তবু রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দু’বেলা পেট ভরে খাওয়ার জন্য। নাম তার বকুল মিয়া, বাড়ি কিশোরগঞ্জের চরশোলাকিয়া গ্রামে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তার। তার ছবি তুলতে গেলে রাজি হননি তিনি। বলেন, ছবিতে পরিচয় জানাজানি হলে ছেলেমেয়ের মান সম্মান যাবে।
ঠিক তার মতই কমলাপুর বিআরটিসি কাউন্টারের সামনের একটি হোটেলে কাজ করছেন আতিক উল্লাহ। তিনি রান্নার কাজ করছেন। রোদের তাপের সঙ্গে আগুনের তাপদাহ তার শরীর পুড়ে যায় যায় অবস্থা।শরীরের সমস্ত জায়গা থেকে ঘাম বেয়ে পড়ছে। তবু সকাল থেকেই রান্নার এই কাজ করছেন বিরতীহীনভাবে।
বকুল মিয়া কিংবা আতিকের মতই বাস ড্রাইভার, হকারসহ নিম্ন মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো পহেলা মে অথ্যাৎ শ্রমিক দিবসেও কাজ করছেন। তারা আজও জানেন না মে দিবস কি, শ্রমিক দিবস কি। তারা উল্টো প্রশ্ন করলেন,দিবস দিয়া কি হবে? আমাদেরকে কি টাকা দেবে, না একবেলায় খাওয়াবে?
বকুল মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার তিন ছেলে এক মেয়ে। সবাইরে বিয়া-শাদী দিয়েছি। এখন আমরা দুজন। ছেলেরা এখন তাদের নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের দেখে না। তাই বুড়া বয়সে রিকশা চালাইতে হয়।
তিনি বলেন, দুজনের সংসারের পাশাপাশি মেয়ের দুটো (নাতনি) সন্তানকে আমারই দেখতে হয়। তাই রিকশা চালাই দু’বেলা একটু খাওয়ার জন্য।
মগবাজার মোড়ে থ্রি স্টার হোটেলের ওয়েটার ইমু বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের কোনো ছুটি নেই। কাজের কোনো সময় নেই। পেটের ধান্ধায় কাজ করি। পরিবারে অবস্থা একটু ভালো হলে এসব জায়গায় কাজ করবেন না বলে বলে জানান তিনি।
এদিকে মতিঝিল, আরামবাগ, কমালপুর, শান্তিনগর মৌচাক-মালিবাগ, মগবাজার এবং হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার দোকান-পাট অফিস, আদালত সব বন্ধ রয়েছে। তবে তীব্র রোধের মধ্যে রাস্তায় রয়েছেন রিকশা, ড্রাইভার, হকারসহ কিছু নিম্ন আয়ের মানুষ।
অথচ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে সারাবিশ্বে এই দিনটি উত্থাপন করা হয় নানা কর্মসূচি মাধ্যমে। অনান্য মানুষের মতই বাংলাদেশেও সরকারিভাবে এই দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। সরকারি ছুটির এই দিনে অফিস আদালত, ব্যাংক, বিমা এবং পুঁজিবাজারসহ দেশের সকল সরকারি ও বেসকরারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে সকাল থেকেই রাস্তা ঘাট ছিল অনেকটাই ফাঁকা।
উল্লেখ্য,১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয় মে দিবস। সেদিন দৈনিক আট ঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলিতে ১২জন শ্রমিক নিহত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরের এই দিনটিকে শ্রমিক দিবস পালন করা হয়।
বাংলাদেশের নিম্নআয়ের মানুষের দাবি, বছরের পর বছর আসে যায়, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। আমরা চাই সরকার পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হউক যাতে শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়।