‘মানুষের কোনো ক্ষতি হতে দেব না’
চলতে থাকা ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সরকার তৎপর রয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, আমাদের এবারের মডেল অত্যন্ত আপডেটেড। আমরা কোনো জীবনের ক্ষতি হতে দেব না, মানুষের কোনো ক্ষতি হতে দেব না।
শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণীর সবশেষ তথ্য জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী একথা বলেন।
ফণীর সর্বশেষ অবস্থা: ফণীর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ওড়িশা, নিহত ২
ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে দুর্গো এলাকার জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে (বাকিদের কেউ নেয়া হচ্ছে)। এজন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সেনাবাহিনী, কোস্ট গার্ড, রেড ক্রিসেন্টসহ সকল সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করছেন। সন্ধ্যার আগে সমস্ত লোক আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি কাউকে যেন রেখে আসা না হয়। একটি লোকও রেখে আসলে ঘূর্ণিঝড় যে বেগে আসবে তাতে তার মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে।’
গৃহপালিত পশু পাখি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নির্দেশনা দিয়েছি যতটা সম্ভব গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা প্রতিবন্ধীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। এছাড়া গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মাদের জন্য আলাদা কক্ষ রাখা হয়েছে। চালু থাকছে সোলার সিস্টেম।
আরও পড়ুন: ফণীর প্রভাবে মংলায় বৃষ্টিপাত
ত্রাণ সহায়তা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ওইসকল অঞ্চলের প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কাছে ২০০টন জিআর চাল পাঠিয়েছি। এছাড়া ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠিয়েছি। প্রতি প্যাকেট শুকনা খাবার একটা পরিবারের ৭দিন চলে যাবে। তাছাড়া তাৎক্ষনিক ব্যবস্থার জন্য জেলা প্রশাসকদের নিকট ১০ লাখ করে টাকা দেওয়া আছে। সুপেয় পানির জন্য ৩০ ট্রাক মাউন্টেইন স্যালাইন ওয়াটার থাকবে।’
ফণীর প্রভাবে খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলে ১১ হাজার হেক্টর ধানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেও যদি ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার থাকে আর ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয় তাহলে খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর ধানের ক্ষতি ঠেকাতে পারব না।’
আরও পড়ুন: ফণীর প্রভাবে মংলায় বৃষ্টিপাত
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজিল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঘূর্ণিঝড় ফণী সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে 'ঘূর্ণিঝড় ফণী'
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে ( ৩ মে, দুপুর ১২টা) বলা হয়েছে, প্রবল ঘুর্ণিঝড় ফণী উড়িষ্যার উপকূল (পুরীর কাছ দিয়ে) অতিক্রম করছে। মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিলো।
ফণী আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ৩ মে মধ্যরাত নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিমি যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতেও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।