মেয়র আতিকের সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়া ভুয়া সাংবাদিক গ্রেফতার
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে মাসুদ রানা (২৯) নামের এক ভুয়া সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা পরিচয় প্রদান ও প্রতারণার অভিযোগ (৪৬৮/৪৭১/৪১৯ পেনাল কোড-১৮৬০) এনে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, মাসুদ রানা নিজেকে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে কয়েকদিন আগে মেয়র আতিকুল ইসলামকে ফোন করে সাক্ষাৎকার নিতে চান। তিনি এতে সম্মতি দিলে গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে মাসুদ রানা নগর ভবনে যান। পরবর্তীতে ডিএনসিসির জনসংযোগ বিভাগ থেকে তাকে মেয়রের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তবে সাক্ষাৎকার গ্রহণের এক পর্যায়ে মাসুদ রানা মেয়রকে অপ্রসাঙ্গিক ও অবান্তর প্রশ্ন করতে শুরু করেন।
মাসুদ রানা মেয়রকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি তো আনিসুল হকের উত্তরসূরি, আপনার উত্তরসূরির উদ্দেশে কী বলবেন? ঢাকার বিশাল আকাশ কিন্তু বাতাস নিয়ে আপনি কী বলবেন?’
তার এ ধরনের প্রশ্ন শুনে মেয়রের কক্ষে উপস্থিত ডিএনসিসি কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। এ সময় মেয়র সেল থেকে যায়যায়দিন অফিসে ফোন করে মাসুদ রানা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তবে যায়যায়দিনে এ নামে তাদের কোনো সাংবাদিক নেই বলে তারা ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষকে জানান।
এ সময় তারা কৌশলে রানাকে আটকে রাখেন। পরবর্তীতে যায়যায়দিনের সাংবাদিকরা ডিএনসিসি অফিসে পৌঁছে তাকে ভুয়া বলে শনাক্ত করেন।
এসময় সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, এপিএস সাইফুদ্দিন ইমন, জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুনের উপস্থিতিতে মাসুদ রানার কাছে যায়যায়দিনের পরিচয় দিয়ে মেয়রের সাক্ষাৎকার গ্রহণের উদ্দেশ্য জানতে চান। তবে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদেও কোনো সদুত্তর না দেওয়ায় তাকে পরে গুলশান থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা জানান, সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর ভুয়া সাংবাদিক মাসুদ রানা তার মোবাইল ফোন দিয়ে মেয়রের সঙ্গে বেশ কিছু ছবিও তোলেন। যা পরে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ মুছে দেন।
গুলশান থানা জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া ভুয়া সাংবাদিক মাসুদ রানা যশোরের ঝিকরগাছা থানার মির্জাপুর গ্রামের মো. আবুল খায়েরের ছেলে। তিনি ঢাকার রামপুরা এলাকার উলন এলাকায় থাকেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গুলশান থানার এসআই মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি যায়যায়দিনের নিয়োগকৃত সাংবাদিক না হয়েও পত্রিকাটির পরিচয় দিয়ে মেয়রের সাক্ষৎকার নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তার ভিজিটিং কার্ডে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার লোগো রয়েছে।
মাসুদ রানা পুলিশকে জানান, কামরুল হাসান নাসিম নামের এক ব্যক্তি তাকে এই কাজে নিয়োগ করেছেন। শেকড় নামের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
তবে মাসুদ রানার দেওয়া বেশকিছু তথ্যে গড়মিল রয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সব তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তদন্তে সব কিছু বেরিয়ে আসবে।