ককটেল বিস্ফোরণ

টার্গেট ছিল পুলিশ, সন্দেহে রাজনৈতিক অপশক্তি

  • শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ককটেল হামলায় আহত নারী পুলিশ সদস্য চিকিৎসা নিচ্ছেন, ছবি: ফাইল ফটো

ককটেল হামলায় আহত নারী পুলিশ সদস্য চিকিৎসা নিচ্ছেন, ছবি: ফাইল ফটো

রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে পুলিশের ভ্যানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় টার্গেট ছিল পুলিশ। তবে বিস্ফোরক হিসেবে যে ককটেলের কথা বলা হচ্ছে। সেটা আসলে ককটেল ছিল না। বিস্ফোরকটি ছিল শক্তিশালী ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। যা দিয়ে ওই ভ্যানের পুলিশ ও পাশের পুলিশ সদস্যদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল। এই বিষয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশীয় একটি রাজনীতি পক্ষ দেশে নৈরাজ্যমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে এমন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

এদিকে জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা র‌্যাব পুলিশের সদস্যরা বলছে, যে  ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ব্যবহার করা হয়েছে তা সাধারণত জঙ্গিরা ব্যবহার করে থাকে। এখানকার মত একই ধরনের আইইডির বিস্ফোরণ ঘটানো ঘটেছিল গুলিস্তানেও। বিস্ফোরকের আলামত ও হামলার ধরন দেখে পুলিশেরেই আবার কেউ কেউ বলছেন জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকলেও থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কনস্টেবল এবং হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির চালক কনস্টেবল মো. শফিক চৌধুরী বাদী হয়ে পল্টন থানায়  একটা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি অথবা ব্যক্তিরা কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে হত্যার উদ্দেশে এবং সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধনে বোমা নিক্ষেপ করে।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, বিস্ফোরিত আইইডির নমুনা দেখে মনে হয়েছে, এটি খুবই শক্তিশালী। ঠিকমত বিস্ফোরিত হলে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারত।

অন্যদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরণস্থলটি পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও সিআইডি কার্যালয়ের পাশে।  তবে  এসবি ও সিআইডি কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরার আওতার বাইরে। পাশের একটি পেট্রোলপাম্পের সিসি ক্যামেরা ঘটনাস্থল কাভার করলেও তিন মাস ধরে ওই সিসি ক্যামেরা অকেজো। পুলিশ বলছে, অনেক সময় নিয়ে পরিকল্পিতভাবেই এই হামলা করা হয়েছে।

তবে হামলার এমন পরিস্থিতিতে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। কিন্তু আইএসের দায় স্বীকারের তথ্য উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। সদর দফতর থেকে বলা হচ্ছে, আইএসের বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে আছে। তবে ঘটনার সঙ্গে আইএসের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, এটি কোন জঙ্গি হামলা না। তবে আমরা এসব বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকি। তার ধারাবাহিকতায় পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুলিশের যে কোনো স্থাপনায় প্রবেশের সময় সব আগন্তুকের বিধি অনুযায়ী সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি, ব্লক রেড, চেক পোস্টে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এমন নির্দেশনা সদর দফতর থেকে দেওয়া হয়েছে।

তাহলে এখন প্রশ্ন কাদের সন্দেহে রেখে এসব হামলার তদন্ত করা হচ্ছে। কে বা কারা এ হামলা করছে? এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হামলায় জঙ্গিরা জড়িত কি-না, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। কারণ জঙ্গিরাই যে দেশের মধ্যে ভীতিকর সৃষ্টি করতে চায়, এমনটা নয়। দেশীয় রাজনীতিতে একটি পক্ষ সবসময়ই চেয়েছে, এ দেশে নৈরাজ্যমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও বোমা সন্ত্রাস চালানো হয়েছিল। দেশের এক শ্রেণির মানুষও বিদেশে থেকে দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় তাদের ইন্ধন আছে কি-না, খতিয়ে দেখতে হবে।