নেই ধনী-গরিবের ভেদাভেদ চট্টগ্রামের ইফতারে
মাসুদুল হক পেশায় রিকশাচালক। আর আবছার উল্লাহ পেশায় চাল ব্যবসায়ী। তাদের পাশে বসেই আছেন নুরুল হক। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন। বুধবার (৮ মে) প্রথম তিনজনই দিনশেষে ইফতারের জন্য পাশাপাশি বসেছিলেন নগরীর জমিয়াতুল ফালা্হ জাতীয় মসজিদের বারান্দায়।
সামনে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, খেজুর, সেমাই, চমুচা, শরবতসহ মোট সাতটি পদ। মাইকে হুজুরের তেলাওয়াত, রোজার ফজিলত শেষে, মাইকে ইফতারের ঘোষণা আসতেই এক পাত থেকে খাওয়া শুরু করেন মাসুদ, আবছার আর নুরুল।
ধনী গরিবের ভেদাভেদ আর বিভাজন ভুলে দেওয়ার এমন চিত্র প্রতিবছরের মতো এবারেও এই মসজিদে দেখা মিলেছে রমজানের প্রথম দিন থেকেই। পুরো রমজান চলবে এভাবেই। কে ধনী, কে গরিব, কে ব্যবসায়ী, কে আইনজীবী, চিকিৎসক, কে নিচু আরি উচুঁ কোনো তুলনা নেই। দিনভর রোজা শেষে বেশি সওয়াব আর ভাতৃত্বের টানে মুসলমানরা জড়ো হন।
ইফতারের এক ফাঁকে কথা হয় মাসুদুল আর আবছারের সঙ্গে। মাসুদ বার্তা২৪.কমকে জানান, নগরীর চট্টশ্বেরী এলাকায় তার বসবাস। পরিবারের সদস্যরা রাজশাহী থাকায় একাই থাকেন চট্টগ্রামে। সারাদিন রিকশা চালিয়ে প্রতিবছর এই মসজিদে ইফতার সারেন। আসর নামাজ শেষে হুজুরের রোজার ফজিলত শোনার সময় ইফতারের কাজে সহায়তা করি। আর্থিক অনটনে ইফতারে আসলেও এখানে যে আতিথেয়তা আর সম্মান পাই তা খুবই সম্মানের। ইনশাআল্লাহ এবারও এখানে ইফতার করতে পারব।
আবছার জানান, সবাই তো চায় পরিবার আর কাছের মানুষের সঙ্গে ইফতার করতে। সারা বছর আমরা না খেয়ে থাকা মানুষগুলোর কষ্ট উপলব্ধি করতে পারি না। রমজান এই সুযোগ করে দেয়। এখানে এক সঙ্গে এতো মানুষকে খেতে দেখার মুহূর্ত আর আনন্দ বলে বুঝানো যাবে না। আজ ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে ইফতার করে যাচ্ছি।
বুধবার (৮মে) বিকেলে দেখা যায়, মসজিদের পাশে শামিয়ানা টেনে ইফতারের সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। এর পাশে মসজিদের নিচ তলায় পাঁচ থেকে সাতজন করে গোল করে বসে আছেন। কেউ ইফতার বণ্টনে সহায়তা করছেন, কেউ শরবত তৈরি, কেউবা রোজাদাদার ব্যক্তিকে আসন দেখিয়ে দিচ্ছেন। আর কেউ ব্যস্ত পানি আনার কাজে। সংখ্যায় সব মিলিয়ে পাঁচশোর অধিক। শেষ মুহূর্তে মুসল্লির জন্যও ইফতার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মসজিদ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠার পরে প্রয়াত হাজী ইয়াকুব আলী নামে এক ঠিকাদার মসজিদে রোজাদার ব্যক্তিদের জন্য ইফতারের উদ্যোগ নেন। তখন ব্যক্তিগতভাবে প্রথম কয়েকবছরে পরিবারের সদস্যরাই ইফতার সামগ্রী তৈরি করতেন। এরপর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। ইয়াকুব আলীর মৃত্যুর পরে তার সন্তানরা ইফতারের কার্যত্রম পরিচালনা করেন।
এর পাশাপাশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাবতীয় বিষয় তদারকি করেন। রোজার পূর্বে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ী, প্রতিষ্ঠানসহ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে ইফতারের সহায়তা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। বর্তমানে আবুল খায়ের, আব্দুল হাকিম গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিরা সহায়তা করে থাকেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক ইকবাল বাহার বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতিবছর মতো এবারও প্রতিদিন এক হাজারের বেশি মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। প্রথমদিক আইটেমের সঙ্গে ফল না থাকলেও কয়েকদিন পরে ফলও অন্তুর্ভুক্ত হবে। গোটা মাসের শেষ দশদিন যারা ইতেকাফে বসবেন তাদের সাহরী, ইফতার থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বহু প্রতিষ্ঠান সওয়াবের আশায় সহায়তা করে আসছেন। প্রতিবারের ন্যায় ধর্মপ্রাণ রোজাদার ব্যক্তি মসজিদে ইফতার করতে পারবেন।